E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

শিরোনাম:

বিদেশী সিরিয়ালের প্রভাব: মাদরাসা ছাত্র খুন, আটক ৩

২০১৫ সেপ্টেম্বর ০১ ১৯:৪১:৩২
বিদেশী সিরিয়ালের প্রভাব: মাদরাসা ছাত্র খুন, আটক ৩

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরে নিখোঁজ হওয়ার ৬ দিন পর তানভির (১১) নামে এক মাদরাসার ছাত্রের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে র‌্যাব-৫।

মঙ্গলবার শহরের আলাইপুর এলাকার আশরাফুল উলুম মাদরাসার পাশের একটি সেফটি ট্যাংকি থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় হুসাইদ হোসেন (১৫) ও বায়োজিদ হোসেন (১৪) নামে ওই মাদরাসার দুই শিক্ষার্থী সহ ৩ জনকে আটক করা হয়। আটক অপরজন হলো শহরের কালুর মোড় এলাকার আব্দুর রহিমের ছেলে মোঃ নাঈম (১৫)।

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, আটক ওই তিন কিশোর বিদেশী চ্যানেলের সিরিয়াল দেখে উৎসাহিত হয়ে মুক্তিপনের টাকা আদায়ের উদ্যেশ্যে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে ।

র‌্যাব সুত্র জানায়, শহরের উত্তর বড়াগাছা এলাকার সাইফুল ইসলাম তুষারের একমাত্র ছেলে তানভির হোসেন আলাইপুর এলাকায় আশরাফুল উলুম হাফেজিয়া মাদরাসায় পড়ালেখা করতো। গত ২৫ আগষ্ট বিকেলে আছরের নামাজের পর মাদারাসার বাহিরে সহপাঠিদের সাথে খেলতে গিয়ে সে নিঁখোজ হয়। পরে মোবাইল ফোনে তানভিরের বাবা সাইফুলের কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করা হয়। ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে এ বিষয়ে সদর থানায় একটি জিডি করেন এবং র‌্যাব-৫'কে অবহিত করেন।

তানভিরের বাবা সাইফুল ইসলাম জানান, মুক্তিপণ দাবীকারীরা মুক্তিপনের টাকার জন্য মোবাইলে তার সাথে যোগাযোগ করে। তারা নিজেরাই তানভিরের মত গলা করে কথা বললে তার সাথে কথা বলে। কিন্ত তার ছেলের কন্ঠস্বর না হওয়ায় তিনি তানভিরের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা মোবাইল কেটে দেয়। তার ছেলেকে ২৫ আগষ্ট রাতেই মেরে ফেলে তারা। তারা নিজেরাই তানভিরের কন্ঠ নকল করে কথা বলে মুক্তিপণের টাকা হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল। তিনি ঘটনাটি র‌্যাবকে জানান।

র‌্যাব সুত্র জানায়, ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে মোবাইল ব্যবহারকারী তিন কিশোর ওই মাদরাসা ছাত্র সিংড়া উপজেলার জোড়মল্লিকা গ্রামের মোক্তার হোসেনের ছেলে হুসাইদ হোসেন, বাগাতিপাড়া উপজেলার নওপাড়া গ্রামের বাবুল হাসানের ছেলে বায়োজিদ ও তাদের সহযোগী শহরের কালুর মোড় এলাকার নাঈম নামে তিন কিশোরকে সোমবার রাতে আটক করা হয়। তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তি ও দেখিয়ে দেওয়া সেফটি ট্যাংক থেকে মঙ্গলবার সকালে তানভিরের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। আটক ওই তিন কিশোর হত্যার দায় স্বীকার করে জানায়, তানভিরকে অপহরনের পর মাদরাসার পাশের নির্মানাধীন একটি পরিত্যাক্ত বাড়িতে নিয়ে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে হত্যা করে। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে ক্ষুর দিয়ে গলা কেটে পাশের একটি বাড়ির সেফটি ট্যাংকে ফেলে দেয়।

মাদরাসা শিক্ষক আব্দুল আওয়াল জানান,তানভিরের সাথে কারো কোন বিরোধ ছিলনা। সে শান্ত প্রকৃতির ছেলে ছিল। গত ২৫ আগষ্ট বিকেলে আছরের নামাজ পর সহপাঠিদের সাথে খেলতে বাহিরে যায়। মাগরিব নামাজের সময় তাকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করা হয়। পরে তার বাবা-মা সহ পুলিশকে জানানো হয়।

র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মাহবুব আলম জানান, ওই তিন কিশোর ভারতীয় একটি টিভি চ্যানেলের সিরিয়ালে অপহরন করে মুক্তিপণ আদায়ের কাহিনী দেখে উৎসাহিত হয়। তারা বাবার একমাত্র ছেলে তানভিরকে বেছে নিয়ে অপহরন করে। তারা ভেবেছিল একমাত্র ছেলে হওয়ায় তানভিরের বাবার কাছে তেকে মুক্তিপণের টাকা সহজেই আদায় করা যাবে। ভাল একটি মোবাইল দেখানোর কথা বলে তানভিরকে নির্মানাধীন ওই পরিত্যাক্ত বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। পুর্ব পরিকল্পনানুযায়ী হুসাইদ কাপড় দিয়ে তানভিরের গলা পেঁচিয়ে ধরে মাটিতে ফেলে দেয়। এসময় বাইয়োজিদ তার পা চেপে ধরে। তানভির নিস্তেজ হয়ে গেলে ওরা তাকে ছেড়ে দেয়। কিন্ত তানভিরকে নিশ্বাস নিতে দেখে হুসাইদ তার কাছে থাকা ক্ষুর দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে তারা মাদরাসার অদুরের একটি সেফটি ট্যাংকে তানবিরের লাশ ফেলে রেখে যায়। এরপর তারা দু’টি নতুন সিম কিনে একটি দিয়ে তানভিরের বাবার সাথে কথা বলে মুক্তিপন দাবী করে। অপর সিম দিয়ে তানভিরের বাবার ভোটার আইডি কার্ড ব্যবহার করে বিকাশ একাউন্ট খোলে মুক্তিপণের টাকা গ্রহণ করার জন্য। তানভিরের বাবা সাইফুল ইসলাম র‌্যাবের পরামর্শ অনুযায়ী ছেলে তানভিরের সাথে কথা না বলে মুক্তিপনের টাকা দিবেন না বলে জানালে তারা নিজেরাই তানভির সেজে কথা বলে। এরই সুত্র ধরে র‌্যাব সদস্যরা সোমবার রাতে হুসাইদ, নাঈম ও বায়োজিদকে আটক করে। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মাদরাসার পাশের একটি সেফটি ট্যাংক থেকে মঙ্গলবার তানভিরের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুনশী শাহাবুদ্দিন জানান, আটককৃতরা পুলিশ ও র‌্যাবের কাছে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে বিদেশী টেলিভিশন চ্যানেলের সিরিয়াল দেখে উৎসাহিত হয়েই এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দড়ি, পায়ের স্যান্ডেল, ক্ষুর ও মাদরাসা থেকে তাদের ২ টি মোবাইলসহ একাধিক মোবাইল সিম উদ্ধার করা হয়।

এদিকে বিদেশী টেলিভিশন চ্যানেলের সিরিয়ালে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের কাহিনী দেখে নাটোরের তিন কিশোর তাদের সহপাঠিকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনা ঘটানোয় নাটোরে চাঞ্চল্যসহ উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার সৃষ্টি করেছে।

(এমআর/এলপিবি/আগস্ট ১, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০২ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test