E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

শিরোনাম:

ডাক্তার শুন্য লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল

২০১৯ ফেব্রুয়ারি ০১ ১০:৫৭:১৩
ডাক্তার শুন্য লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল

স্টাফ রিপোর্টার: চিকিৎসক সংকটে ভুগছে লালমনিরহাট জেলার স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসা  সদর হাসপাতাল। ৩৯টি চিকিৎসক পদের ২৩টিই শূন্য রয়েছে। উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে চলছে জেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা।

জানা যায়, জেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রথমে ৫০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করা লালমনিরহাট সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করতে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে ২৫০ শয্যায় যাত্রা শুরু করবে হাসপাতালটি। শয্যার সংখ্যা ও নতুন নতুন অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণ হলেও নেই হাসপাতালের প্রাণ চিকিৎসক। যারা রয়েছেন তারাও হাসপাতালের চেয়ে প্রাইভেট প্রাকটিস ও ক্লিনিকে সেবা দিতে ব্যস্ত থাকেন। নানা অজুহাতে রোগীদের ক্লিনিকে ভিড়াতে চেষ্টা করেন বলেও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

চিকিৎসক সংকটে দীর্ঘ দিন ধরে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে সদর হাসপাতাল। অপারেশন থিয়েটার ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকলেও নানান অজুহাতে করা হয় না অপারেশন।উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা যায়, পাঁচটি উপজেলা ও দু’টি পৌরসভার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সদর হাসপাতালে আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে চিকিৎসক পদ রয়েছে ৩৯টি। যার মধ্যে ২৩টি পদই শূন্য রয়েছে। কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১৬ জন। যার মধ্যে ছুটি ও প্রশিক্ষণ মিলে হাসপাতালের বাইরে রয়েছেন চারজন। ফলে শূন্যতার ভারে রুগ্ন হয়ে পড়েছে এ হাসপাতালটি।

প্যাথলজি বিভাগের যাবতীয় যন্ত্রপাতি থাকলেও নেই প্যাথলজি কনসালটেন্ট। ফলে টেকনোলজিস্ট দিয়ে নিরূপণ করা হচ্ছে রোগীদের রোগ শনাক্তের মতো গুরুত্বপুর্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা। তবে নার্সের ৬৫টি পদের সবাইও কর্মরত রয়েছেন। নেই সিনিয়র কনসালটেন্ট অ্যানেসথেসিয়া পদের চিকিৎসক। ফলে অপারেশন কক্ষটিও বন্ধই থাকছে প্রায় সময়।

আন্তঃবিভাগে ১০০ শয্যা হলেও প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৪০ জনের মতো রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বহির্বিভাগে গড়ে দৈনিক সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী চিকিৎসা ও বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পেতে রোগী ও তাদের স্বজনদের ভিড়। মেডিকেল অফিসারের অভাবে মাত্র তিনজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) জরুরি বিভাগ থেকে বহির্বিভাগ পর্যন্ত সামলে নিচ্ছেন। প্রয়োজনে তারাজুনিয়ার কনসালটেন্টদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিচ্ছেন। তবে সাধারণ রোগীদের কপালে স্যাকমো ছাড়া কিছুই জুটছে না। তবুও চিকিৎসাসেবা নিতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে সেবা নিচ্ছেন জেলাবাসী।

শরীর ব্যাথা ও জ্বর নিয়ে দীর্ঘ দেড়ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা শহরের তেলীপাড়ার বাসিন্দা ফজিলা বেওয়া (৫৫) বাংলানিউজকে বলেন, ‘সকালে হাসপাতালে এসে ৫ টাকায় টিকিট নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। দেড়ঘণ্টা হলেও চিকিৎসকের দরজায় পৌঁছতে পারেননি। এর আগে দুইঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসাপত্র ও ওষুধ নিয়ে কিছুটা সুস্থ্য হয়েছেন। তাই আবারও চিকিৎসকের দেখা পেতে সকাল থেকে লাইনে এক রকম যুদ্ধ করছেন তিনি।’

বড় হাসপাতালে বড় বড় চিকিৎসক থাকে ভেবে আদিতমারী উপজেলার সরলখা থেকে সদর হাসপাতালে এসেছেন বৃদ্ধা মমিনা বেওয়া (৬০)। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে পাতলা পায়খানা ভালো হচ্ছে না। তাই সদর হাসপাতালে এসে একঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বড় চিকিৎসক দেখাতে। কিন্তু বড় চিকিৎসক তো দূরের কথা তার ভাগ্যে রয়েছেন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার।’

ডায়রিয়া আক্রান্ত এক বছরের শিশু তওহিদকে কোলে নিয়ে লাইনে দেড়ঘণ্টা যুদ্ধ করে চিকিৎসকের দেখা পান শিশুটির মা তহমিনা। তওহিদের সুস্থতার জন্য চার পদের ওষুধ লিখে দেন চিকিৎসক। যার মধ্যে একটি ওষুধ হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হলেও বাকি তিন পদের ওষুধ কিনে খেতে হবে বলে তাকে জানিয়েছেন ফার্মাসিস্ট। তহমিনা বাংলানিউজকে বলেন, ‘নামে সরকারি হাসপাতাল। সব ওষুধ কিনে খেতে হয়। রোগীর ভিরে ঠিকমত না দেখেই ডাক্টার ঘস ঘস (দ্রুত) করে লিখে দেয়।’

নানান সংকট ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় রুগ্ন হয়ে পড়েছে লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল। অপারেশন বা জঠিল রোগে আক্রান্ত হয়ে বাধ্য হয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে যতে হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সেখানে রোগীরা সহায় সম্পদ বিক্রি করে মিটাচ্ছেন ক্লিনিকের খরচ। ছিন্নমূল গরিব ও দুস্থরা উন্নত চিকিৎসার অভাবে পারি জমাচ্ছেন পরপারে।

কখন জরুরি বিভাগে কখন আন্তঃবিভাগে ছুটাছুটি করে রোগী সামলে নিচ্ছেন উপ-সহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আবির বিন আখতার। তিনি বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে রোগীদের চাপ সামলানো বেশ কষ্ট হচ্ছে। তবুও যতটুকু সম্ভব চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। বর্তমানে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেশি।’

জনবল সংকট থাকলেও ওষুধের সংকট নেই উল্লেখ করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের নবনিযুক্ত তত্ত্বাবধায়ক গোলাম মোহাম্মদ বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। নতুন চিকিৎসক নিয়োগ সম্পন্ন হলে শূন্যতা পূরণ হবে। যারা কর্মরত রয়েছেন তাদের নিষ্টার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অনিয়মিত থাকায় এরই মধ্যে দু’জনকে অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে।’

এ জেলার মানুষ হিসেবে আদর্শ হাসপাতাল গড়তে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তত্ত্বাবধায়ক গোলাম মোহাম্মদ।

পাঠকের মতামত:

০২ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test