E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলামের ১৯৭১ এর স্মরণীয় দিনগুলি

২০১৭ ডিসেম্বর ০৮ ১৫:২৮:৩৫
মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলামের ১৯৭১ এর স্মরণীয় দিনগুলি

নিতাই সাহা, দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) : দুর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের ভূলিপাড়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা মৃতঃ ইন্নছ আলীর পুত্র মোঃ নুরুল ইসলাম। ১৯৭১ সালে পাকহানাদার বাহিনী মে মাসের ২য় সপ্তাহ। পাকা হানাদার বাহিনীর সদস্যরা যখন নারী নির্যাতনের জন্য ভূলিগাঁও সহ আশেপাশের গ্রামের হানাদেয় তখন খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম এলাকার লোকজনদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার জন্য সঙ্গীয় আরও দুইজন খুরশেদ আলম ও আবুল কালামকে নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করার সময় চোখে পরে পাক বাহিনীর সদস্য পাশের বাড়ীর মহিলাদেরকে টানাহেছড়া করিতেছিল। 

মহিলাদেরকে রক্ষা করার জন্য নূরল ইসলাম সেখানে ছুটে যান। নূরল ইসলাম এর ছোটাছোটি দেখে খোরশেদ আলম ও আবুল কালামও সেখানে ছুটে যায়। তিনজনই একত্রে পাক হানাদার বাহিনীর একজন সদস্যকে একা পেয়ে পিছন দিক থেকে একসাথে জরিয়ে ধরে।

এক পর্যায়ে সেই হানাদার বাহিনীর সদস্য আমাদেরকে গুলি করার জন্য বহু চেষ্টা করিতেছিল। আবুল কালাম ও খোরশেদ পাকবাহিনীর সদস্যকে গলায় দড়ি দিয়ে বেধে ফেলে এবং মাটিতে ফেলে দেয়। সেই সময় মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম পাক বাহিনীর রাইফেলের বেনেট দিয়ে তাকে আঘাত করে তাকে আহত করে মেরে ফেলার চেষ্টা করছিলেন, সেই সময় দূর থেকে পাক বাহিনীর একজন দালাল দূরে অপেক্ষারত আরও কয়েকজন পাকবাহিনীদের এই খবরটা দেয়।

একদল পাকবাহিনী যখন বন্ধুক নিশানা করে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনের জন্য দৌড়ে আসতেছিল তখন আটককৃত পাকহানাদারের হাতের রাইফেলটা নিয়ে পার্শে¦ জঙ্গলে লুকিয়ে রাখি এবং দৌড়ে ঐস্থান ত্যাগ করি।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভূলিপাড়া গ্রামে পাকহানাদার বাহিনী ও তার দালালরা সকলের বাড়ীঘরে অগ্নিসংযোগ করে এবং অমানবিক নির্যাতন করে । যা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। সে এক বিভীষিকা ময় অবস্থা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই গ্রামের একজন নিরীহ লোক আয়ুব আলীকে গুলি করে হত্যা করে। তিনি আওয়ামীলীগের একজন সাধারণ সদস্য ছিলেন।

এমনিভাবে দালালদের সাহায্যে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ,আওয়ামী পরিবার খোজে খোজে অত্যাচার ,অবিচার চালিয়ে যায়। এদিকে মুক্তিযোদ্ধা ও বিএসএফ ক্যাম্পে যোগাযোগ না করেই রাত্রে এসে লুকিয়ে থাকা রাইফেলটি উদ্ধার করি এবং মুক্তিযোদ্ধা সদস্যগনকে নিয়ে বিএসএফ এর ক্যাপ্টেন মারারীর নিকট অস্ত্র জমা দেই। সেই সময় গণপ্রজতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংসদ সদস্য (এড.) সাদিক উদ্দিন, আঃ মজিদ, আঃ লতিফ সিদ্দিকী, কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম উপস্থিত ছিলেন। পাকবাহিনীর অত্যাচারে এলাকার লোকজন জার্জরিত হয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বাঘমারা স্মরনার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। এরপর আমি নূরুল ইসলাম ও আরও সহযোগী দুইজন ট্রেনিং এর জন্য মুক্তিযোদ্ধে ভর্তি হই। তুরা থেকে ট্রেনিং নিয়ে তিনজন বাঘমারা ফিরে আসেন এবং ১১নং সেক্টরের বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধ করেন।

মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম জানান, ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলে আমরা মিত্রবাহিনী বাংলাদেশে ঢুকে পরি। ৯ ডিসেম্বর নেত্রকোনা মুক্ত হয়। শ্যামগঞ্জ দিয়ে যখন পাকবাহিনী পালিয়ে যাইতেছিন তখন ষ্টেশনের উত্তর পাশেই আমাদের একজন মুক্তিবাহিনী বরুরা পাক বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ মুক্ত হয়।

১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনী আনুষ্টানিকভাবে আত্মসমর্পন করে। আমরা তখর ময়মনসিংহ শহরে অবস্থান করতেছিলাম। ১০ জানুয়ারী ১৯৭২ সনে বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসলে উনার নির্দেশে হাতিয়ার জমা রেখে বাড়ীতে ফিরে আসি।

মোঃ নূরুল ইসলাম, পিতা: মৃত ইন্নছ আলী, সাং ভূলিপাগা, ডাকঘর -রালীখং, দুর্গাপুর, নেত্রকোনা। ভারতীয় নং- ১৫২৪২, মুক্তিবার্তা নং- ০১১৬০৩০০৯৪, গেজেট নং-৮১।

(এনএস/এসপি/ডিসেম্বর ০৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৭ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test