E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

শিরোনাম:

দিনাজপুরে দলিল লেখকদের বিক্ষোভ, সাব-রেজিষ্ট্রারের অপসারণ দাবি

২০১৬ মার্চ ০২ ১৮:৪৩:৩৩
দিনাজপুরে দলিল লেখকদের বিক্ষোভ, সাব-রেজিষ্ট্রারের অপসারণ দাবি

দিনাজপুর প্রতিনিধি : দিনাজপুরের বোঁচাগঞ্জ উপজেলায় স্থানীয় দলিল লেখক সমিতির সাথে সাব-রেজিষ্ট্রারের বিরোধের জের ধরে টানা একমাস ধরে বন্ধ রয়েছে দলিল সম্পাদনের কাজ। ফলে জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা পড়েছেন বিপাকে। সরকার বঞ্চিত হচ্ছে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব থেকে।

বোচাগঞ্জ উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রার গোলাম মোর্ত্তজার অপসারনসহ ৭ দফা দাবিতে বুধবার দুপুরে উপজেলা কার্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে দলিল লেখক ও সাধারণ ভুক্তভোগীরা। দাবিগুলো হচ্ছে, অফিস না করে সরকারী অর্থ উত্তোলন ও আত্মসাতের বিষয়ে কাগজপত্র যাচাই, রেজিষ্ট্রিযোগ্য দলিলের জন্য কি কি কাগজ প্রয়োজন তার লিষ্ট টাঙ্গানো, অসৎ আচরন ও লাইসেন্স বাতিলের হুমকী দিয়ে পেশাকে পদদলিত করায় বিভাীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন এবং ঘুষ অনিয়ম দুর্ণীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার জন্য তদন্ত সাপেক্ষে অবিলম্বে অপসারনসহ অন্যান্য।

দলিল লেখকরা অভিযোগ করেছেন, ২০১৫ সালের ৩ আগষ্ট সাব রেজিষ্ট্রার গোলাম মোর্ত্তজা যোগদান করেন। সরকারী নিয়মে নিয়মিত অফিস করার কথা থাকলেও ওই সাব রেজিষ্ট্রার সপ্তাহে ৩ দিন অর্থাৎ রোববার, সোমবার ও মঙ্গলবার অফিস করেন। তিনি নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই প্রতি দলিল রেজিষ্ট্রি হওয়ার আগে তার খাস কামরায় দাখিল করে উৎকোচ গ্রহনের চুক্তি করার পর রেজিষ্ট্রি কার্যাদি সম্পন্ন করে। তিনি সরাসরি ক্রেতাদের নিকট থেকে অর্থ উত্তোলন করেন। দলিল প্রতি অর্থ আদায়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্র নেই বা ভুল আছে এই ধরনের অজুহাত উত্থাপন করে। এসবের প্রতিবাদ করায় তিনি বারবার দলিল লেখকদের সাথে অসৌজন্যমুলক আচরন ও লাইসেন্স বাতিলের হুমকী দেন। এরই প্রতিবাদে গত ১ লা ফেব্র“য়ারী থেকে দলিল লেখকরা কলম বিরতী পালন করছেন।

দলিলদের এই ধরনের প্রতিবাদী কার্যক্রমের জন্য বিপাকে পড়েছেন সাধারণ জনগণ। অনেকেই তাদের বিবাহযোগ্য কন্যাদের বিয়ে দিতে পারছেন জমি বিক্রি না হওয়ার ফলে।

উপজেলার মুর্শিদহাট এলাকার জমি বিক্রেতা আব্দুল হাই বলেন, জমি বিক্রি করে তিনি তার মেয়ের বিয়ে দিবেন। এজন্য ক্রেতা মো: সিদ্দিক মিয়ার সাথে জমির দরও ঠিকঠাক হয়েছে। কিন্তু রেজিষ্ট্রির অভাবে জমি বিক্রি করতে পারছেন না।

উপজেলা শহরের একটি জমির ক্রেতা ক্রেতা আমজাদ হোসেন বলেন, জমি বিক্রেতা শহীদুল হক ও তিনি মিলে ডিসিআর (ফটোকপি) জমা দিয়েছেন অফিসে। কিন্তু রেজিষ্ট্রার ২ হাজার টাকা দাবি করেছেন উৎকোচ হিসেবে। আর সেটি নিয়ে কথাকাটাকাটি হওয়ায় আর ওই জমি বেচাকেনা হয়নি।

উপজেলার মনিপুর এলাকার ভুপেন সিং জানান, ৪০ শতক জমি বিক্রির জন্য ১০ হাজার টাকা চেয়েছেন সাব রেজিষ্ট্রার।

বোচাগঞ্জ উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মাসিক গড়ে প্রায় ৫০০ দলিল সম্পাদন করা হয় এখানে। কিন্তু গত এক মাস যাবত কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পুরো ফেব্র“য়ারী মাসে মাত্র ১৪টি দলিল সম্পাদন করা হয়েছে। প্রতি মাসে এই কার্যালয় থেকে গড়ে মাসিক সাড়ে ১৩ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়। দলিল লেখকদের এই কর্মবিরতীর ফলে মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। পাশাপাশি কর্ম না করায় অর্থ উপার্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দলিল লেখকরা।

দলিল লেখক স্বাধীন চন্দ্র রায় জানান, ২ মাস ধরে কোন আয় নেই। ৩ হাজার টাকা ঘুস না দেয়ার কারনে তাকে হয়রানীর শিকার হতে হয়েছে। যার ফলে দলিল লেখকদের কলম বিরতীতে তিনি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।

বোচাগঞ্জ উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারন সম্পাদক হরি চন্দ্র রায়, মোট সদস্য ৫২ জন। এক মাস ধরে আয় নেই। ফলে উপজেলার দলিল লেখকদের অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। অবিলম্বে তাদের এই বিরোধের অবসান চান দলিল লেখকরা।

সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান জানান, ওই সাব রেজিষ্ট্রারের অপসারনসহ ৭ দফা দাবিতে তারা গত এক মাস যাবত আন্দোলন করছেন। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তসহ তাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন।

বোচাগঞ্জ উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রার গোলাম মোর্ত্তজা জানান, অযৌক্তিক দাবি মেনে না নেওয়ায় দলিল লেখকরা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন। দলিল লেখকরা ফি’র অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতো, বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম করতে চাপ প্রয়োগ করতো। তাদের এসব দাবির বিরুদ্ধে তিনি কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। তাদের এসব বিষয়গুলো উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অচিরেই এসব সমস্যার সমাধান হবে বলে জানান তিনি।

(এটি/এএস/০২ মার্চ, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০২ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test