E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের সাথে হোল্ডিং ট্যাক্স ইস্যু নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র শুরু

২০২৪ মে ১৯ ১৮:০২:১৭
সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের সাথে হোল্ডিং ট্যাক্স ইস্যু নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র শুরু

লতিফ নুতন, সিলেট : সিসিকের হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুৃরীকে বিতর্কিত করতে হোল্ডিং ট্যাক্সকে ইস্যু বানাতে চায় একটি মহল। খোদ ক্ষমতাসীন দলের একজন শীর্ষ নেতা এই ইন্ধনে রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঐ নেতার সাম্প্রতিক কালে তার সিসিক মেয়রকে ইঙ্গিত করে নানা বক্তব্য নানা জল্পনা কল্পনার জন্ম দেয়।

এদিকে বিএনপি নেতা সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সজাগ ঘুম ঘুমাচ্ছেন। এক সময়ের সিটি কাউন্সিলার, পরবর্তীতে মেয়র, কাউন্সিলার থাকাকালীন নগর উন্নয়নের সভাপতি আরিফুল হক চৌধুরী আওয়ামী লীগের এই বালু ব্যবসায়ী শীর্ষ নেতাকে ইন্ধন দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে। জামায়াত-বিএনপি হোল্ডিং ট্যাক্স ইস্যু সৃষ্টি করতে চায়।

সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী হকারমুক্ত, হকারদের পূর্ণবাসন করার পর নগরীকে গ্রীন সিলেট করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। সিসিক মেয়রের এ পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে চায় ষড়যন্ত্রকারী মহল। বর্তমানে সিলেট নগরীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনা অনুযাযী নগর উন্নয়নে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। নগর উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সাথে বার বার দেখা করে সিলেটের উন্নয়নের কথা বলছেন। প্রধানমন্ত্রীর স্নেহভাজন আনোয়ারুজ্জান চৌধুৃরীকে সিলেটের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

সিলেটে নতুন হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে আপত্তি থাকলে ভুক্তভোগীরা নির্ধারিত ‘ফরম ডি’ পূরণ করে সিটি করপোরেশনে আপত্তি জানাতে পারবেন। পরে রিভিউ বোর্ডে তাদের বিষয়টি শুনানির মাধ্যমে যৌক্তিকভাবে নিষ্পত্তি করা হবে। এমনটাই জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের রাজস্ব শাখার সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, পঞ্চবার্ষিক কর পুনর্মূল্যায়নের পর গত ৩০ এপ্রিল থেকে সিটি করপোরেশন নতুন নির্ধারিত বার্ষিক গৃহকর (হোল্ডিং ট্যাক্স) অনুযায়ী ভবনমালিকদের হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের নোটিশ দেওয়া শুরু করে। এরপর নগরের প্রায় পৌনে এক লাখ ভবন মালিকের হোল্ডিং ট্যাক্স ৫ থেকে ৫০০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। এ নিয়ে নগরজুড়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এর পর থেকে প্রতিদিন নগরীতে বিভিন্ন সংগঠন হোল্ডিং ট্যাক্স বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী গত রবিবার (১২ মে) দুপুরে জরুরী সংবাদ সম্মেলন করে রিভিউর মাধ্যমে হোল্ডিং ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার ঘোষণা দেন। তবে আন্দোলনরত ব্যক্তিরা নতুন গৃহকর পুরোপুরি বাতিল করে পুনরায় নির্ধারণের দাবি জানান।
সিটি করপোরেশনের রাজস্ব শাখা জানিয়েছে, নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডে নতুন হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন ১৫টি ওয়ার্ডে পরবর্তী সময়ে গৃহকর নির্ধারণ করা হবে। পুরোনো ওয়ার্ডগুলোয় বুধবার পর্যন্ত ৩১ হাজার ৮৫৫ জন ভবনমালিক তথ্যসংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে আপত্তি ফরম সংগ্রহ করেছেন ৩০ হাজার ৪৭৬ জন। লিখিতভাবে আবেদন করে বুধবার পর্যন্ত আপত্তি জানিয়েছেন ১৬ হাজার ৬৫৮ জন ভবনমালিক।

জানা যায়, পঞ্চবার্ষিক কর পুনর্মূল্যায়নের পর গত ৩০ এপ্রিল হোল্ডিং ট্যাক্সের নতুন তালিকা প্রকাশ করে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। নতুন তালিকায় হোল্ডিং ট্যাক্স আবাসিক ভবনের প্রতি বর্গফুট ৫ টাকা ও বাণিজ্যিক ভবনের প্রতি বর্গফুটের জন্য ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে আবাসিক ভবনের প্রতি বর্গফুট তিন টাকা ও বাণিজ্যিক ভবনের প্রতি বর্গফুটের জন্য পাঁচ টাকা নির্ধারিত ছিল; যদিও মেয়রের কাছে আবেদন করে অনেকে এর চেয়ে কম ট্যাক্স দিতেন।

