E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

বনানী আগুন: বীর নাঈমের কঠিন জীবন

২০১৯ মার্চ ২৯ ১৯:৫০:২৫
বনানী আগুন: বীর নাঈমের কঠিন জীবন

স্টাফ রিপোর্টার : বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে আগুনকবলিত এফআর টাওয়ার ঘিরে হাজারো মানুষের হাহাকার, আর্তনাদ। কারও সহকর্মী আটকা পড়েছে জ্বলন্ত ভবনে, কারও বা স্বজন-পরিচিত। কারও হয়তো পরিচিত কেউ নেই, তবু তার মধ্যেও হাহাকার। এক অশ্রুসিক্ত আবেগময় পরিবেশ।

অগ্নিকাণ্ডে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের ২১টি ইউনিটের ১৩৩ জন কর্মী। আগুনের ভয়াবহতা যখন প্রতিকূলে তখন সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনী, বিমানবাহিনীর সদস্যরাও যোগ দেন উদ্ধারকাজে। সাহায্যে এগিয়ে আসে স্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা। মানুষকে বিপদের মুখে দেখে নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করছে স্থানীয় অনেকেই।

এগিয়ে এসেছিল ১৪ বছরে এক বালকও। ছোট মনে হয়তো তাড়না বোধ করছিল বিপদে পড়া মানুষের জন্য কিছু করার। কিন্তু কী করবে সে, তাকে তো কেউ কাছাকাছি ঘেঁষতেই দেবে না। তারপর যা করল, তা তাকে বীর বানিয়ে দিয়েছে। এই বালকের নাম নাঈম।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাঈমের একটি ছবি ভাইরাল হলো। ছবিতে দেখা যায় নাঈম এফআর টাওয়ারের আগুন নেভানোরত ফায়ার সার্ভিসের পানির পাইপের ফাটা অংশের ওপর পলিথিন পেঁচিয়ে তার ওপর সর্বশক্তি দিয়ে আটকে রেখেছে, যাতে ঠিকমতো পানি সরবরাহ হয় অগ্নিনির্বাপন মেশিনে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটি আসার পর কিছু সময়ের মধ্যেই তা ছড়িয়ে পড়ে। মাত্র ১৪ বছর বয়সের বালকের এই প্রাণপ্রাণ চেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছে সব পর্যায়ের মানুষ। কেউ কেউ তাকে দিয়েছেন বীরের খেতাব।

ফাটা পাইপ দিয়ে পানি বেরিয়ে যাওয়ার কারণে দমকল কর্মীরা ঠিকমতো পানি পাচ্ছেন না এটাই মাথায় এসেছিল নাঈমের। আর কোনো কোনো কিছু ভাবেনি সে। নাঈম জানায়, যখন ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য সংস্থা ও সাধারণ মানুষ আগুন নেভাতে কাজ করছিল, তখন বারবার পানি শেষ হয়ে যাচ্ছিল। ফায়ার সার্ভিসের পানির পাইপ এক জায়গায় ফাটা ছিল। ফাটা অংশ দিয়ে অনেক পানি নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। তখন পাশ থেকে একটি পলিথিন নিয়ে পাইপের ফাটা অংশটি চেপে ধরে সে।

নাঈম বলে, ‘আমি আর কোনো কিছু না ভেবেই এটা করেছি। আমি দেখতে ছিলাম পানি বের হচ্ছিল। আমি পাইপটারে পলিথিন দিয়ে চেপে ধরেছি, যাতে পানি বাইরে নষ্ট না হয়।’

মা আর এক বোনোর সঙ্গে ঢাকার কড়াইল বস্তিতে থাকে নাঈম। বাবা থাকলেও তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই বলে জানান নাঈমের মা।

নাঈমের মা নাজমা বেগম জানান, গত ৫-৬ বছর ধরে নাঈমের বাবার সঙ্গে তাদের কোনো যোগযোগ নেই। নিজে অন্যের বাসায় কাজ করে অতি কষ্টে পরিবারের খাওয়া-থাকার খরচ ব্যবস্থা করেন।

নাজমা বেগম বলেন, ‘ওর বাবার লগে আমগো যোগাযোগ নাই অনেক বছর। ৫-৬ বছর হইছে। নিজে বাসা-বাড়িতে কাম কইরা চলি।‘

দারিদ্র্য যেখানে পিছু ছাড়ছে না, যেখানে সন্তানদের ভালো জায়গায় পড়াশোনা করানো স্বপ্ন বলে জানান নাঈমের মা। বলেন, ‘যে টাকার কাম করি তা দিয়ে চলাও কষ্ট। পোলাপানগুলারে ভালো জাগায় পড়ামু ক্যামনে?’

নাঈম কড়াইল বস্তির বড় নৌকাঘাট আরবার স্লাম আনন্দ স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। একই স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ছে নাইমের ছোট বোন। নাঈমের মা নাজমা বেগম স্বপ্ন দেখেন তার ছেলেমেয়েরা তার মতো কষ্টের জীবন কাটাবে না। সমাজের আর সব সাধারণ মানুষের মতো ভালো স্কুলে-কলেজে পড়াশোনা করে সম্মানের জীবন কাটাবে। স্বপ্ন থাকলেও দারিদ্র্যের কষাঘাত বাধা হয়ে দাঁড়ায় স্বপ্নগুলোর মাঝে।

(ওএস/অ/মার্চ ২৯, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

০১ নভেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test