E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version


বরিশালে মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্পের এনজিও বাছাই এ অনিয়ম!

২০১৫ মে ২০ ১৮:২১:২৫
বরিশালে মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্পের এনজিও বাছাই এ অনিয়ম!

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি : নিরক্ষরতা মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্পের এনজিও বাছাই পর্বেই ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে কোটি টাকা ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ উঠেছে।

বেসিক লিটারেসি এ প্রজেক্টে মোটা অংকের টাকা ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে নাম সর্বস্ত্র বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাকে (এনজিও) অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। ফলে অতীতে এ প্রকল্পে কাজ করা বহুল বির্তকিত একটি বেসরকারি এনজিও’র (ব্রিজ সোসাইটি) কমিটি না থাকলেও সিলেকশনে নাম থাকায় এবারও সরকারের এ মহতি উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের অন্যান্য জেলার ন্যায় বরিশালের নিরক্ষর নারী-পুরুষদের মাঝে স্বাক্ষর জ্ঞান ও জীবনমুখী শিক্ষা নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সেলক্ষ্যে জেলার দশটির মধ্যে পাঁচটি উপজেলায় এ প্রকল্পের কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। উপজেলাগুলো হলো-আগৈলঝাড়া, গৌরনদী, মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা ও মুলাদী। ৪ বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের মাধ্যমে এসব উপজেলার ১৫ থেকে ৪৫ বছরের নিরক্ষর ৯০ হাজার নারী-পুরুষকে স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত করা হবে। নারীরা বিকেলে অবসর সময়ে এবং পুরুষেরা রাতে এ শিক্ষা গ্রহন করবেন। আর এ প্রকল্প পরিচালনার দায়িত্ব পাবেন সংশ্লিষ্ট উপজেলার একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)। সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৪ সালে সরকার এ প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছেন। চার বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের কার্যক্রম চলবে ২০১৮ সাল পর্যন্ত। প্রতিবছর প্রত্যেকটি উপজেলায় এ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৮০লাখ টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) পরিচালকেরা জানান, জেলার ৫টি উপজেলায় কাজ করতে আগ্রহী হয়ে স্ব-স্ব উপজেলার এনজিওসহ জেলা শহরের সর্বমোট ৮৯টি এনজিও প্রধান জেলা উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কমিটির মাধ্যমে প্রকল্প পরিচালকের বরাবরে আবেদন করেছিলেন। এনজিও পরিচালকেরা অভিযোগ করেন, শুরু থেকেই জেলা শিক্ষা কমিটি ও এনজিও নির্বাচনের বাঁছাই কমিটির পক্ষ থেকে তাদের কাছে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দাবি করা হয়। তাদের দাবিকৃত মোটা অংকের টাকা দিতে না পারায় প্রাথমিক বাঁছাইয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম অর্ন্তভূক্ত করা হয়নি।

সেক্ষেত্রে বাছাই কমিটির নেতৃবৃন্দরা ৫ লাখ টাকা করে প্রায় ৮০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে ৮৯টির মধ্যে ১৬টি এনজিওকে তালিকাভূক্ত করেছেন। অতিসম্প্রতি ওই তালিকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। যারমধ্যে অধিকাংশই নামসর্বস্ত্র এনজিও। সেক্ষেত্রে স্ব-স্ব উপজেলার এনজিও’কে তালিকাভূক্ত করার নিয়মও মানা হয়নি। তারা আরও জানান, মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ১৬টি এনজিও’র মধ্যে পাঁচটি উপজেলায় কাজ পাবে ৫টি এনজিও। ফলে প্রাথমিক নির্বাচনের পর মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ১৬টি এনজিও’র প্রধানগণ এখন বিভিন্ন তদবির ও অর্থের বিনিময়ে প্রকল্প বাগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়েও ঘুরে বেড়াচ্ছেন। জেলা কমিটির প্রাথমিক বাছাইয়ে ব্যাপক অনিয়মের বিরুদ্ধে একাধিক এনজিও প্রধানগণ আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলেও উল্লেখ করেন।

সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বরিশালে ২০১৫ সালের প্রথমার্ধে জেলা উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটিতে জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল আলমকে আহবায়ক, উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর জেলার সহকারী পরিচালক সুবিমল চন্দ্র হালদারকে সদস্য সচিব ও পাঁচ উপজেলার নির্বাহী অফিসারদের সদস্য করে ২০ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, জেলা উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কমিটিতে তাদের অর্ন্তভূক্তি করা হলেও এ ব্যাপারে তাদের কোন মতামত নেয়া হয়নি।

জেলা উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো অফিসের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, জেলার জনগুরুত্বপূর্ণ গৌরনদী উপজেলার জন্য আভাস, রিডো, ব্রেভ ও ইউজি নামের চারটি এনজিওকে জেলা কমিটির বাঁছাইয়ে প্রাথমিকভাবে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। একাধিক এনজিও পরিচালকেরা জানান, তালিকাভূক্ত হওয়া এনজিও’র একটিও গৌরনদী উপজেলার নয়। অথচ স্ব-স্ব উপজেলার এনজিওকে তালিকাভূক্ত করার নিয়ম রয়েছে। সেক্ষেত্রে এখানকার একাধিক এনজিও’র পরিচালকেরা আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু জেলা শিক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে তাদের কাছে দাবিকৃত মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিতে না পারায় উপজেলার সবকটি এনজিওকে প্রাথমিক বাঁছাইয়ের তালিকা থেকে ছিটকে পড়তে হয়েছে। এভাবেই প্রতিটি উপজেলায় এনজিও নির্বাচনের বাঁছাই কাজে ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে একাধিক নামসর্বস্ত্র এনজিওকে তালিকাভূক্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগৈলঝাড়ায় এনজিও ব্রীজ সোসাইটির কার্যক্রম নিয়ে বর্তমানে আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। কথিত সাবেক পরিচালক মিরণ শাহ’র কমিটি বাতিল করে সমাজসেবা অধিদপ্তর নতুন কমিটি অনুমোদন দিয়েলেও তারা স্বাক্ষরতা প্রকল্প বাছাইযের কোন খবরই জানেনান। ওই এনজিও গত বছর আগৈলঝাড়ায় কোন কার্যক্রমই পরিচালনা না করে অর্থ আত্মসাৎ করার ঘটনায় সাবেক ইউএনও আবুল কালাম তালুকদার তদন্তে সত্যতা পেয়েছিলেন।

অনিয়ম ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ও উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো বরিশালের সহকারী পরিচালক সুবিমল চন্দ্র হালদার বলেন, প্রাথমিক বাছাইয়ে যেসব এনজিও তালিকাভূক্ত হতে পারেনি, সেইসব এনজিও’র পরিচালকেরা আমাদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের মিথ্যে অভিযোগ এনেছেন। জেলা উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কমিটির আহবায়ক ও জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল আলম বলেন, ঘুষ গ্রহণের ব্যাপারে আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(টিবি/এএস/মে ২০, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০১ নভেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test