E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

শিরোনাম:

উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় জাহাঙ্গীর আলম

ছেলেকে নির্দোষ প্রমান করতে ভোটের লড়াইয়ে জাহাঙ্গীর আলমের মা

২০২৩ মে ০৭ ১৭:১৩:২৬
ছেলেকে নির্দোষ প্রমান করতে ভোটের লড়াইয়ে জাহাঙ্গীর আলমের মা

আশজাদ রসুল সিরাজী, গাজীপুর : সরকারের বিরুদ্ধে নয়, ছেলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ করতেই শেষ পর্যন্ত গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে ভোটের লড়াইয়ে থাকছেন মনোনয়ন বাতিল হওয়া মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। শুধু জাহাঙ্গীরের মা নয়, সবার মা হিসেবে গাজীপুরবাসী তার সঙ্গে আছে বলে মনে করছেন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রার্থিতা ফিরে পেতে রিট আবেদন করেছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।

রবিবার (৭ মে) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তিনি এই রিট আবেদন করেন। রিটে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

জায়েদা খাতুন (৭০) রাজনীতিতে তেমন কোন হাতেখড়ি থাকলেও নেমেছেন নির্বাচনে। ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন বলে জানান তিনি। মা ছেলের ঐক্য এই লড়াই খুব কঠিন হবে বলেও মনে করেন না তিনি। তার বিশ্বাস জনগণ তার সঙ্গে আছেন এবং জনগণের রায়েই তিনি এ পদে বিজয়ী হবেন।

গাজীপুরে বহিস্কৃত মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়দা আক্তার মহানগরের ছয়দানা এলাকার বাসায় জাহাঙ্গীর আলমকে সঙ্গে নিয়ে মা জায়দা সাংবাদিকদের সামনে হাজির হন।

এসময় প্রার্থীতার বিষয়ে জায়েদা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, ’আমার ছেলে নগরে বাসিন্দাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছিল। নগরের রাস্তাঘাটের অনেক উন্নয়ন করছে। কিন্তু কিছু মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ষড়যন্ত্র করে আমার ছেলেকে বসানো হইছে। আমার ছেলের বিরুদ্ধে অন্যায় করা হয়েছে। আমি এই অন্যায়ের প্রতিবাদে মাঠে নেমেছি। নগরের ৫৭ টা ওয়ার্ডের মানুষ আমাকে কতটা ভালোবাসে, তা আমি ভোটের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চাই। আমি ছেলের জন্য শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব’।

আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু দল মনোনয়ন দেয় মহানগর সভাপতি আজমত উল্লা খানকে। এরপর ’বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে মনোনয়পত্র জমা দেন জাহাঙ্গীর আলম। সঙ্গে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্রও জমা দেন তিঁনিই। যাচাই-বাছাইয়ে গত রোববার ঋণখেলাপি হওয়ায় জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা। তবে বৈধতা পায় জায়েদা খাতুনের প্রার্থীতা।

সাংবাদিকদের কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন বলেন, আমাদের মা-ছেলেকে জনগণ কেমন ভালবাসে দেখার জন্য ভোটে দাড়িঁয়েছি। যদি নির্বাচিত হতে পারি তাহলে রাস্তাসহ যে কাজগুলো পড়ে আছে সেগুলো শেষ করব’। ‘যদি সুষ্ঠু ভোট হয়, কারচুপি ও দূর্নীতি না হয় তাহলে আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদি। ৫৭টি ওয়ার্ডের মানুষ আমার সাথে আছে, থাকবে ইনশাল্লাহ।

মনোয়নপত্র সংগ্রহ, জমা দেওয়া বা যাচাই-বাছাই, এতোদিন কোথাও দেখা যায়নি জায়েদা খাতুনকে। এর মাঝে শনিবার দুপুরে প্রথমবারের মতো জনসম্মুখে হাজির হন তিঁনি। আর তার সঙ্গে দেখা বা সাক্ষাতের জন্য সকাল থেকেই তার বাসায় ভিড় করেন কয়েক শত কর্মী-সমর্থক।

তার স্বামী মিজানুর রহমানের গ্রামের বাড়ি ছিল গাজীপুরের কালীগঞ্জের বান্দাখোলা এলাকায়। জায়দার বিয়ের ১০-১২বছর পরে বান্দাখোলা থেকে তার বড় মেয়ে জারমিন আক্তারকে নিয়ে চলে আসেন বাবার বাড়ি কালীগঞ্জ এলাকায়। সেখানে একখন্ড জমি কিনে বাড়ি করেছেন। সেই ভিটিতেই সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও তার ছোট ছেলে আল আমিন জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেরা কিছু বড় হওয়ার পরে কানাইয়া থেকে চলে যান জায়দার বড়ভাই শফিকুল আলমের বাসায়। সেখানে থেকেই ছাত্রজীবন শেষ করেন তারা। স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে জীবন সংগ্রাম করে চলতে হয়েছে জায়দাকে। জীবনযুদ্ধে অনেক কষ্ট ও দুঃখকে জয় করেই আজকের অবস্থানে পৌছেন তিনি। আজ তার ছেলেরাও প্রতিষ্ঠিত।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কানাইয়ার সেই বাড়িতে তালা ঝুলছে। এখন আর কেউ সেখানে থাকেন না। মা থাকেন নগরীর ছয়দানা এলাকায় ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের বাসায়। ছোট ছেলে আল আমিন সিঙ্গাপুর প্রবাসী। বড় ছেলে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম মেয়র হওয়ার আগে গাজীপুর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। এর আগে তারা বিবিধ ব্যবসা ছিল। জাঙ্গীর আলমসহ তার সন্তানদের বর্তমান অবস্থান নিয়ে আসতে জায়দা আক্তারের অনেক ত্যাগ, সততা, ধৈর্ষ, বুদ্ধিমত্তা ও পরিশ্রম রয়েছে। তিনি শুধু নিজেদের নিয়ে ভাবেননি, এলাকাবাসীর নানা সমস্যা-সংকটের সময়ই তিনি পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখনও এলাকাবাসী তার অবদানের কথা ভুলেনি।

