E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

ঘাটাইলে রাজা মিয়ার অত্যাচারে ঘর ছাড়া গৃহবধূ বাছিরন

২০১৭ সেপ্টেম্বর ২৬ ১৪:০৮:৪৫
ঘাটাইলে রাজা মিয়ার অত্যাচারে ঘর ছাড়া গৃহবধূ বাছিরন

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের শালিয়াবহ গ্রামে প্রাক্তন স্বামী রাজা মিয়ার ধারাবাহিক অত্যাচারে ঘর ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি বাড়ি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন গৃহবধূ বাছিরন আক্তার।

জানা গেছে, ঘাটাইল উপজেলার শালিয়াবহ(গাবতলী) গ্রামের আ. বাছেদ মিয়ার মেয়ে বাছিরন আক্তারের সাথে প্রতিবেশি ইসমাইল হোসেনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ইসমাইল হোসেন স্ত্রীর নামে ইসলামী ব্যাংকের মধুপুর শাখায় অ্যাকাউন্ট করে বিদেশে(ইরাক) চলে যান।

বাছিরনের ভাই কবিরও তার নামে জনতা বাংকের ঘাটাইল শাখায় অ্যাকাউন্ট করে বিদেশে(দুবাই) চলে যান। পূর্ব পরিচয়ের জের ধরে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে শালিয়াবহ(নয়াপাড়া) গ্রামের মৃত সোনা মিয়ার ছেলে রাজা মিয়ার বোন জাহানারা ও বোনজামাই নাছিম উদ্দিনের মধ্যস্থতায় বাছিরনের কাছ থেকে রাজা মিয়া ৫০ হাজার টাকা ধার নেয়। ওই লেনদেনের সূত্রে দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে গত বছরের ২০ আগস্ট দু’জনে ঘর-সংসার করতে ১১ লাখ টাকা নিয়ে তারা অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়। পরে তারা ঢাকার শ্যামপুর বাজার এলাকার কাজী অফিসে গিয়ে কাবিনমূলে বিয়ে করে। পরে ভাইদের পরামর্শে মো. রাজা মিয়া তার স্ত্রী বাছিরন আক্তারকে বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়িতে আনার পরই তার উপর অমানুষিক অত্যাচার শুরু করে। এ নিয়ে একাধিকবার ঘরোয়া সালিশও হয়। পরে চলতি বছরের ৭ এপ্রিল উভয়পক্ষের মাতব্বরদের উপস্থিতিতে রাজা মিয়া ও বাছিরনের মধ্যে ডিভোর্স হয়।

স্থানীয়রা জানায়, বাছিরনকে ডিভোর্সের একমাস পর থেকে মো. রাজা মিয়া তাকে কু-প্রস্তাব দিতে থাকে। এতে রাজি না হওয়ায় মো. রাজা মিয়া রাতে তাদের বাড়ির আশপাশে ঘোরাফেরা করে এবং রাতের আঁধারে বাড়ির গোয়ালের গরু ছেড়ে দেয়। বিভিন্ন জাতের গাছের চারা কেটে ফেলে। বাধ্য হয়ে বাছিরনের বাবা তাকে একই এলাকার বোনের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। সেখানেও মো. রাজা মিয়া যাতায়াত শুরু করে এবং বাছিরনের সাথে কথা বলার চেষ্টা চালায়। সেখান থেকে বাছিরনকে গোপণে তার নানার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে সেখানেও হাজির হয় নারীলোভী মো. রাজা মিয়া। সেখানেও দিনে ঘোরাফেরা করে এবং বাছিরনের সাথে কথা বলার চেষ্টা চালায়। এতে বিফল হয়ে মো. রাজা মিয়া রাতে বাছিরনের মামা নজরুল ইসলামের ১২৫টি আকাশমনি গাছের চারা কেটে বিনষ্ট করে এবং খড়ের গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এ নিয়ে গ্রাম্য সালিশের উদ্যোগ নিলে মো. রাজা মিয়া আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

গত ৪ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে মো. রাজা মিয়া কৌশলে ঘরে ঢুকে বাছিরনকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় বাছিরনের চিৎকারে তার মামি মরিয়ম বেগম এগিয়ে এসে রাজা মিয়াকে ঝাপটে ধরে। তাদের ধস্তাধস্তি ও চিৎকার-চেঁচামেচিতে এলাকার লোকজন এগিয়ে এসে মো. রাজা মিয়াকে গণধোলাই দেয়। পরে পুলিশ রাজা মিয়াকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

এ ঘটনায় বাছিরন আক্তার বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ঘাটাইল থানায় মো. রাজা মিয়াকে অভিযুক্ত করে মামলা(নং-৫, তাং-১০/০৯/২০১৭ইং) দায়ের করেন। ওই মামলা থেকে রেহাই পেতে মো. রাজা মিয়ার ছেলে সাদ্দাম হোসেন বাদি হয়ে তার বাবাকে মারধরের অভিযোগে বাছিরন সহ স্থানীয় ছয় ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ঘাটাইল থানায় মামলা দায়ের করেন।

বাছিরন আক্তার জানান, রাজা মিয়ারা এলাকায় খুবই প্রভাবশালী ও অত্যাচারী। ডিভোর্সের একমাস পর থেকে মো. রাজা মিয়া তাকে কু-প্রস্তাব দিতে থাকে। তিনি অত্যাচারি রাজা মিয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

মো. রাজা মিয়া জানান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তার সাবেক স্ত্রী বাছিরনের মামা নজরুল গংরা তাকে মারপিট করেছে। এ বিষয়ে তার ছেলে সাদ্দাম হোসেন থানায় মামলা দায়ের করেছেন। বাছিরনের অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. একাব্বর আলী জানান, ইতোপূর্বে রাজা মিয়ার নারী ঘটিত বিষয় নিয়ে তিনি একাধিক সালিশে উপস্থিত ছিলেন। বাছিরনকে খোলাতালাক দেওয়ার পরও রাজা মিয়া তার ঘরে ঢুকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা সত্য।

রসুলপুর ইউনিয়নের সাবে চেয়ারম্যান মো. শামছুল আলম জানান, রাজা মিয়া ও বাছিরনের ঘটনায় তিনি সভাপতিত্ব করেন। ওই সালিশে উভয়পক্ষের সম্মতিতে খোলা তালাকের সিদ্ধান্ত হয়।

ঘাটাইল থানার অফিসার ইনচার্জ মহিউদ্দিন পিপিএম জানান, এ ঘটনায় উভয়পক্ষই থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার তদন্ত চলছে, তদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।

(আরকেপি/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৫ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test