E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

সিন্দুরমতি দিঘীর পাড়ে ঐতিহাসিক মেলা নিয়ে রহস্যবৃত্ত

২০২৩ মার্চ ২৮ ১৬:০৩:১৫
সিন্দুরমতি দিঘীর পাড়ে ঐতিহাসিক মেলা নিয়ে রহস্যবৃত্ত

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট : কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাটের সীমান্তবর্তী ইতিহাস প্রসিদ্ধ পুকুরটির নাম সিন্দুরমতি। চিলমারি ব্রক্ষপুত্র নদে অষ্টমী তিথিতে সনাতন হিন্দু ধর্মাবল্মীরা স্নান করে পূজার্চনা সেরে সিন্দুরমতী দিঘিতে রাম নবমী তিথিতে স্নান সম্পন্ন করলে পাপমোচন হয় বলে কথিতে বলা হয়। তাই প্রতি বছর রাম নবমী তিথিতে পূর্নাথীরা এ দিঘীতে স্নান করতে আসে। ফলে ঐতিহাসিক মেলায় রূপান্তরিত হয়। এটি লালমনিহাট জেলা সদরের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিত। শুধু একটি সুবিশাল প্রাচীন পুকুর নয়, হাজার হাজার বছর ধরে হিন্দুদের অন্যতম তীর্থক্ষেত্র হিসেবে মানিত হয়ে আসছে। প্রাচীনকালে খনিত পুকুরটির তথ্য সম্বলিত গ্রন্থ বা প্রামাণ্যে নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাবে এটি কোন সময়ে সৃষ্টি  হয়েছে তা নির্ণয় সম্ভব হয়নি। প্রাচীন কাহিনী ও কিংবদন্তী সংগ্রহ করা যত সহজ কিন্তু সন-তারিখ নির্ধারন বা অনুমান করা সহজ নয়। স্থানীয় প্রবীণদের মতে পুকুরটি ত্রেতাযুগে সৃষ্টি। 

অনেকের মতে, বাংলা ১৩ সনের চৈত্র মাসের রাম নবমীতে সৃষ্টি। কেহ কেহ বলেন, সিন্দুরমতি পুকুরের ন্যায় বাংলাদেশে অনেক পুকুর আছে। যেমন বরিশালের মাধব পাশায় ' দুর্গা সাগর ' রাণী দুর্গাবতী কর্তৃক ১৭ খ্রীষ্টাব্দে প্রকান্ড দীঘিটি খনিত হয়। পটুয়াখালী জেলার কচুয়া নামক স্থানে রাণী কমলা কর্তৃক 'কমলার দীঘি ' খনিত হয় পাঠান আমলে। জয়পুরহাট জেলার ' নান্দাইল দীঘি ' রাজা নন্দলাল কর্তৃৃক ১৬ খ্রীষ্টাব্দে খনন করা হয়। জামালপুর জেলার ' ঝিনাই পাড়ের ' চন্দ্রবতী দীঘি ' রাজা হরিশ চন্দ্র কর্তৃক সংস্থাপিত করা হয়।

আবার অনেকে বলেন, ১৫১৩খ্রীস্টাবে (মধ্যযুগে) কুচবিহার রাজবংশের একটা অংশ পাঙ্গায় একটি ছোট রাজ্য স্থাপন করেন। সে সময় পাঙ্গায় রাজার সাথে অনেক মৈথিলী ব্রাক্ষন এসেছিল। রাজা তাদের খুব সমাদর করতেন এবং নিস্কর ভূমিদান করে এ দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের সু ব্যবস্থা করে দিতেন। অনেকের ধারনা, ওই ব্রাক্ষনের বংশধর রাজনারায়ন সিন্দুরমতিতে বসতি স্থাপন করে ছিলেন। যা হোক, উপরিলিখিত কিংবদন্তী পুকুর সমুহ মধ্য যুগে খনিত এবং সৃষ্টি রহস্য একই রূপ। জীবন বির্সজনের বিনিময়ে এ সব দীঘিকায় জলের পরিপূন্যতা লাভ করেছিল।

