E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

শিরোনাম:

সাতক্ষীরার উন্নয়নে নাগরিক কমিটির ২১ দফা দাবি 

২০১৯ এপ্রিল ২৭ ১৬:১১:২৬
সাতক্ষীরার উন্নয়নে নাগরিক কমিটির ২১ দফা দাবি 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : আগামী জাতীয় বাজেটে সাতক্ষীরা জেলার উন্নয়নে ২১ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে জেলা নাগরিক কমিটি এই সংবাদ সম্মেলন করে। এতে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নের রোলমডেলে পরিণত হয়েছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর এপারের জেলাগুলোতেও উন্নয়নের জোয়ার বইতে শুরু করেছে। এই উন্নয়নের ছোয়া খুলনা-বাগেরহাট পর্যন্ত পৌঁছালেও সাতক্ষীরা জেলা বঞ্চিত হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বিশ লাখ মানুষের আবাসস্থল ছোট-বড় নদ-নদী দ্বারা বিধৌত অপার সম্ভাবনাময় সাতক্ষীরা জনশক্তি, আম, বনজসম্পদ, মাছ, মাটির তৈরী টালি ইত্যাদি থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও ভোমরা বন্দর থেকে জাতীয় রাজস্ব প্রদানে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। তারপরও এখানকার কাক্সিক্ষত উন্নয়ন ঘটেনি। সংবাদ সম্মেলনে সাতক্ষীরার সার্বিক উন্নয়নে জেলা নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দ ২১ দফা দাবি তুলে ধরেন।

