E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

চায়ের মূল্য ৩০০ টাকা নির্ধারণসহ সঙ্কট নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান বাগান মালিকরা

২০২৪ মে ২৩ ১৮:২৩:৪৯
চায়ের মূল্য ৩০০ টাকা নির্ধারণসহ সঙ্কট নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান বাগান মালিকরা

মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : চা শিল্পের চলমান সঙ্কট নিরসন ও চায়ের মূল্য নুন্যতম ৩০০ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজার ও সিলেটের চাবাগান মালিকরা।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দুপুরে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম এর কাছে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপির কপিটি হস্তান্তর করেন বাগান মালিকরা।

স্মারকলিপির লিখিত বক্তব্যে চা বাগান মালিকরা বলেন, চা শিল্পের অতিশয় সংকটময় সময়ে প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হয়েছি। চা শিল্পের সাথে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তারা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রথম বাঙালী চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর দিক নির্দেশনা ও অপরিসীম অবদানের কথা। বিশেষ করে ২০২২ সালে চা শিল্প শ্রমিক আন্দোলনের মুখে যে অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল তা থেকে প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই চা শিল্প, সেই সংকট থেকে উদ্ধার পেয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে চায়ের নিলাম মূল্য উৎপাদন খরচের চেয়ে কম হওয়ায় চা শিল্পের ভিত নড়ে গেছে। কয়েক লক্ষ শ্রমিক এবং কর্মচারী তাদের জীবীকা নির্বাহের জন্য প্রায় দুইশত বছরের ঐতিহ্যবাহী চা শিল্পের উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে নিলাম মূল্য উৎপাদন খরচের চেয়ে কম হওয়ায় অনেক বাগান শ্রকিদের মজুরী দিতে পারছে না। চলমান পরিস্থিতিতে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে জরুরিভিত্তিতে এই সমস্যাবলীর সমাধানকল্পে আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

বর্তমানে চায়ের উৎপাদন খরচ প্রায় ২৫০ টাকা। তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চা বোর্ড, বাংলাদেশীয় চা সংসদ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ টি ট্রের্ডাস এসোশিয়েশনের সমন্বয়ে চায়ের নিলামমূল্য নিম্নতম ৩শ টাকা নির্ধারণ করলে চা শিল্প আপাতত রক্ষা পেতে পারে। নিম্নতম মূল্যের উপরে চায়ের মান অনুযায়ী নিলাম মূল্য নির্ধারিত হতে পারে। চায়ের চোরাচালালান রোধ করা।

পঞ্চগড়ে উৎপাদিত চা আমাদের জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও দুঃখজনক হলেও ওখানে চা উৎপাদনের কোন নিয়মনীতি না মেনে খুবই নিম্নমানের চা উৎপাদিত হচ্ছে। ফ্যাক্টরি থেকে কোন ট্যাক্স-ভ্যাট পরিশোধ না করে অবৈধভাবে চা বিক্রি হচ্ছে। এই নিম্নমানের চা বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানসম্মত চায়ের নিলাম বাজারে যথাযথ মূল্য পাওয়া থেকে বাধার সৃষ্টি করছে।

ছোট বড় প্রায় সব বাগানই বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে হাইপোথেটিক লোন নিয়ে থাকে এবং চায়ের নিলাম মূল্য সরাসরি কৃষি ব্যাংকে জমা হয়ে তা পরিশোধ করা হয়। এই ঋণ পরিশোধের সুদের হার ৯% থেকে বর্তমানে ১৩% করা হয়েছে। বর্তমান অবস্থায় তা পরিশোধ করা বাগানগুলোর পক্ষে অসম্ভব। বিশেষ বিবেচনায় ঋণ পরিশোধের সুদের হার ৯% রাখার জন্য এবং ঋণ পরিশোধের সময়সীমার ব্যাপারে শিথিলনীতি গ্রহণ, রুগ্ন ও উন্নয়নশীল চা বাগানকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা।

