E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর কোন কোন ক্লাসে শিক্ষকের চেয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম

২০২৪ মে ০৯ ২১:৪৭:৩২
গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর কোন কোন ক্লাসে শিক্ষকের চেয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া : গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর কোন ক্লাসে শিক্ষকের চেয়ে ছাত্র/ছাত্রীর উপস্থিতি কম থাকে। আর এভাবেই চলছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছাত্র/ছাত্রী ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের উপস্থিতি-অনুপস্থিতি নিয়ে অজুহাতের কোন শেষ নেই।

শিক্ষক শিক্ষিকাগণ বলেন, অভিভাবকগণ সচেতন না। তারা ছেলে মেয়েদেরকে লেখাপড়া করানোর চাইতে শিশু বয়সেই গৃহস্থালীর অন্যান্য কাজে লাগিয়ে দেন। আবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি রেখে অনেক ছাত্র ছাত্রীকে কিন্ডার গার্টেন ও ইসলামি মাদ্রসায় নিয়ে ক্লাশ করান। অভিভাবকদের দাবি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা অনেকাংশে রাজনীতিসহ নানাবিধ সামাজিক সংগঠনের কাজে ব্যস্ত থাকেন বেশি। যে কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঠিকমত লেখাপড়া হয় না। শিক্ষক শিক্ষিকারা সময়মত বিদ্যালয়ে আসে না।

এমনও বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারা আছে যারা সপ্তাহে ১ দিন বিদ্যালয়ে গিয়ে হাজিরা খাতায় সব দিনের স্বাক্ষর করেন। তাই বাধ্য হয়েই আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে কিন্ডার গার্টেন ও মাদ্রসায় নিয়ে লেখাপড়া করাই।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এ সব তথ্য সংগ্রহে কেন্দুয়া উপজেলার কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গেলে উঠে আসে নানা তথ্য। পৌর এলাকার চন্দগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরুন্নাহার খানম জানান, তার বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক শিক্ষিকা ৫ জন। ১ জন উপজেলা শিক্ষা অফিসারে কাজ করেন। মোট ছাত্র ছাত্রী ৯৩ জন।

ছাত্র ছাত্রীদের হাজিরা উপস্থিতি খাতা দেখে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার প্রথম শ্রেণিতে ২০ জনের মধ্যে উপস্থিত ১২ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১৭ জনের মধ্যে ১১ জন, ৩য় শ্রেণিতে ১৪ জনের মধ্যে ৪ জন, ৪র্থ শ্রেণিতে ১৮ জনের মধ্যে ৬ জন ও ৫ম শ্রেণিতে ১৩ জনের মধ্যে ৫ জন উপস্থিত হয়। উপস্থিতি এত কম কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রামের অভিভাবকগণ সচেতন না। তারা ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির ছাত্র ছাত্রীদের গৃহস্থালীর কাজে বর্তমানে ধান কাটা ও মারায়ের কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়েও ছাত্র ছাত্রীদের উপস্থিতি বাড়াতে পারছিনা।

তবে তিনি বলেন, ধান কাটা উৎসব শেষ হয়ে গেলে উপস্থিতি আরও বাড়বে।

পালড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়েও শিক্ষার্থীদের তেমন কোন সারা মেলেনি। প্রধান শিক্ষক মাহফুজা বেগম জানান, তিনি গত ৫ মে বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন। তার বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শিক্ষিকা ৬ জন। বৃহস্পতিবার শিশু শ্রেণিতে ৭ জনের মধ্যে ৫ জন, ১ম শ্রেণিতে ১৮ জনের মধ্যে ১৪ জন, ২য় শ্রেণিতে ১৭ জনের মধ্যে ১৩ জন, ৩য় শ্রেণিতে ১৬ জনের মধ্যে ১২ জন, ৪র্থ শ্রেণিতে ১৪ জনের মধ্যে ৯ জন এবং ৫ম শ্রেণিতে ১২ জনের মধ্যে ৯জন উপস্থিত হয়। ওই বিদ্যালয়ের মাঠেই কাজ করছিলেন একজন কৃষক অভিভাবক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ছাত্র ছাত্রীর উপস্থিতি যে হিসাব আপনাদের দেওয়া হয়েছে তা কাগজে পত্রে। মূলত অর্ধেক ছাত্র ছাত্রীও স্কুলে আসে না।

তেতুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোতাহার হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার ১ম শ্রেণিতে ৪৯ জনের মধ্যে ২৫ জন, ২য় শ্রেণিতে ৩৫ জনের মধ্যে ৩৩ জন, ৩য় শ্রেণিতে ২৩ জনের মধ্যে ২০ জন, ৪র্থ শ্রেণিতে ২৮ জনের মধ্যে ২৩ জন ৫ম শ্রেণিতে ২৯ জনের মধ্যে ১৬ জন ছাত্র ছাত্রী উপস্থিত হয়।

তিনি দাবি করেন, কৃষি কাজের জন্যই এখন ছাত্র ছাত্রীরা ঠিকমত বিদ্যালয়ে আসে না। আমরা ইংরেজি এবং অংক ক্লাশের জন্য বিদ্যালয়ে আসতে বললেও ছাত্র ছাত্রী ইংরেজি ও অংক ক্লাস করে চলে যায়।

সাজিউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে উপস্থিত পাওয়া যায় ৩ জন এবং ৪র্থ শ্রেণিতে পাওয়া যায় ৫ জন। প্রধান শিক্ষক বিলকিছ চৌধুরী জানান, বুরো মৌমুমে ধান কাটার সময় ছাত্র ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে আসতে চাই না।

একই কথা বলেন, ধোপাগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিখা পন্ডিত। তার বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার ৩য় শ্রেণিতে ২২ জনের মধ্যে ১০ জন, ৪র্থ শ্রেণিতে ২০ জনের মধ্যে ১৮ জন, ১ম শ্রেণিতে ১৮ জনের মধ্যে ১২, ২য় শ্রেণিতে ২০ জনের মধ্যে ১৬ এবং ৫ম শ্রেণিতে ২০ জনের মধ্যে ১৪ জন ছাত্র ছাত্রী উপস্থিত হয় বলে তিনি জানান।

তবে উপস্থিত হাজিরা অনুযায়ী ছাত্র ছাত্রী কম কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২টি ক্লাশ করে অনেক ছাত্র ছাত্রী চলে গেছে। অভিভাবকরা ধান কাটা মৌসুমে বিদ্যালয়ে পাঠাতেই চান না।

কেন্দুয়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম খান বলেন, বর্তমান বুরো ধান কাটা মৌসুমে অভিভাবকরা ছাত্র ছাত্রীদেরকে গৃহস্থালী কাজে লাগিয়ে দেন। তাছাড়া তিনি শিক্ষক শিক্ষিকাদেরও গাফিলতি আছে বলে দাবি করেন।

তাছাড়া মনিটরিং কার্যক্রমের জন্য সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার ৭ জনের মধ্যে আমি সহ আছি মাত্র ৩ জন। আমি ভারপ্রাপ্ত হিসাবে শিক্ষাকর্তার দায়িত্ব পালন করছি। সকলে মিলিয়ে চেষ্টা করেই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র ছাত্রীদের উপস্থিতি ও পাঠ দানের মান উন্নয়ন বাড়াতে হবে।

(এসবিএস/এএস/মে ০৯, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test