E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

শিরোনাম:

তদন্তে সত্যতা মেলেনি

গণধর্ষণ মামলা প্রত্যাহারে প্রধান আসামির মেয়েকে দিয়ে ধর্ষিতার ভাইয়ের নামে ধর্ষণর মামলা

২০১৯ জুলাই ২৯ ১৫:১১:১২
গণধর্ষণ মামলা প্রত্যাহারে প্রধান আসামির মেয়েকে দিয়ে ধর্ষিতার ভাইয়ের নামে ধর্ষণর মামলা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার শ্যামনগরে এক নারীকে গণধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারে প্রধান আসামীর মেয়েকে দিয়ে ধর্ষিতার ভাইয়ের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ধর্ষণের মামলার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে মুখ্য বিচারিক হাকিম মোস্তফা পারভেজ রায়হান তার প্রতিদেনে উল্লেখ করেছেন।

শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক শঙ্কর কুমার ঘোষ ধর্ষিতার ভাই এর বিরুদ্ধে অভিযোগ না পেয়ে অপর আসামী মিলনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়ায় বাদির আদালতে না রাজির প্রেক্ষিতে গত ২২ এপ্রিল সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক হোসনে আরা আকতার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, মামলার(নারী ও শিশু-৪৯/২০১৮) বিবরণে জানা যায়, ২০১৭ সালের ৩ ফেব্র“য়ারি শ্যামনগর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের সুকুমার মণ্ডল ও দেবীপুর গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক গোলাম রসুল একই এলাকার এক নারীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে উত্তর ফুলবাড়ি গ্রামের আব্দুল মোমিনের ছেলে আবু বক্কর ছিদ্দিকের ঘেরের বাসায় নিয়ে যায়। ওই দিন বহু প্রতিশ্রুতি দিয়ে হুজুর ডেকে ছিদ্দিকের সঙ্গে ওই নারীর কাল্পনিক বিয়ে পড়ানো হয়।

স্বামী স্ত্রী হিসেবে সময় পার করার একপর্যায়ে ওই নারী দু’মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়লে ওই বছরের ১১ জুন সকালে তাকে বাড়ি থেকে নিয়ে খুলনার গল্লামারি এলাকার একটি বাড়িতে(ভুতের বাড়ি) আটক রাখা হয়। সেখানে পাঁচদিন যাবৎ ছিদ্দিক, সুকুমার ও গোলাম রসুল পালাক্রমে ধর্ষণ করে ওই নারীকে। ১৬ জুন রাইসা ক্লিনিকে ওই নারীর গর্ভপাত ঘটানো হয়। পরে তাকে বিভিন্ন স্থানে রেখে ২৫ জুন ছিদ্দিকের বোন রোজিনার মাধ্যমে বাড়ির পাশে নিয়ে ফেলে রেখে যাওয়া হয়।

থানা মামলা না নেওয়ায় গত বছরের ২৬ জুলাই ওই নারী বাদি হয়ে সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ওই তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে থানা মামলা নিলেও আসামীদের দারা প্রভাবিত হয়ে তদন্তকারি কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক লিটন মিঞা ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর আদালতে সকল আসামীদের বিরুদ্ধে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

মামলা তুলে নিতে রাজী না হওয়ায় ওই নারীর ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে পৃথক মানব পাচার ও অপহরণ মামলায় আসামী করা হয়।

মামলার বিবরণে আরো জানা যায়, পুলিশের চুড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ওই নারী সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে না- রাজির আবেদন করেন। এ আবেদন জমা দিতে গেলে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ পিপি অ্যাড. জহুরুল হায়দার বাবু তাতে সাক্ষর করেননি। পরবর্তীতে শুনানী শেষে বিচারক তিন আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে ওই মামলা সাক্ষী ও যুক্তিতর্ক শেষে চারটি রায় এর দিন পরিবর্তিত হয়ে গত ২৮ জুলাই মামলার (নারী ও শিশু-৪৯/১৮) রায় ঘোষণার জন্য ধার্য থাকলেও বিচারক হজ্বে যাওয়ায় রায় এর দিন পরিবর্তিত হয়।

