E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

তলিয়ে গেছে কক্সবাজার, দুর্ভোগে লক্ষ মানুষ

২০১৭ জুন ১৩ ১২:৪৭:২৮
তলিয়ে গেছে কক্সবাজার, দুর্ভোগে লক্ষ মানুষ

কক্সবাজার প্রতিনিধি : দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না কক্সবাজারবাসীর। গত ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় মোরা’র আঘাত থেকে উঠে দাঁড়ানোর আগেই আরেক মৌসুমি নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজারজুড়ে দমকা ও ঝড়োহাওয়া বইছে। গতকাল রবিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া থেমে থেমে বর্ষণ তলিয়ে গেছে শহর-গ্রামের রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গাছপালা উপড়ে পড়েছে, উড়ে গেছে কাঁচা ঘরবাড়ির চাল। সাগরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়েছে জোয়ারের পানি। এতে প্লাবিত হচ্ছে উপকূলের গ্রামের পর গ্রাম। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে কক্সবাজারের লাখো মানুষ।

ঝড়ো ও দমকা হাওয়ায় গাছপালা ভেঙে পড়ে বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ যোগাযোগ। ফলে রবিবার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা শহর ছাড়া কক্সবাজারের বিশাল এলাকা অন্ধকারে রয়েছে। বিদ্যুতের অভাবে রবিবার রাতে কক্সবাজার থেকে স্থানীয় কোনো পত্রিকা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।

অন্যদিকে ঝড়োহাওয়ার কবলে পড়ে সাগরের কক্সবাজার উপকূলে ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই জেলে নিখোঁজ হয়েছেন। এ ঘটনায় ভাসমান অবস্থায় ১২ জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার ভোররাতে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে এ ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে।

নিখোঁজরা হলেন ট্রলারের মাঝি বেলাল উদ্দিন (৪৫) ও তার সহযোগী জেলে লেমন রাখাইন (৪০)।

জেলেদের উদ্ধৃতি দিয়ে ট্রলারটির মালিক জসিম উদ্দিন জানান, আকস্মিক ঝড়োহাওয়ার কবলে কক্সবাজার উপূলের লাবণী পয়েন্ট চ্যানেলের গভীর সমুদ্রে ট্রলারটি ডুবে যায়। এতে মাঝিসহ দেই জেলে নিখোঁজ হন। বাকি ১২ জেলে ট্রলারের ভাঙা অংশ ধরে ভাসতে ভাসতে ডায়বেটিকস পয়েন্ট আসেন। তাদের স্থানীয় লোকজন মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে।

এরা হলেন- রবি দাস (৫০), মাকন দাস (৪৫), বিশ্বজিত দাস (২৮), লক্ষীপদ দাস (৪৫), ফিরুরা দাস (৩৮), নেপাল দাস(২৫), চরন দাস (২৪), সুদীর দাস (৩০), তুফান দাসসহ (৫০) আরও দুজন। তারা সবাই চকরিয়ার পহরচাঁদার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ জানান, ইতোমধ্যে ১২ জেলে কূলে ফিরে এসেছে। বাকি দুজনকে উদ্ধারে নৌ-বাহিনী ও জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক জানান, রবিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার বেলা ৩টা পর্যন্ত ২১ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ১২১ মিলিমিটার। মৌসুমি নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। রোববার সকাল থেকে থেমে থেমে ঘণ্টায় ৫০-৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা ও ঝড়োহাওয়া বইছে। পূর্ণিমা তিথি ও বাতাসের কারণে সাগরে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বাড়ছে।

সদর উপজেলার পোকখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক আহমদ ও গোমাতলী উপনিবেশ সমবায় সমিতির সভাপতি সেলিম উদ্দিন বলেন, পূর্ণিমা তিথির জোয়ারে পানি বেড়ে রোববার দিবাগত রাতে গোমাতলীর বেড়িবাঁধে ৪৪ একর ঘোনার ৮ নম্বর স্লুইস গেট এলাকায় বিশাল অংশ ভাঙনের কবলে পড়েছে।

গত বছর রোয়ানুর কবলে ৬ নম্বর স্লুইস গেট এলাকার ভাঙনটি এখনও মেরামত হয়নি। তার ওপর রবিবার রাতের ভাঙন ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। দুটি ভাঙন দিয়েই জোয়ারের পানি ঢুকে পুরো বৃহত্তর গোমাতলীর ৮ গ্রাম পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি। ফলে রমজানে ইফতার ও সেহরি নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পানিবন্দি লোকজন।

অন্যদিকে রাতে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় মিঠাপানির নদীতে পাহাড়ি ঢল নেমেছে। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় পাশে পটিয়া, চন্দনাইশ, দোহাজারি, কেরানিহাট, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চুনতি, চকরিয়া, পেকুয়া, ডুলাহাজারা, খুটাখালী, ঈদগা, কালিরছড়া, রশিদনগর, জোয়ারিয়ানালা, রামুসহ বৃষ্টির পানিতে থৈ থৈ করছে সমতলের বিস্তীর্ণ এলাকা।

বৃষ্টি ও ঝড়োহাওয়ায় ভোগান্তিতে রয়েছে জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও সদরের নিম্নাঞ্চলের লোকজন। মোরা’র ক্ষত শুকানোর আগেই আবারও ঝড়ো বাতাসের কবলে পড়েছে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসীও।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, প্রবল বর্ষণ হচ্ছে। নদী ও সবখানে পানি বেড়ে যাওয়ায় নিচু এলাকার বাসাবাড়ি প্লাবিত হচ্ছে। ইউএনওদের দুর্যোগ মোকাবেলায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, ভারী বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলায় ফের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি থেমে গেলে নদী ও সাগরের কিনারের বেড়িবাঁধ মেরামতে হাত দেয়া হবে।

(ওএস/এসপি/জুন ১৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০১ নভেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test