E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

মির্জাপুরে অনুমোদনহীন ইট ভাটা, কমে যাচ্ছে ফসলের উৎপাদন

২০১৭ জানুয়ারি ২০ ১৬:৩৯:৩৫
মির্জাপুরে অনুমোদনহীন ইট ভাটা, কমে যাচ্ছে ফসলের উৎপাদন

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া ইউনিয়নের কড়াইল গ্রামে কে আর বি ব্রিকসে অনুমোদন ছাড়াই দীর্ঘ নয় বছর যাবত আবাদী জমি ও বসত বাড়ির পাশে ইট তৈরি করে পোড়ানো হচ্ছে। তাও আবার কয়রার পরিবর্তে কাঠ পুড়ানো হচ্ছে। ভাটার কালো ধোঁয়ায় আবাদী জমির ফসলও ভাল হচ্ছে না বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।

স্থানীয় প্রভাবশালী কাজী নাজমুল আলম ঈগল ও তাঁর শ্যালক নাগরপুর উপজেলার শহিদুল ইসলাম ভাটাটি চালাচ্ছেন। অনুমোদন ছাড়া ভাটাটির বিরুদ্ধে স্থানীয় ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী, কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ছাড়া আবাসিক এলাকা থেকে ১ কিলোমিটার এবং ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক থেকে অন্তত আধা কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। একদিকে অনুমোদনহীন, অপরদিকে আইন লঙ্ঘন। এ অবস্থায় ওই দুজন দীর্ঘ নয় বছর ধরে ভাটাটি চালাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই ইটভাটার আশেপাশে কমপক্ষে শতাধিক পরিবারের বসবাস। চারপাশে রয়েছে আবাদী জমি। ইতিমধ্যে ভাটার পাশের জমিতে ধানের চারা রোপন শুরু হয়েছে। এছাড়া রয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সড়ক। সড়কটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার কদিমধল্যা থেকে মহেড়া পুলিশ টেনিং সেন্টার ও পার্শ্ববর্তী বাসাইল উপজেলা সদরের সাথে সংযুক্ত। সড়কটি দিয়ে মোটর সাইকেল ও সিএনজি চালিত অটোরিকশাসহ প্রতিদিন কমপক্ষে তিন হাজার যানবাহন চলাচল করে বলে শ্রমিকেরা জানান। ভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে আশেপাশের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অনুমোদন ছাড়াই নয় বছর ধরে ভাটাটি চললেও বিষয়টি এলাকার কেউই জানেননা।

ভাটার পাশের বাড়িতে বসবাসকারী মফিজ মিয়া (৫০) জানান, কালো ধোঁয়ার কারণে প্রতিবছরই গাছের ফল নষ্ট হয়ে যায়। টিনের চালে মরিচা ধরেছে। তাছাড়া আবাদী জমিতে ফসলও ভাল হয় না।

পাশেই একটি চায়ের দোকান রয়েছে। দোকানের মালিক সাইদুর রহমান (৫৫) বলেন, ‘ভাটার অনুমোদন আছে কিনা তা আমাদের জানা নেই। সুপারি গাছে সুপারি থাকছেনা। কাউকে কিছু বইল্যাও লাভ অয়না। এলাকার লোক চালায়। ত্যাই কষ্ট সহ্য কইরা থাকি।

এলাকার কয়েকজন বলেন, ভাটায় ইট পোড়ানোর কারণে তাদের আবাদী জমিতে ধান ও সরিষার উৎপাদন কমে গেছে। বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের একাধিকবার বলার পরও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক (ডিসি) এর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানান, ওই ভাটার কোন অনুমোদন নেই। ভাটার মালিক কাজী নাজমুল আলম ঈগল বলেন, ‘ডিসি অফিসে আবেদন করেছি। কিন্তু অনুমোদন দেয়না। ডিসি অফিসে এল আর ফান্ডে টাকা জমা দেয়া হয়েছে। প্রতিবছরই টাকা দিতে হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। ভাটায় কয়লার বদলে কাঠ পুড়ান কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গতবারের চেয়ে এ বছর কয়লার দাম বাড়তি। আগুনের তাপ বাড়ানোর জন্য কিছু কাঠ পুড়ানো হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

পরিবেশ অধিদপ্তর টাঙ্গাইলের উপপরিচালক আমিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ওই ভাটার বিষয়ে তিনি কিছু জানেননা। সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন।

(এমএনইউ/এএস/জানুয়ারি ২০,২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৭ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test