এদিকে ওই মামলার প্রদান আসামী আবু বক্কর ছিদ্দিকের অষ্টম শ্রেণীতে পড়–য়া মেয়ে বাড়ির পিছনের ভ্যানচালক আব্দুস সাত্তারের মাদ্রাসা পড়–য়া ছেলে মিলন গাজীর সঙ্গে প্রেমের টানে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। রাত ১১টার দিকে পার্শ্ববর্তী মোস্তফার ইটভাটার নির্জন স্থানে তাদেরকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে স্থানীয় জনগন আটক করে ইউপি চেয়ারম্যান ও নারী শিশু কোর্টের বিশেষ পিপি এসএম জহুরুল হায়দার বাবুর কাছে সোপর্দ করে। মওকা বুঝে মেয়েটির বাবা আবু বক্কর ছিদ্দিক কৌশলে মিলনকে সরিয়ে দিয়ে তাকে অপহরণকারি বানিয়ে গণধর্ষিতার ছোট ভাইকে ধর্ষণকারি বানিয়ে স্ত্রীকে দিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর থানায় মামলা করান।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক শঙ্কর কুমার ঘোষ ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ সুপারের সঙ্গে পরামর্শ করে শুধুমাত্র মিলন গাজীর নামে গত ৯ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে মামলার বাদি নারাজীর আবেদন করেন। বিচারক হোসনে আরা আক্তার গত ২২ এপ্রিল নারাজী আবেদন শুনানী শেষে সাতক্ষীরার শুখ্য বিচারিক হাকিমকে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়ে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।(নাঃ শিশু ৬৬/২০১৯)।

১৯ জুন মামলার বাদিপক্ষের ছয়জন সাক্ষী, মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক শঙ্কর ঘোষসহ কয়েকজনের সাক্ষী গ্রহণ, সাক্ষীদের জবানবন্দি ও ডাক্তারি সনদ পর্যালোচনা শেষে গত ১৪ জুলাই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন মুখ্য বিচারিক হাকিম মোস্তফা পাভেল রায়হান। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন যে, মামলায় বাদি তাকে আসামীরা তিনটি ট্যাবলেট খাওয়ানোর পর অচেতন হয়ে গেলে মেয়েকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যেয়ে ভ্যানে করে মিলন গাজী তাকে অপহরণ ও গণ ধর্ষিতার ভাই তাকে ধর্ষণ করে বলে মামলায় উল্লেখ করেন। যদিও সাক্ষ্যপ্রদানকালে ভিকটিম তার মাকে একটি ট্যাবলেট খাওয়ায় বলে দাবি করেন। এ ছাড়াও বাদির মানিত সাক্ষীদের বক্তব্য পরষ্পর বিরোধী ও আসামীদ্বয় কর্তৃক ধর্ষণ সম্পর্কিত কোন ডাক্তারি সনদ বাদি দেখাতে পারেনি। ভিকটিম ঘটনার তাািরখ ও সময় বলতে পারেনি। একারণে ভিকটিম আসামীদ্বয় কর্তৃক ধর্ষিত হয়েছেন এটা নিশ্চিতভাবে বলা সমীচিন নয়। যার ফলে মামলাটি বিশ্বাসযোগ্য হয়নি।

সার্বিক বিবেচনায় অনুসন্ধানকালে অভিযোগকারি কর্তৃক আনীত ধর্ষণ করার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা নেই বলে প্রতীয়মান হয়।

গণধর্ষিতার পক্ষে আইনজীবী অ্যাড. সেলিনা আক্তার শেলী অভিযোগ করে বলেন, গণধর্ষিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের আসামীরা হুমকি ধামকির মুখে মামলা তুলে নিতে না পেরে মামলার প্রধান আসামীর মেয়েকে দিয়ে গণধর্ষিতার ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ধর্ষণ মামলা করা হয়। নারী ও শিশু ৬৬/১৯ মামলার ঘটনা যে সত্য নয় তা বিচার বিভাগীয় তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

(আরকে/এসপি/জুলাই ২৯, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

০২ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test