২১ দফায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত মুন্সীগঞ্জ থেকে নাভারণ পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ, একই সাথে মংলা-খুলনা-সাতক্ষীরা পৃথক রেললাইন নির্মাণ, সাতক্ষীরায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, জেলার পর্যটন শিল্প বিকাশে পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রদান, সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের নিকটবর্তী এলাকাকে পর্যটন এলাকা ঘোষণা, সুন্দরবনের সম্পদভিত্তিক শিল্প গড়ে তুলে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা, ভোমরা স্থলবন্দর পূর্ণাঙ্গরূপে চালুকরণ, অবিলম্বে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজকে পূর্ণাঙ্গভাবে চালুকরণ, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, সাতক্ষীরায় বেকার সমস্যা সমাধানে শ্রমঘন বিশেষ অর্থনৈতিক জোন ও শিল্প কলকারখানা গড়ে তোলা, সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলসকে আধুনিকায়ন করে চালু করা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদী ভাঙন ও জলাবদ্ধতা কবলিত এই এলাকাকে ‘দুর্যোগ প্রবণ এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করা, দুর্যোগের কারণে এই এলাকা থেকে ব্যাপকহারে অভিবাসন বন্ধ করতে বিশেষ বরাদ্দ ও অর্থনৈতিক প্রকল্প গ্রহণ, জলাবদ্ধ ও ভাঙন কবলিত এলাকার দরিদ্র মানুষের জন্য স্থায়ী রেশনের ব্যবস্থা করা, জেলার সকল নদী-খালের জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিক প্রবাহ পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সকল বাধা অপসারণ, ডিএস ম্যাপ অনুযায়ী নদী-খালের সীমানা নির্ধারণ করে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদকরণ, উদ্ধারকৃত জমি ইজারা না দেওয়া, নতুন করে আর কোন অপ্রয়োজনীয় স্লুইস গেট ও ক্লোজার নির্মাণ না করা, ইছামতি নদীর সাথে মরিচ্চাপ-খোলপেটুয়া নদীর সংযোগস্থাপনকারী কুলিয়ার লাবন্যবতি ও পারুলিয়ার সাপমারা খাল সংস্কার ও খনন করা এবং দু’পাশের স্লুইস গেট অপসারণ করে জোয়ার-ভাটা চালুকরণ, ইছামতি থেকে মাদার নদীর (আদি যমুনা) প্রবাহ স্বাভাবিক করতে প্রায়াজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, নিচু বিলগুলো উচু করতে টিআরএম প্রকল্প গ্রহণ, সাতক্ষীরা শহরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত প্রাণ সায়র খালের স্বাভাবিক প্রবাহ চালু করে বেতনা ও মরিচ্চাপের সাথে সংযুক্তকরণ, সরকারি রাস্তা ও নদীর বেড়িবাঁধকে ঘেরের বাধ হিসেবে ব্যবহার বেআইনী ঘোষণা, নদী খালের নেট-পাটা অপসারণ, সাতক্ষীরা পৌরসভার মাস্টার প্লান তৈরি, নতুন ভবন নির্মাণের সময় চলাচলের পর্যাপ্ত রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা রাখা, শহরের সকল রাস্তা প্রসস্তকরণ, ফুটপাথ রাখা, গুরুত্বপূর্ণস্থানে ওভারপাস নির্মাণ, প্রধান সড়কগুলো ডিভাইডার দিয়ে দুই লেনকরণ, ইটাগাছা হাট, পুরাতন সাতক্ষীরা হাট, কদমতলা হাট ও সাতক্ষীরা বড়বাজার প্রসস্ত ও নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ করে আধুনিক হাট-বাজারে রূপান্তরিতকরণ, শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক দখলমুক্ত ও মানুষের ব্যবহারের উপযোগীকরণ, জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য সাতক্ষীরা পৌর অডিটোরিয়ামের ব্যবস্থাকরণ, প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ ও খেলার মাঠ স্থাপন, শহরে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন ও শৌচাগার নির্মাণ, শহরে একাধিক হকার্স মার্কেট গড়ে তোলা, সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কের মেডিকেল কলেজের অংশটি লিংক রোড় হিসেবে চালু করে মূল বাইপাস সড়কটি আলিপুর চেকপোস্টে সংযুক্তকরণ, জেলার চলাচলে অযোগ্য রাস্তাঘাট সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এবং আশাশুনির সাথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাতক্ষীরা শহরের পূর্বাংশেও আরও একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণ, ঢাকার সাথে সাতক্ষীরার দূরত্ব কমিয়ে আনতে মাওয়া-ভাঙ্গা-নড়াইল-নওয়াপাড়া-চুকনগর-সাতক্ষীরা সড়ক নির্মাণ, চিংড়ি চাষের কারণে প্রান্তিক কৃষকের জমি হারানো রোধ, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদান, আম-কুলসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফলের ক্রয় বিক্রয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট কৃষি বাজার নির্মাণ, বিভিন্ন ফল, শাক-সবজি ও দুধ সংরক্ষণের জন্য চাহিদা অনুযায়ী উপজেলায় আধুনিক হিমাগার ও সংরক্ষণাগার নির্মাণ ও কৃষিভিত্তিক ইকোভিলেজ মার্কেট স্থাপন, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা চালু, মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে জেলার বিভিন্ন ফিড়ার রোডে চলাচলরত হাজার হাজার ব্যাটারিচালিত ভ্যান ও ইঞ্জিন ভ্যানের আধুনিকায়নকরণ, স্থানীয়ভাবে এগুলো চলাচলের লাইসেন্স প্রদান, জেলার সাথে সকল উপজেলার সরাসরি যাতায়াতের জন্য আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, লবণাক্ত, আর্সেনিক ও আয়রনমুক্ত নিরাপদ সুপেয় পানির ব্যবস্থাকরণ, শহরে বাস ও ট্রাক টার্মিনাল স্থাপনসহ সিটি সার্ভিস চালুকরণ, সাতক্ষীরায় বিমানের অফিসসহ যশোর বিমান বন্দরে যাতায়াতের জন্য বিমানের নিজস্ব পরিবহনের ব্যবস্থা চালুকরণ, শিশুর বিকাশের জন্য জেলা সদর ও প্রত্যেক উপজেলা সদরে শিশুপার্ক নির্মাণ, সামগ্রিক উন্নয়ন অংশীদার জেলা হিসেবে সুনির্দিষ্ট এসডিজি অর্জনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গৃহীত ডেল্টা ও ব্লু প্লানের আওতায় উপকূলীয় জেলা হিসেবে সাতক্ষীরা জেলাকে বিশেষ জেলা হিসেবে ঘোষণা এবং সাতক্ষীরা’র সকল পূরাকীর্তি সংরক্ষণসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল স্মৃতিবিজড়িত স্থান সংরক্ষণে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক মো. আনিসুর রহিম।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, নিত্যনন্দ সরকার, আজাদ হোসেন বেলাল, আনোয়ার জাহিদ তপন, মাধব চন্দ্র দত্ত, আলী নুর খান বাবুল প্রমুখ।

(আরকে/এসপি/এপ্রিল ২৭, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

০২ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test