E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

সাবেক তিন মন্ত্রী ও তিন এমপির অবৈধ সম্পদ পেয়েছে দুদক

২০১৪ এপ্রিল ১৪ ১০:০১:৪০
সাবেক তিন মন্ত্রী ও তিন এমপির অবৈধ সম্পদ পেয়েছে দুদক

স্টাফ রিপোর্টার : সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হকসহ সাবেক তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও তিন এমপির অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই মন্ত্রী-এমপিরা যে হলফনামা জমা দিয়েছিলেন, তা যাচাইকালে তাদের সম্পদের অসংগতির তথ্য পাওয়া গেছে।

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক ছাড়া অন্যান্য মন্ত্রী-এমপিরা হলেন- সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান, সাংসদ আবদুর রহমান বদি, এনামুল হক ও আসলামুল হক।

এ বিষয়ে দুদকের চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে ৩ সাবেক মন্ত্রী ও ৩ এমপির নামে সম্পদের রহস্যজনক বৃদ্ধির তথ্য পাওয়া গেছে। সম্পদের হিসাব আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হবে।

এছাড়া দুদকের একাধিক অনুসন্ধান কর্মকর্তা জানান, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা ও আয়কর নথিতে উল্লেখ করা সম্পদের বাইরেও তাদের নামে-বেনামে প্রচুর সম্পদ পাওয়া গেছে। ওই সব সম্পদের বৈধ উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ জানান, শিগগির অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুদক আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্তদের কেউ কেউ হলফনামায় ভুল তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন। তাদের এ বক্তব্য গ্রহণ করা হবে না। এভিডেন্স অ্যাক্ট অনুযায়ী, হলফ করে হলফনামায় যে তথ্য উল্লেখ করা হয়, সেটাই সত্য বলে গণ্য করা হয়ে থাকে। আইন অনুযায়ী এর বাইরে কিছু করার নেই দুদকের।

দুদক সূত্রে আরো জানা যায়, অভিযুক্ত ছয়জনের হলফনামায় সম্পদের রহস্যজনক বৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখতে নিযুক্ত ছয় অনুসন্ধান কর্মকর্তা রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি, সংশ্লিষ্ট জেলা রেজিস্ট্রার অফিস, এনবিআর, বিআরটিএ, রাজউক, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি, রিহ্যাব, ব্যাংক-বীমাসহ অন্যান্য অফিসে অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করে সম্পদের হিসাব নির্ণয় করেছেন। প্রাথমিক পর্যায়ের অনুসন্ধানেই তাদের নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ পাওয়া যায়। কমিশন চাইলে পরে ছয়জনই সম্পদের হিসাব জমা দেন। সেগুলো যাচাই-বাছাইয়ের পরও বহু সম্পদের বৈধ উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সূত্রে জানা যায়, দুদকের অনুসন্ধানে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হকের নামে প্রায় ১৬ কোটি টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে। হলফনামার হিসাব অনুযায়ী গত পাঁচ বছরে রুহুল হক ও তার স্ত্রী ইলা হকের ব্যাংক ব্যালান্স বেড়েছে ১৬৫ গুণ। একই সময়ে অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হকের ব্যাংক ব্যালান্স বেড়েছে ১০ গুণ। পাঁচ বছর আগে নির্বাচনী মাঠে নামার সময় রুহুল হক ও তার স্ত্রীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত টাকার পরিমাণ ছিল ৯২ লাখ ৩৬ হাজার ১০৮ টাকা। এখন তাদের ব্যাংক ব্যালান্সের পরিমাণ ১০ কোটি ১৫ লাখ ৯৪ হাজার ৭৬৩ টাকা।

এনা প্রপার্টিজের কর্ণধার সাংসদ এনামুল হকের নামে দুই হাজার ১২০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। নির্বাচনী হলফনামার সম্পদের তথ্য যাচাই করতে গিয়ে ওই পরিমাণ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা উপপরিচালক যতন কুমার রায়। অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৮-০৯ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরের আয়কর রিটার্নে তিনি সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।

অনুসন্ধানে সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমানের নামে দুদক প্রায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ পেয়েছে। মহাজোট সরকারের আমলে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থেকেও তিনি সম্পদ অর্জন করেছেন। অবৈধভাবে অর্জিত অর্থে জমি কিনেছেন। সদ্য বিদায়ী মহাজোট সরকারের পাঁচ বছরে তার জমির পরিমাণ বেড়েছে ১৪৩ গুণ। একইভাবে ব্যাংকে টাকা বেড়েছে ৫৮৬ গুণ এবং বার্ষিক আয় বেড়েছে ৭৯ গুণ।

দুদকের অনুসন্ধানে সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খানের নামে প্রায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। হলফনামা অনুযায়ী পাঁচ বছর আগেও সর্বসাকল্যে ১০ লাখ ৩৩ হাজার টাকার সম্পত্তি ছিল আবদুল মান্নান খানের নামে।

এ বিষয়ে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক বলেন, তার কোনো অবৈধ সম্পদ নেই। সে হিসাবই দুদকে পেশ করা হয়েছে। তার সম্পদ কোনো দিন লুকানো ছিল না, এখনও নেই।

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তা আইনি প্রক্রিয়ায় মোকাবেলা করা হবে বলেও তিনি জানান।

ট্রমা হাসপাতাল প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ব্যাংক ঋণ নিয়ে এই হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। নির্বাচনী হলফনামায় তার স্ত্রী ইলা হকের নামে ব্যাংকে রাখা টাকার হিসাব ভুল হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুদক অনুসন্ধান করলেই জানতে পারবে ভুল হয়েছে কি-না।

(ওএস/এটি/এপ্রিল ১৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৫ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test