E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

শৈলকুপায় পার্কের নামে অসামাজিক কার্যকলাপ

শিশু পার্কে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী, গ্রেপ্তার ২

২০২২ মে ০৬ ১৬:৫৪:৫৯
শিশু পার্কে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী, গ্রেপ্তার ২

শেখ ইমন, শৈলকুপা : ঝিনাইদহের শৈলকুপায় একটি পার্ক অসামাজিক কার্যকলাপের আস্তানা হিসাবে গড়ে উঠেছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করছে। উপজেলার ছোট ধলহরা গ্রামের ব্লু-ম্যান গ্রামীণ শিশু পার্ক নামের এই জায়গা বেড়াতে গিয়ে ৭ম শ্রেনীর এক ছাত্রী দফায় দফায় ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ অরিফুল ইসলাম খাঁ  ও রতন মন্ডল নামের দুজন ধর্ষককে গ্রেপ্তার করেছে। রতন মন্ডল এই পার্কটির ম্যানেজার হিসাবে দায়িত্বে রয়েছে।

পুলিশ ও ভিকটিমের স্বজনরা জানায়, শৈলকুপার ধাওড়া হাইস্কুলের ৭ম শ্রেনীর এক ছাত্রীকে কাশিনাথপুর গ্রামের ইসলাম খাঁনের পুত্র আরিফুল ইসলাম ও ছোট ধলহরাচন্দ্র গ্রামের সিরাজের ছেলে রিয়াজ নামে দু যুবক স্কুলে যাওয়া আসার পথে উত্যক্ত করতো। ছাত্রীর বাবা প্রতিবাদ করায় তাকে হুমকি দিত। গত ৪ এপ্রিল ওই ছাত্রী গ্রামের পার্কে গেলে তাকে একটি কুঠিরে নিয়ে ধর্ষন করে আরিফুল। ধর্ষনের দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করে রাখে। ভিডিও ভাইরালের ভয় দেখিয়ে ব্লাক মেইল করতে থাকে। ঈদের দিন পার্কে বেড়াতে গেলে আরিফুল ও রিয়াজ ওই ছাত্রীকে ভয় দেখিয়ে পার্কের ভিতরে একটি কুঠিরে নিয়ে আবারও ধর্ষন করে ।

এতে ছাত্রীটি গু–রুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। ধর্ষনের ঘটনায় পার্কের কর্মচারি ছোট ধলহরা গ্রামের ইন্জাল মন্ডলের ছেলে রতন মন্ডল সহায়তা করে। মেয়েটির বাবা বৃহষ্পতিবার রাতে শৈলকুপা থানায় তিন জনকে আসামী করে মামলা করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে রাতেই আরিফুল ও রতন মন্ডলকে গ্রেপ্তার করে। রিয়াজ পালিয়ে যায়। গ্রেফতারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।

ধর্ষিতা কিশোরীর বাবা জানিয়েছেন, ইদের দিন পার্কে গিয়ে তার কিশোরী কন্যা ধর্ষণের শিকার হয়, এসবের ভিডিও করে পরিবার কে ব্লাকমেইলিং করে আসছিল ধর্ষকরা। তিনি দ্রুত পার্কের নামে অসামাজিক কার্যক্রমের আস্তানা বন্ধের দাবি সহ ন্যায় বিচার চেয়েছেন।

শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানিয়েছে কিশোরী মেয়েটিকে নানা প্রলোভনে দফায় দফায় ধর্ষণ করা হয়েছে এবং ভিডিও ধারণ করে ব্লাকমেইলিং করে আসছিল ।

প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছর আগে শৈলকুপা উপজেলার ৮নং ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের ছোট ধলহরা গ্রামে ব্লু-ম্যান গ্রামীণ শিশু পার্ক ও আবাসন প্রকল্প নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। তবে পার্ক টি চালু হবার পরপরই নানা বিতর্ক ওঠে এখানকার কার্যক্রম নিয়ে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পার্কে বেড়াতে এসে এক শ্রেণীর মানুষ ব্লাকমেইলিং করতে থাকে দর্শনার্থীদের । আস্তে আস্তে পার্কের নামে এখানে অসামাজিক কার্যক্রম শুরু হয় । নেশাক্তদের আড্ডার পাশাপাশি ভ্রাম্যমান পতিতাদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। পার্কটিতে বেশ কিছু ছোট খুপড়ি গোপন ঘর দেখা গেছে। এসব ঘরে উঠতি বয়সী তরুন-তরুনীরা টাকার বিনিময়ে ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ ও কখনো কখনো ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনা ঘটতে থাকে। এতে এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় । তারা এসব কাজে বাধা দিতে থাকে । তবে পার্কটির দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার( গ্রেফতারকৃত) রতন মন্ডল প্রভাব খাঁটিয়ে এসব অসামাজিক কাজ চালিয়ে আসছিল বলে স্থানীয়দের অভিযোগ ।

স্থানীয় বাসিন্দা মহিউদ্দিন জোয়ার্দ্দার জানান, পার্কে নামে এখানে অসামাজিক কার্যক্রম চলছে, এতে উঠতি বয়সীদের মাঝে সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আশরাফুল ইসলাম জানান, এটি মিনি পতিতালয় হিসাবে পরিণত হয়েছে, এটি বন্ধের জন্য অবিলম্বে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরী হয়ে পড়েছে।

ব্লু-ম্যান গ্রামীণ পার্কটির পরিচালক হিসাবে নাম রয়েছে মোস্তফা আজমল মুকুলের আর মালিক হিসাবে সৈয়দ লাবু নামের আমেরিকা প্রবাসী এক ব্যাক্তি বলে জানা গেছে। তবে বর্তমানে পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃত পার্কটির ম্যানেজার রতন মন্ডলই সবকিছুর দায়িত্বে ছিলেন। এসব ঘটনায় পার্কের মালিক সৈয়দ লাবুর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

(এসআই/এসপি/মে ০৬, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

০১ নভেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test