E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

মহিলা এমপির ভাইয়ের গালে এমপির চড়

২০১৪ অক্টোবর ২৩ ১০:০৭:১৭
মহিলা এমপির ভাইয়ের গালে এমপির চড়

রাজবাড়ি প্রতিনিধি :ভিত্তিপ্রস্তরে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি কামরুন্নাহার চৌধুরী লাভলীর নাম না থাকার প্রতিবাদ করায় তাঁর ছোট ভাই কবির উদ্দিন চৌধুরী লাবুকে চড় মারলেন রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি কাজী কেরামত আলী।

ভিত্তিপ্রস্তরে কেন তাঁর বোনের নাম নেই- এ নিয়ে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে উত্তেজিত হয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের গালমন্দ করতে থাকলে একপর্যায়ে এমপি কাজী কেরামতের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন লাবু। কিন্তু কোনোভাবেই নিবৃত্ত করতে না পেরে লাবুর গালে চড় বসিয়ে দেন এমপি।
গতকাল বুধবার দুপুরে রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবন সম্প্রসারণ ও হলরুম নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঘটনার পরপরই স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যায়। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে যাওয়ার পর ঘটনাটি ‘টক অব দ্য টাউনে’ পরিণত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল দুপুরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের রাস্তবায়নে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবন সম্প্রসারণ ও হলরুম নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে উপজেলা পরিষদ চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেওয়ান মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি কাজী কেরামত আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি কামরুন্নাহার চৌধুরী লাভলী, রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম খান, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এম এ খালেক, ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনুর আক্তার বিউটি, সৈয়দ আহম্মেদ, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ আহম্মেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক উন্মোচন করেন এমপি কাজী কেরামত। প্রত্যক্ষদর্শী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, ফলক উন্মোচনকালে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি কামরুন্নাহার চৌধুরী লাভলীর ছোট ভাই ঠিকাদার কবির উদ্দিন চৌধুরী লাবু বোন এমপি লাভলীর উদ্দেশে বলেন, ‘যে ভিত্তিপ্রস্তরে তোর নাম থাকে না, এমন অনুষ্ঠানে তোর আসার দরকার কী ছিল। তোর এখানে আসা ঠিক হয়নি।’ একই সঙ্গে তিনি ভিত্তিপ্রস্তর তৈরি করা কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে গালমন্দ করেন। উচ্চ স্বরে ওই কথাগুলো বলার পরপরই তা নিয়ে আপত্তি জানান এমপি কাজী কেরামত। সে সময় উভয়ের মধ্যে শুরু হয় কথাকাটাকাটি। একপর্যায়ে এমপি কাজী কেরামত আলী মহিলা এমপির ভাই লাবুর শার্টের কলার ধরে মুখে চড় মারেন।
সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এম এ খালেক জানান, ভিত্তিপ্রস্তর তৈরি ও চিঠিতে নাম লেখাসহ সব কাজ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রকৌশলী। ফলে মহিলা এমপির নাম ফলকে থাকা না থাকার বিষয়টি তাঁদের। তিনি আরো জানান, ঘটনাস্থলে তিনি না থাকলে দুই এমপির লোকজনের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটত। যদিও সে সময় রাজবাড়ী থানা পুলিশের সরব উপস্থিতির কারণে ঘটনা আর বেশিদূর এগোয়নি।
এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার পর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলীয় একাধিক নেতা-কর্মী জানায়, এমপি কাজী কেরামত ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের একক আধিপত্য ইতিমধ্যেই রাজবাড়ীতে কমতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা মহিলা লীগের সভানেত্রী কামরুন্নাহার চৌধুরী লাভলীকে বৃহত্তর ফরিদপুরের সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি হিসেবে নিযুক্ত করার পর এমপি কাজী কেরামতের কাছে উপেক্ষিত নেতা-কর্মীরা তাঁর সংস্পর্শে যাওয়ার চেষ্টা করছে। যে কারণে রাজবাড়ীতে অনেকটা প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ। আর ওই বিরোধের অংশ হিসেবেই নিজের ক্ষোভ প্রশমিত করতে না পেরে এমপি কাজী কেরামত মহিলা এমপির ভাইয়ের শরীরে হাত তুলেছেন। তাদের ধারণা ঘটনাটি এখানেই শেষ হওয়ার নয়। এর পরিণতি ভবিষ্যতে আরো খারাপ হবে। যে কারণে তারা এসব ঘটনার মীমাংসায় কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি কামরুন্নাহার চৌধুরী লাভলী বলেন, জেলা প্রশাসকের অনুরোধে বিষয়টি নিয়ে ওই সময়ই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের রুমে আলোচনায় বসা হয়। তখন এমপি কাজী কেরামত তাঁর কাছে লাবু সম্পর্কে নানা রকম অনুযোগ প্রকাশ করেন। পরে লাবুকে ডেকে এনে মিলমিশ করিয়ে দেওয়া হয়।
রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি কাজী কেরামত আলী জানান, এমপি কামরুন্নাহার চৌধুরী লাভলী সদর উপজেলা পরিষদের সদস্য ও উপদেষ্টা নন। যে কারণে তাঁর নাম ভিত্তিপ্রস্তরে দেওয়া হয়নি। গতকাল সকালে জেলা শহরে অনুষ্ঠিত অন্য একটি অনুষ্ঠানে লাভলীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয় এবং উপজেলা পরিষদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে যাওয়ার কথা তিনি তাঁকে বলেন। উপজেলা পরিষদের আলোচনা সভা এবং ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক উন্মোচনের অনুষ্ঠান শেষ হতেই লাভলীর ছোট ভাই লাবু ভিত্তিপ্রস্তরে তাঁর বোনের নাম না দেওয়ায় অশ্লীল ভাষায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ অন্য কর্মকর্তাদের গালাগাল করতে শুরু করেন। গালাগাল থেকে নিবৃত্ত করতে একপর্যায়ে কাজী কেরামত লাবুকে একটি থাপ্পড় লাগিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, লাভলী চৌধুরীর ভাই লাবুসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা বিভিন্ন অফিস-আদালতে গিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে নানা রকম বাজে কথা বলেন। একই সঙ্গে তাঁরা লাভলীকে বড় এমপি এবং তাঁকে ছোট এমপি হিসেবে জাহির করেন


(ওএস/এসসি/অক্টোবর২৩,২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০১ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test