চা বোর্ডের বাধ্যতামুলক ২.৫% সম্প্রসারণ আবাদ কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রেখে শূন্যস্থান পূরণ করার উপর জোর দেয়া। বর্তমানে বাগানগুলোর হাতে সম্প্রসারণ কার্যক্রমে বিনিয়োগ করার মতো পর্যাপ্ত তহবিলও নেই। তাই এই সম্প্রসারণ কার্যক্রম কয়েক বছরের জন্য স্থগিত রেখে শূন্যস্থান পূর্ণ করে উৎপাদন বাড়ানোর ব্যাপারে প্রাধানমন্ত্রীর সদয় দিক নির্দেশনা চান।

ঘন ঘন বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে ফ্যাক্টরিতে সবুজ কাঁচা চা পাতা (যা পচনশীল) প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে চায়ের মান রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। চা ফ্যাক্টরিগুলোতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবী করেন।

চা শিল্পের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি বিবেচনায় চা শিল্পকে ভ্যাট ও ট্যাক্স থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়ার জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানান। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চা আমদানির জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। এমতাবস্থায় চা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমদানির উপর শুল্ক বৃদ্ধি করে চা আমদানি নিরুৎসাহিত করার কল্পে ব্যবস্থা গ্রহণসহ চা শিল্প বাঁচাতে সুদৃষ্টি কামনা করছে বাগান মালিকরা।

স্মারকলিপি প্রদানকালে বাগান মালিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নিনা আফজাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ (খাদিম চা বাগান) ও বালিসিরা হিল টি কো লিঃ (জঙ্গলবাড়ি চা বাগান) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল রশিদ চৌধুরী। দি সিলেট টি কোঃ লিঃ (মালিনিছড়া চা বাগান), দি দলই টি কোঃ লিঃ (দলই চা বাগান) ও রাজনগর টি কোঃ লিঃ (রাজনগর চা বাগান) এর মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আজম আলী। এম আহমেদ টি এন্ড ল্যান্ডস কোঃ লিঃ, চাঁনভাগ চা বাগান, আমীনাবাদ চা বাগান, হাবিবনগর চা বাগান, খান চা বাগান, লালাখাল চা বাগান, আফিফানগর চা বাগান পরিচালক তেহসিন চৌধুরী। ফুলবাড়ী টি এস্টেট লিঃ, ফুলবাড়ী চা বাগান, নুরজাহান চা বাগান, বুরজান টি ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ (বুরজান চা বাগান), দি নিউ সিলেট টি এস্টেট লিঃ (ফুলতলা চা বাগান) এর পক্ষে মহাব্যবস্থাপক আব্দুস সবুর খান। ম্যাকসন ব্রাদার্স (বাংলাদেশ) লিঃ, হাফিজ চা বাগান ও আয়েশাবাগ চা বাগানের পরিচালক এম এ জামান সোহেল।

মাথিউরা টি কোঃ লিঃ (মাথিউরা চা বাগান), তাজ টি এন্ড ট্রেডিং কোঃ লিঃ (মোমিনছড়া চা বাগান) এর পরিচালক রুকন উদ্দিন খান। কালিকাবাড়ি চা বাগানের পরিচালক মুফতি মোহাম্মদ হাসান। জোবেদা টি কোঃ লিঃ (কালিটি চা বাগান) এর পরিচালক এম এ মালিক হুমায়ুন। পুর্ব পাহাড় টি কোঃ লিঃ (রেহানা চা বাগান) মালিক প্রফেসর শফিকুল বারি। লোভাছড়া চা বাগানের পরিচালক ইউসুফ জোসেফ ফারগুসন। আল্লাদাদ চা বাগানের পরিচালক ইফজাল চৌধুরী। মেঘালয় চা বাগানের পরিচালক এম এ ওয়াকিল খান ও তারাপুর চা বাগান ব্যবস্থাপক রিংকু চক্রবর্তী।

(একে/এসপি/মে ২৩, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

১৬ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test