E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

শিরোনাম:

ঐতিহাসিক জাহাজ মারা দিবস আজ

২০১৭ আগস্ট ১১ ১২:৩৪:০২
ঐতিহাসিক জাহাজ মারা দিবস আজ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : আজ ১১ আগস্ট ঐতিহাসিক জাহাজ মারা দিবস। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবোজ্জল ঘটনা ঘটে আজকের এই দিনে। অত্যাধুনিক মরণাস্ত্র, গোলাবারুদ, জ্বালানি ও রসদ বোঝায় সাতটি যুদ্ধ জাহাজ নারায়নগঞ্জ, ঢাকা সদর ঘাট, ধলেরশ্বরীর যমুনা নদী দিয়ে সিরাজগঞ্জ হয়ে বিখ্যাত ফুলছড়ি ঘাটের মাধ্যমে বৃহত্তর উত্তরবঙ্গ রংপুর, দিনাজপুর, সৈয়দপুরসহ সিমান্তবর্তী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের ঘাটিতে পৌঁছানোর পরিকল্পনা ছিল।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৭১ সালের এ দিনে টাঙ্গাইলের যমুনা ও ধলেশ্বরী নদী পথে ভূয়াপুর উপজেলার মাটিকাটা নামক স্থানে এসে পৌঁছায় জাহাজগুলো। এ নদী পথের নজরদারীর দায়িত্বে ছিলেন কাদেরিয়া বাহিনীর চৌকশ কমান্ডার মেজর হাবিবুর রহমান বীর বিক্রম। অত্যন্ত দুরদর্শিতা আর অল্প সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এসটি রাজন ও ইউএস ইঞ্জিনিয়ার এলসি-৩ দুটি অস্ত্রবোঝায় জাহাজ ধ্বংস করার মাধ্যমে পাক হানাদারদের সেই পরিকল্পনা নস্যাৎ করেন তিনি।

জাহাজগুলেতো আক্রমণ ও ধ্বংস করে ১ লাখ ২০ হাজার বাক্স অস্ত্র-শস্ত্র ও গোলা-বারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে আনেন। তৎকালীন সময়ে যার মূল্য ছিল ২১ কোটি টাকা। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বাংলাদেশের অন্য কোথাও এতবড় ক্ষতি ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়নি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে।

পরবর্তীতে মুক্তিবাহিনীর ছিনিয়ে নেয়া যুদ্ধ জাহাজ ও অস্ত্র-শস্ত্র উদ্ধার করার জন্য পাকিস্তানি কমান্ডের লে. জেনারেল আমীন আব্দুল্লা খান নিয়াজী ও বিগ্রেডিয়ার কাদের খানের নেতৃত্বে ৪৭ ব্রিগেড, ৫১ কমান্ডো ব্রিগেড ও হানাদার বিমান বাহিনী দুটি এফ-৮৬ স্যাবর জেট বিমান দ্বারা মুক্তিবাহিনীদের উপর আক্রমণ চালানো হয়। কিন্তু হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে গড়ে তোলা প্রতিরোধের মুখে পিছু হঁটতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি বাহিনী।

স্বাধীন বাংলাদেশ আর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই যুদ্ধটিকে পট পরিবর্তনকারী এক অধ্যায়ন হিসেবে গণ্য করা হয়। কমান্ডার হাবিবুর রহমানের অসীম, বলিষ্ঠ আর সাহসী নেতৃত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম ও জাহাজ মারা হাবিব উপাধীতে ভূষিত করেন।

এ নিয়ে ভূয়াপুর উপজেলা মুক্তিযুদ্ধ ইউনিট কমান্ডের কমান্ডার আব্দুল মজিদ মিয়া বলেন, মেজর হাবিবুর রহমান বীর বিক্রমের নেতৃত্বে আমরা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জাহাজ দুটিতে আক্রমণ চালাই। আক্রমণে আমরা সফল হই। এই জাহাজ দুটি ধ্বংস না করা গেলে আমরা ৯ মাসে স্বাধীনতা পেতাম না। মাটি কাটার এ যুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভটি সংরক্ষণ এবং সরকারিভাবে এই দিবসটি পালনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা গবেষক ও লেখক শফি তরফদার বলেন, কাদেরিয়া বাহিনী কোম্পানি কমান্ডার ও মেজর হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১১ আগস্ট জাহাজ দুটি ধ্বংস করে প্রায় ২১ কোটি টাকার অস্ত্র-শস্ত্র উদ্ধার করে মুক্তিযোদ্ধারা। এটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা।

উল্লেখ্য, হাবিবুর রহমান পাকিস্তানী সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি পাকস্তানী সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে এসে কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগদান করেন। দুঃসাহসিকতায় তিনি এ কাদেরিয়া বাহিনীর মেজর উপাধী লাভ করেন। জাহাজ মারা হাবিব উপাধীতে ভূষিত হাবিবুর রহমান বীর বিক্রম ১৯৯৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর নিজ বাসভবন ঘাটাইল উপজেলার জামুরিয়া ইউনিয়নের সাধুরগলগন্ডা গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন।

(ওএস/এসপি/আগস্ট ১১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০২ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test