E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

বন্দর গণহত্যা দিবস পালিত

২০১৪ এপ্রিল ০৪ ২১:৫৬:৪৫
বন্দর গণহত্যা দিবস পালিত

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি :

বন্দর গণহত্যা দিবসে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আলোচনা সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন স্বজন হারা পরিবারের সদস্যরা। শুক্রবার বিকেলে সিরাজউদ্দোলা ক্লাব মাঠে আয়োজিত শহীদ ৫৪ জনের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় উপস্থিত স্বজন হারানোরা দীর্ঘদিন পরে হলেও তাদের স্বজনদের স্মরণ করার জন্য আয়োজকদের বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমরা আমাদের শহীদ স্বজনদের জন্য গর্বিত কেননা তাঁরা দেশের জন্য জীবন দিয়ে গেছেন।

সেদিন শহীদ যমুনা চন্দ্র কানুর ছেলে গোপাল কানু জানান, এতদিন পর আমার বাবকে স্মরণ করছে আমাদের সম্মানিত করছে এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, আমরা আমার বাবার হত্যাকারীর বিচার চাই। ঘাতকদের ফাঁসি চাই।

শহীদ দূর্গা চন্দ্র প্রসাদের ছেলে সুনীল প্রসাদ তাঁর বাবার স্মৃতি হাতড়িয়ে বলেন, জয়বাংলা বলাটাই কি বাবার অপরাধ। যদি এটাই বাবার অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে আমরা আমার বাবার জন্য গর্বিত।

১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল যাঁরা শহীদ হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে বাবুল, বাদশা মিয়া, সমীর সরকার, মমতাজ উদ্দিন মাস্টার, সূর্য চন্দ্র কানু, যমুনা চন্দ্র কানু, লক্ষণ চন্দ্র , দূর্গা চন্দ্র প্রসাদ, নারায়ণ চন্দ্র প্রসাদ, আলী আকবার, কানাই লাল কানু, আমির হোসেন, নায়েব আলী, মোবারক হোসেন, সালাম মুন্সী, আলাউদ্দিন কমান্ডার সহ ৫৪ জন। সেদিন ওই ৫৪ জনকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাস ফায়ারে গুলি করে হত্যা করে তাদের লাশগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল।

তাদের আত্মীয় স্বজনরা জানান, সেদিন পাক হানাদার বাহিনী মেতেছিল পৈশাচিক উন্মত্ততায়। ব্রাস ফায়ারে হত্যা করে লাশগুলো যেন সনাক্ত করতে না পারে সেজন্য আশপাশের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে সেখানকার বেড়া, কাঠ, বাঁশ এনে লাশগুলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল।

দিবসটি পালনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বন্দর শাখা দিনভর নানা কর্মসূচি পালন করে। সকালে স্মৃতিস্তম্ভে শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন , মসজিদে মসজিদে দোয়া, মন্দিরে প্রার্থনা, কাঙ্গালীভোজ ও বিকেলে সিরাজউদ্দোলা ক্লাব মাঠে আলোচনা সভার আয়োজন করে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব কাজী নাসিরের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সেনা প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) সফিউল্লাহ বীর উত্তম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির জেলা সভাপতি চন্দন শীল, সাধারণ সম্পাদক সামিউল্লাহ মিলন, দৈনিক বাংলা ৭১ ও উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের সম্পাদক প্রবীর সিকদার, বন্দর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানু, আলেয়া বেগম, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, বন্দর শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ আলী মো. পিন্টু, সাধারণ সম্পাদক এম এইচ কমল খান, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি কমান্ডার গোপীনাথ দাস, কাউন্সিলর ইসরাত জাহান খান স্মৃতি, ফয়সাল আহমেদ সাগর, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শঙ্কর সাহা, সাধারণ সম্পাদক সুজন সাহা, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপক কুমার সাহা, সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী প্রমুখ।

সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সহ সভাপতি ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নিমূল কমিটির উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) কে এম সফিউল্লাহ্ বীর উত্তম বলেছেন, বর্তমানে বিএনপি জিয়াকে স্বাধীন দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করে দেশে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিব নগন সরকার গঠন করে শপথ নেন। জিয়া ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। ৪৩ বছর পার হয়ে গেছে আজও গণহত্যার বিচার হয়নি। এর বিচার করতে হবে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে বন্দরের সিরাজদৌল্লাহ ক্লাব মাঠে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।



বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ কে এম শামীম ওসমান বলেন, ৪৩ বছর আগে পাক হানাদার যে গণহত্যা চালিয়েছে স্বজন হারার তা আজও ভুলতে পারেনি। ৩০ লাখ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীনতা। আজ সেই স্বাধীনতা খর্ব করে যাচ্ছে রাজাকার চক্র। আমরা গণতন্ত্র বা মানবাধিকার মানিনা। আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ চলবে। হত্যাকারী ও ধর্ষণকারীদের সাথে আমরা চলতে পারিনা।

সাংবাদিক প্রবীর সিকদার স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর পরিবারের ১৩ জন সদস্যের নিহত হওয়ার করুণ কাহিনী বর্ণনা করে বলেন, সেদিন আমার বাবা, কাকা, দাদুকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা। সারা বাংলাদেশটাই বাবার সৎকারের স্থান মন্তব্য করে তিনি বলেন, যেখানেই স্বজন হারা মানুষ সেখানেই আমার তারা আত্মীয়। তিনি বলেন, গণতন্ত্র, মানবতাতন্ত্র কিছুই বুঝিনা। বুঝি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এই চেতনার সাথে কোন ধরনের আপোস হতে পারেনা।


আলোচনা সভায় বক্তারা একাত্তরের ঘাতক রাজাকার আলবদরদের বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত করার তাগিদ দিয়ে বন্দরে শহীদ ৫৪ সদস্যের পরিবারবর্গকে রাষ্ট্রীয় সহায়তা প্রদানের দাবি জানানো হয়। এছাড়াও সিরাজউদ্দোলা ক্লাব মাঠে নির্মিত স্মৃতি স্তম্ভটি বিশেষভাবে সংরক্ষণ করার জন্য প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানানো হয়।
(ডিকেএম/অ/এএস/এপ্রিল ০৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৯ আগস্ট ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test