সিটি করপোরেশনের রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ সালে মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধান শেষে হোল্ডিং সংখ্যা পুননির্ধারিত হয়। এতে নগরের পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডে হোল্ডিং নির্ধারিত হয় ৭৫ হাজার ৪৩০টি। এসবের ট্যাক্স আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১১৩ কোটি ২৭ লাখ ৭ হাজার ৪০০ টাকা।
নতুন হোল্ডিং ট্যাক্স ধার্যের সময় ধরা হয় ২০২১-২২ সাল। সেই করারোপের তালিকাই ৩০ এপ্রিল প্রকাশ করা হয়েছে। ক্ষোভ-প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে রবিবার (১২ মে ) বিকেলে নগর ভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে পর্যায়ক্রমে আলোচনা সভা করে ট্যাক্স নির্ধারণ নিয়ে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে। এ ব্যাপারে ২৭ টি ওয়ার্ডে রিভিউ বোর্ড গঠন করা হবে। পূর্ব নির্ধারিত সময় বর্ধিত করে ২৮ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আবেদন রিভিউয়ের মাধ্যমে হোল্ডিং ট্যক্স সহনীয় পর্যায় নির্ধারন করা হবে। এছাড়াও নতুন ১৫টি ওয়ার্ডের এসেসমেন্ট স্থাগতিরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আরো বলেন, চলমান এসেসেমেন্ট/রি-এসেসমেন্ট নিয়ে কোন প্রকার উদ্বিগ্ন হওয়ার কারন নেই। সিলেটের সচেতন নাগরিক ও কাউন্সিলরদের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে। এ বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে আমাদের পরিষদের আলোচনা হয়েছে। সর্ব সম্মতিক্রমে সহনীয় মাত্রায় ট্যাক্স নির্ধারণের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে।

মেয়র জানান, করারোপ নিয়ে যারা আপত্তি করেছেন তাদের আবেদন শতভাগ স্বচ্ছতার মাধ্যমে রিভিউ করা হবে। আমরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে আমরা কাজ করবো। এখানে কারো প্রতি অবিচার করা হবে না। যেকোন বিষয় নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে কাজ করবে সিসিক। ইতিমধ্যে যারা অভিযোগ ও স্মারক লিপি প্রদান করেছেন তাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে স্বচ্ছতার মাধ্যমে দেখা হবে। সবার সহযোগিতায় এ বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে।

তিনি বলেন, অনেক প্রভাবশালীরা কোনদিন কর পরিশোধ করেননি। অনেকে আবার অনেক বছর ধরে নিয়মিত কর পরিশোধ করেন না জানিয়ে মেয়র বলেন, এভাবে চললে সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন হবে কিভাবে হবে প্রশ্ন রাখেন তিনি। সিলেটের নাগরিদের নিয়ে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সহনীয় মাত্রায় করা নির্ধারন করা হবে। এ বিষয়ে তিনি আবারও নগরবাসীর সহযোগীতা চেয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৯-২০ সালে ফিল্ড সার্ভে করা হয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট পরিষদের বিশেষ সভায় সেটি পাস হয়। কর ধার্য্য সন ধরা হয় ২১-২২ অর্থবছর। মোট ৭৫ হাজার ৪শত ৩০ টি হোল্ডিংয়ে ১ শত ১৩ কোটি ২৭ লক্ষ ৭ হাজার ৪ শত ৪৫ টাকা লক্ষ্য মাত্রা নিধারণ করা হয়। সেটি অনুমোধনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে প্রেরন করা হয়। পরবর্তী ২০২১ সালের ০৩ অক্টোবর স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় সেটি অনুমোধন করে এরই ধারাবাহিকতায়। গত ৩০ এপ্রিল এসেসেমেন্ট/রি-এসেসমেন্ট বার্ষিক মূল্যায়নের উপর কর নিরূপনক্রমে তালিকা প্রকাশ করা হয়। করারোপের উপর তালিকা দেখে আপত্তি জমার শেষ তারিখ নির্ধারন করা হয়েছিল ১৪ মে পর্যন্ত গত রবিবার পরিষদের সাধারণ সভায় সেটি বর্ধিত করে ২৮ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গত ৯ মে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশনের বুথ থেকে তথ্য নিয়েছেন মোট ২৪ হাজার ৪৬৭ জন, আপত্তি ফরম নিয়েছেন ২২ হাজার ৪৪০ জন। মোট বকেয়া আদায় হয়েছে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা।

এর আগে সকাল ১১ টায় সভাকক্ষে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সাধারন সভা অনুষ্ঠিত হয়। সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সাধারন কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলরবৃন্দ এসময় উপস্থিপ ছিলেন।

সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, ভুক্তভোগীদের আপত্তি জানানোর নির্ধারিত সময়সীমা ছিল ১৪ মে পর্যন্ত। সেটা বাড়িয়ে ২৮ মে করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ভবনমালিকদের আপত্তি-সংক্রান্ত আবেদন জমা দিতে হবে। এরপর রিভিউ বোর্ডে শুনানির মাধ্যমে তাদের হোল্ডিং ট্যাক্স সিলেটের প্রেক্ষাপটে অবশ্যই যৌক্তিক একটা জায়গায় নিয়ে আসা হবে। বাসা বাড়ীর অনেক মালিক বলেন দেশের অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের মত ট্যাক্স প্ররিশোধ করতে হবে তবে আলোচনা সাপেক্ষে করা হলে ভাল হবে। যেহেতু এ ব্যাপারে সিসিক উদ্যোগ নিয়েছে নগরবাসীর জন্য সুফল আসবে। কমানো বাড়ানো সিটি কপোরেশনের ব্যাপার। নগরবাসীর মতামতের ভিত্তিতেই হোল্ডিং ট্যাক্স নেয়া হবে জানিয়েছেন একাধিক মহল। উপশহরের বাসিন্দা জনৈক প্রবাসী বলেন উন্নত দেশে হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হয়।

(এলএন/এসপি/মে ১৯, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০২ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test