নির্বাচনে জায়দার বাজেট ৩০ লাখ টাকা

জায়েদা খাতুনের কাছে আছে নগদ ৩৫ লাখ টাকা। ব্যাংকে জমা আছে আরও ৫০ হাজার। ব্যবসার আয়ের টাকায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন করতে চান সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় দেখিয়েছেন ৩০ লাখ টাকা জায়েদা খাতুন। বর্তমানে তাঁর কাছে নগদ ৩৫ লাখ টাকা আছে।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দাখিল করা সম্পদ বিবরণীর হলফনামায় জায়েদা খাতুন এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন। হলফনামায় তিনি বলেছেন, তিনি স্বশিক্ষিত। আর তাঁর পেশা ব্যবসা।

হলফনামায় দেখা গেছে, ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন জায়েদা খাতুন। বর্তমানে নিজের কাছে নগদ ৩৫ লাখ ও ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকা জমা আছে তাঁর। এ ছাড়া বন্ড, ঋণপত্র ও স্টক এক্সচেঞ্জ খাতে 'অনারেবল টেক্সটাইল কম্পোজিটলিমিটেড' নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বার্ষিক আড়াই লাখ টাকা আয়ের কথা বলেছেন তিনি। এর বাইরে তিনি দেড় লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী, ১ লাখ ২০ হাজার টাকার আসবাব ও ৩০ তোলা স্বর্ণালংকার থাকার কথা উল্লেখ করেছেন হলফনামায়।

জায়েদা খাতুন হলফনামায় নির্বাচনের খরচ দেখিয়েছেন ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে পোস্টার বাবদ ৩ লাখ ৪২ হাজার, ১০টি নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপনে ১০ হাজার, নির্বাচনী ক্যাম্পে কর্মীদের খরচ ৯০ হাজারসহ আনুষঙ্গিক মোট ব্যয় ধরেছেন ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। প্রার্থীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থাপন বাবদ ৫০ হাজার, কর্মীদের খরচসহ মোট ব্যয় উল্লেখ করা হয়েছে ২ লাখ ৩০ লাখ টাকা। এ ছাড়া প্রার্থীর যাতায়াত বাবদ আড়াই লাখ, ঘরোয়া বৈঠক বাবদ ২ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০, লিফলেট-পোস্টার মুদ্রণ বাবদ ৮ লাখ এবং মাইকিং খরচ বাবদ ৯৬ হাজার ৯০০ টাকা খরচ করবেন তিনি।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও তাঁর মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে ইসি। জাহাঙ্গীর মনোনয়ন ফিরে পেতে ঢাকায় ইসি কার্যালয়ে তিনি আপিল করেছেন বলে জানা গেছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, গত রোববার জাহাঙ্গীর আলমের আইনজীবীর কাছে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার সনদ দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের হলফনামা লিফলেট ও মাইকিং করে প্রচার করা হবে।

মেয়র পদে তিন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পরে গাজীপুরে ভোটের মাঠে মেয়র পদে লড়ায়ে আছেন এখন ৯ জন প্রার্থী। নির্বাচনী মাঠে আলোচিত সমালোচিত নাম জাহাঙ্গীর ও আজমত উল্লা খান। তবে জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থীতা বাতিলের পর এবার নিজের মাকে ছায়া প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ে রেখেছেন জাহাঙ্গীর আলম।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহন করা হবে আগামী ২৫মে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন হলো ৮ মে, আর প্রার্থীদের প্রতীক দেয়া হবে ৯ মে। জায়েদা খাতুনসহ এখন পর্যন্ত মেয়র পদে বৈধ প্রার্থী রয়েছেন ৯জন। এর মাঝে ঋণখেলাপির দায়ে তাঁর মনোনয়ন বাতিল করায় রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীর বিভাগীয় কমিশনার কাছে আপিল করেন। গত বৃহষ্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলামও ঋণখেলাপির কারণে তাঁর মনোনয়ন বাতিল করে রিটার্নিং কর্মকর্তার দেওয়া আদেশ বহাল রাখেন। এর মাঝে রোববার পুনরায় উচ্চ আদালতে গিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলমের।

জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ’ আমি আশা করি উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তে আমি আমার প্রার্থীতা ফিরে পাব।

নৌকার পার্থী আজমত উল্লা সাংবাদিকদের বলেছেন, ভোটের মাঠে যেই থাকুক না কেন জনগণ উন্নয়নের পক্ষে এবং দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ভোট দিবেন। তবে জাহাঙ্গীর আলম ভোটের মাঠে শূন্য হয়ে গেছে, তাই মাকে সাথে নিয়ে পিছু হটার পথ খুঁজছেন।

তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান সাংবাদিকদের জানান, জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সরকার ও ইসির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম, ৮ মের পর জাহাঙ্গীরের মা ভোটের মাঠে থাকবে কিনা সন্দেহ আজমত উল্লার।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আজমত উল্লা খান নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেননি মন্তব্য করে বলেন, আইন মেনে আমি প্রচারে আছি।

(এস/এসপি/মে ০৭, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০২ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test