E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

শিরোনাম:

সলঙ্গায় গণহত্যার স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের দাবি এলাকাবাসীর

২০২২ ফেব্রুয়ারি ১৪ ১৫:৩৩:৪১
সলঙ্গায় গণহত্যার স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের দাবি এলাকাবাসীর

দেবেশ চন্দ্র সান্যাল, উল্লাপাড়া : ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল রবিবার উল্লাপাড়া  উপজেলার (বর্তমানে  সলঙ্গা থানার )চড়িয়া মধ্যপাড়া গ্রামে এদেশীয় স্বাধীনতা বিরোধীদের পথ নির্দেশে ও সহযোগিতায় এই গণহত্যা হয়। এই গণহত্যার নির্মমতার ঘটনাটি আজ ও সকলে মুখে মুখে আলোচিত হলেও এখনও এখানে নির্মিত হয়নি কোনও স্মৃতিস্মম্ভ, সংরক্ষিত নয় গণকবরগুলো।   

সে সময়ের প্রত্যক্ষদর্শী ও মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ণনায় লিপিবদ্ধ ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১৯ এপ্রিল পাবনা জেলার কাশিনাথপুর ডাব বাগান (বর্তমান শহীদ নগর) নামক স্থানে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও প্রতিরোধকারী বাঙালি সৈনিক, ই.পি.আর.পুলিশ, আনসার ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধে অর্ধশতাধিক হানাদার নিহত হয়। শহীদ নগর প্রতিরোধ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন ক্যা: আলি আকবর।এই যুুদ্ধে বেশ কয়েক জন বাঙালি ই.পি.আর ও অন্যান্য বাঙালি শহীদ হন।পাকিহায়েনাদের সহযোগিতা করার জন্য হানাদার বাহিনী ২৫ এপ্রিল সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে কাশিনাথপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। পথে বগুড়া-নগরবাড়ী সড়কের উল্লাপাড়া উপজেলার চড়িয়া শিকার নামক এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যারিকেডের মুখে তারা যাত্রা বিরতি করে।

হানাদারদের এদেশীয় দোসর স্বাধীনতা বিরোধীদের সহযোগিতায় তারা চড়িয়া মধ্যপাড়ায় ঢুকে মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ঘাঁটি খোঁজার নামে গুলি চালাতে থাকে। তখন ফজরের ওয়াক্ত। ভোর হয়নি। গ্রামের নিরীহ মানুষ ঘুমিয়ে ছিলেন। পাকহায়েনারা সূর্যোদয়ের আগে সেসময় থেকে গ্রামটিতে গুলি চালাতে শুরু করে এবং সকাল ৯টা পর্যন্ত গ্রামটিতে ঢুকে গুলি চালায়। স্বাধীনতা বিরোধীরা গ্রামের সব ঘর-বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর তারা আশেপাশের গ্রামগুলোতেও একইরকম হামলা ও নির্যাতন চালায়। ওইদিন বিকেলে তারা চড়িয়া শিকারসহ আশেপাশের ৫/৭টি গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক মুক্তিকামী মানুষকে আটক করে দুই লাইনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে।

এ গণহত্যার শিকার হওয়াদের মধ্যে পাটধারী গ্রামের ২৯ জন, কালীবাড়ী গ্রামের ১৩ জন, শিকার মগপাড়া গ্রামের ৮ জন, চড়িয়া শিকার দক্ষিণ পাড়া গ্রামের ১০ জন, গোলকপুর গ্রামের ৫ জন, কাচিয়ার গ্রামের ১ জনের নাম পরিচয় পাওয়া যায়। মোট ১২৯ জনের তথ্য পাওয়া গিয়াছে বাকিদের পরিচয় এখন পর্যন্তও জানা যায়নি।

পাকিস্তানি হায়েনাদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া চড়িয়া মধ্যগ্রামের আবুল কালাম (কাঙ্গাল মণ্ডল) জানান, ওই দিন সকালে পাকিস্তানি হায়েনা বাহিনী আব্দুল মজিদের পুকুরের পাশে, ইয়ার আলীর পুকুরের পাশে সারিবদ্ধ দাঁড় করিয়ে নির্মমভাবে গুলি চালান। ঘটনাস্থলে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়। ভাগ্যের জোরে তিনি ৩টি গুলি খেয়েও বেঁচে যান। একই ঘটনায় বেঁচে আছেন আমান আলী ও আরও অনেকে।

চড়িয়া জনকল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুল হাই খাঁন বলেন, প্রতি বছর দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নিলেও এবছর করোনা মহামারির কারণে আমরা সীমিত পরিসরে দিবসটি পালন করেছি । কোরআন খতম, শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়েছে।

যে মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে আছেন সেই দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে তারা সরকারের উদ্দেশে বলছেন, এখানে একটি সত্যিকারের স্মৃতিস্তম্ভ করুন। এই স্বাধীনতার পতাকা আনতে আমাদের যে স্বজন ও পড়শিরা গণহারে প্রাণ দিলেন তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে অন্তত একবার শ্রদ্ধা নিবেদন করে যাই।

মওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগিশ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ছোহরাব আলী খান বলেন, ২৫ এপ্রিল গণহত্যায় পাটধারীর ২৯ জন নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে পাক বাহিনী। এসব শহীদের পাটধারী অন্ধপুকুর পাড়ে গণকবর দেওয়া হয়। শহীদদের স্মৃতি আগামী প্রজন্মকে জানাতে এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ খুবই জরুরি।

সলঙ্গা থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা তোজাম্মেল হক মাস্টার পাটধারী গণকবরটি সংরক্ষণ করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানান। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে স্থানীয় চরিয়া সমাজকল্যাণ সমিতি নিজ অর্থায়নে খুবই ছোট পরিসরে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে যে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়েছে সেটি দূরে। সরকারিভাবে সেটি বানানোও হয়নি। কিন্তু, আমরা চাই গণকবরের পাশে একটি স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ সরকারিভাবে নির্মাণ করা হোক| যাতে এই শহীদদের স্মৃতি অনন্তকাল বেঁচে থাকে এবং বাঙালি জাতি সন্মান জানাতে পারে।

(ডিএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

০২ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test