অপরদিকে সিন্দুরমতি পুকুরের সুন্দর সৃষ্টি কাহিনী রয়েছে। জনশুতি রয়েছে, রাজা রাজ নারায়ন একজন ধার্মিক ও দানবীর ব্রাক্ষন ছিলেন। তার স্ত্রী মেনেকাদেবী ছিলেন দেবভক্তি মনা ও পতিপ্রানা। রাজ নারায়ন অল্পদিনের মধ্যে অত্র এলাকায় প্রতিষ্ঠিত করেন নতুন জমিদারিত্ব। ভগবানের আরাধনায় মেনেকা দেবী যথক্রমে লাভ করেন চন্দ্রিকা সদৃশ্য সুললিত দু’কন্যা সিন্দুর আর মতি।

একদা এক সময় রাজ্যে তীব্র খরা দেখা দেয়। প্রজাদেন পানীয় জলের কষ্ট লাঘবে রাজা ১৭একর জমির উপর এক বিশাল পুকুর খনন করেন। কিন্তু আর্শ্চাযর বিষয় পুকুরে এক ফোটা জলের চিহ্ন পাওয়া গেল না। রাতে রাজাকে স্বপ্নাদেশ করা হলো - তার দু’কন্যাকে দিয়ে পুকুরে পুজা করলে তবে জল আসবে। জমিদার স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী রামনবমীতে পুজার আয়োজন করলেন। পুজা স্থলে দুটি লোহার সিন্দুক ও দুটি পাঠা(ছাগল) আনা হয়। উপবাসিত সিন্দুরমতি এক সাথে দেবতাকে বরন করে নিচ্ছিলেন। ঠিক তখনি রাজার মনে পড়ে যায় তুলসী পাতা ছেড়ে এসেছেন। তিনি তুলসী পাতা আনতে গেলে সহসা বিকট শব্দে পুকুরের তলদেশ ভেদ করে তীব্রবেগে অজ¯্র জলরাশি বের হতে লাগল। নিমিষেই পুকুর কানায় কানায় জলে পরিপুর্ণ হলো। কোনমতে সবাই সাতরিয়ে ডাঙ্গায় উঠে। কিন্তু উঠতে পারলো না সিন্দুর আর মতি। ইত্যবসরে জমিদার ফিরে এসে দেখেন সব শেষ। তিনি শোকে মুর্ছিত হয়ে পড়েন। মেনেকা দেবীও শোকে শর্য্যাশায়ী হয়ে পড়েন।

লীলাময় ভগবান আবার এক রাতে স্বপ্নাদেশে জানান, তার দু’কন্যার মৃত্যু হয়নি। পুকুরের তলদেশে দেবত্বপ্রাপ্ত হয়ে চির অমরত্ব লাভ করেছে। দৈব বাণীর কথায় জমিদার মনে শান্তি পেলেন । তবে তিনি স্বচোখে দু’কন্যাকে দেখার বাসনা ব্যক্ত করেন। জমিদারের মনের বাসনা পুরনে অষ্টম দিনের মাথায় অতি ভোরে পুকুরে ভাসমান জলে প্রথমে আলোহিত ও জ্যোতিময় মন্ডলে সিন্দুর ও মতির শাড়ীর আঁচল এবং কনিষ্ঠাঙ্গালি দেখান। পরে দু’কন্যার সাথে কথাও বলেন। সিন্দুর ও মতি জানান, তাদের জীবন উৎসর্গে নির্মিত্তে উক্ত স্থানটি পবিত্র তীর্থ ক্ষেত্র হিসেবে চিরকাল পূজিত হবে।
জনশুতি আছে যে, সে সময় থেকে চৈত্রমাসের রামনবমী তিথিতে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী সিন্দুরমতি পুকুরে পুণ্যস্নানের প্রচলন হয় এবং পবিত্র তীর্থটির মাহাত্ব্য চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

(পিএস/এসপি/মার্চ ২৮, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

৩১ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test