E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

শিরোনাম:

সিগারেট ধরাতে গিয়ে ধাক্কা লাগায় বাবার সামনে শিক্ষার্থীকে এসআই’র মারধর 

২০২৪ মে ১৮ ১৯:১৬:৪৯
সিগারেট ধরাতে গিয়ে ধাক্কা লাগায় বাবার সামনে শিক্ষার্থীকে এসআই’র মারধর 

মোঃ শাজনুস শরীফ, বরগুনা : বরগুনায় এক এসআইয়ের (সাব ইন্সপেক্টর) বিরুদ্ধে  দোকানে সিগারেট ধরাতে গিয়ে এক কলেজ ছাত্রের সাথে ধাক্কা লাগায় বাবার সামনেই তাকে বেধড়ক চড়থাপ্পড় দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করলে ওই ছাত্রের বাবাকেও মারধরেরর চেষ্টা করেন অভিযুক্ত সাব ইন্সপেক্টর।

শনিবার (১৮ মে) বরগুনা পুলিশ সুপার বরাবর ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী এ বিষয় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী রাসেদুল হাসান বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত নুরুজ্জামান বরগুনা সদর থানার সেকেন্ড অফিসার (এসআই)।

লিখিত অভিযোগে ওই শিক্ষার্থী বলেন, 'আমি বরগুনা রোভার স্কাউটসের সদস্য, ক্রীড়া সংস্থার ফুটবল খেলোয়াড়, বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক। নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তান হওয়ায় আমি লেখাপড়ার খরচ জোগাতে ও পরিবারের হাল ধরতে বরগুনা স্টেডিয়াম সংলগ্ন বাবার চায়ের দোকানে কাজ করি। সময় সুযোগ পেলে স্টেডিয়ামে ফুটবল প্রশিক্ষণসহ সম্মান ও সুনামের সাথে বিভিন্ন সামাজিক ও সেচ্ছাসেবী কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখে আসছি।'

'গতকাল শুক্রবার (১৭ মে) বিকেলে স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলার বিরতিকালে আমাদের দোকানে চা পান করতে আসা ক্রেতাদের ভীড়ে বাবাকে সাহায্য করার সময় দোকানে এসে এক ব্যক্তি সিগারেট ধরাতে দিয়াশলাই চান। এ সময় অনিচ্ছাকৃত তার সাথে ধাক্কা লাগলে চা পানরত এক সংবাদকর্মীসহ অগণিত মানুষের মধ্যে ওই ব্যক্তি আমাকে বেধড়ক চড়থাপ্পড় দেন। আমার বাবা প্রতিবাদ করলে সাদা পোশাকে থাকা ওই ব্যক্তি নিজেকে বরগুনা থানার সেকেন্ড অফিসার (সাব ইন্সপেক্টর) নুরুজ্জামান বলে পরিচয় দিয়ে বাবাকেও গালমন্দসহ মারার চেষ্টা করেন। এমতাবস্থায় বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে চাইলে আমাদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানির হুমকি প্রদান করা হয়। সংবাদকর্মীসহ স্থানীয়রা এ বিষয় জানতে চাইলে কিছুক্ষণ পর লোকজন নিয়ে এসে তিনি আরও চড়াও হন।'

ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, 'শপথ বাক্য পাঠ করেও একজন পুলিশ সদস্য ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণ করে পুরো পুলিশ বিভাগের মান ক্ষুণ্ণ করেছেন। এ ঘটনার পর বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে চিকিৎসক আমাকে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে ব্যবস্থাপত্র দেন। বর্তমানে আমার পরিক্ষা চলমান থাকলেও আমি ও আমার পরিবার এই পুলিশ সদস্যর কারণে সামাজিক ও মানষিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি এবং ভবিষ্যতে ভয় ও ঝুঁকিতে আছি।'

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শুধু শুধু ওই পুলিশ সদস্য আমার সামনেই আমার ছেলেকে মারলো। গরীব বলে কিছুই করতে পারিনি, বাবা হয়ে ছেলের কান্না তাকিয়ে দেখলাম, নিজেও অপমান মাথা পেতে নিলাম। এরপরও হয়রানি ও হুমকি আর মানতে পারছিলাম না। তাই ওই পুলিশ সদস্যর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ পরিবার নিয়ে আমার ছেলের স্বাভাবিক জীবনযাপন করার সুযোগের জন্য পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। আশাকরি তিনি ন্যায় বিচার করবেন।'

বরগুনা সদর থানার এসআই নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাথে অসদাচরণের অভিযোগ নতুন নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই থানায় কর্মরত একজন বলেন, 'তিনি এর আগেও শহরের মাছ বাজার ব্রিজের ওপর এক কিশোরকে ধাক্কা লাগায় বেধড়ক চড়থাপ্পড় দিয়েছেন। আবারও একই ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমরা সবাই তার জন্য লজ্জিত।'

এ বিষয় জানতে চাইলে অভিযুক্ত বরগুনা সদর থানার সেকেন্ড অফিসার (এসআই) নুরুজ্জামান বলেন, 'আপনাদের যা ইচ্ছা করেন। স্যার (পুলিশ সুপার) তো আমাদেরই, যা অভিযোগ করার করেন।'

শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশ সদস্যর এমন অসদাচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল। শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের এমন আচরণে পুলিশের প্রতি শিক্ষার্থীদের নেতিবাচক ধারণাসহ মানষিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে বলে মনে করেন বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য অধিকার যুব ফোরামের সমন্বয়ক মহিউদ্দিন।

এ বিষয় বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোজাম্মেল হোসেন বলেন, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে ডাকা হয়েছে। বিষয়টি সমাধান হচ্ছে।

(এসএস/এসপি/মে ১৮, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০২ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test