E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

টাঙ্গাইলে ভুল অপারেশনে গৃহবধূর মৃত্যু, দু’লাখ টাকায় রফা

২০১৭ আগস্ট ১৩ ২১:১৫:৫০
টাঙ্গাইলে ভুল অপারেশনে গৃহবধূর মৃত্যু, দু’লাখ টাকায় রফা

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইল শহরের সরকারি কুমুদিনী কলেজ সংলগ্ন মুন জেনারেল হাসপাতালে গলব্লাডার স্টোন অপসারণে ভুল অপারেশন করায় সুমি (২২) নামে এক হতদরিদ্র গৃহবধূর করুণ মৃত্যু হয়েছে। পরে দু’লাখ টাকায় ঘটনাটি মিমাংসা করা হয়েছে বলে জানাগেছে। সুমি গোপালপুর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের শাহীন মিয়ার স্ত্রী। নিহত সুমির দেড় বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। এ ঘটনার পর চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আত্মগোপণে চলে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ মিছিলের প্রস্তুতি নিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

জানা যায়, গত ৯ আগস্ট(বৃহস্পতিবার) রাত সোয়া ৮টার দিকে টাঙ্গাইল শহরের কুমুদিনী কলেজ সংলগ্ন মুন জেনারেল হাসপাতালে গলব্লাডারের স্টোন অপারেশন করার জন্য হতদরিদ্র গৃহবধূ সুমিকে(২২) ভর্তি করা হয়। পরের দিন ১০ আগস্ট (শুক্রবার) সকালে রোগীর অভিবাবকদের অনুপস্থিতিতে ডাক্তার ফরিদ আহমেদ অপারেশন করেন। অপারেশনে রোগীকে অ্যানেস্থেসিয়া করেন ডাক্তার এনকে আলম।

অপারেশনের পর পরই রোগীর রক্ত চাপ কমতে শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে সুমি মারা যায়। রোগীর মৃত্যুর খবর গোপন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত রোগীকে একটি অ্যাম্বুুলেন্সে করে মির্জাপুর কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে। মির্জাপুর হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক সুমিকে মৃত ঘোষণা করেন।

মির্জাপুর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, এ রোগী অপারেশনের পর পরই মারা গেছে।

সুমির বাবা বাদশা মিয়া জানান, তার মেয়েকে হাসপাতালের ডাক্তাররাই মেরে ফেলেছে। তারা দোষ এড়ানোর জন্য কাছের টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে না পাঠিয়ে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে পাঠায়। তিনি মেয়ে হত্যার বিচার দাবি করেন।
সুমির স্বামী শাহীন মিয়া বলেন, মুন জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা ‘ডাক্তার’ নন, তারা কসাই। তিনি স্ত্রী হত্যার বিচার চান।

নিহত সুমির ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয় জানান, সারা জেলায় মুন হাসপাতালের দালাল রয়েছে। দালালরা রোগীদের নানাভাবে বুঝিয়ে মুন হাসপাতালে নিয়ে আসে। দালালরা ৩০% থেকে ৫০% কমিশনের বিনিময়ে রোগীদের ওই হাসপাতালে নিয়ে আসে বলেও তিনি জানান। এজন্য অন্যান্য ক্লিনিকের চেয়ে মুন হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ অনেক বেশি।

এ বিষয়ে অপারেশনকারী চিকিৎসক ডা. ফরিদ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমি অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে অপারেশন সম্পন্ন করেছি। কিন্তু কেন এটা হলো আমি বলতে পারবো না।

অ্যানেস্থেসিয়াসিস্ট ডা. এনকে আলম বলেন, মেয়েটির চিকিৎসায় কোন ত্রুটি রাখা হয়নি। ডা. ফরিদ আহমেদ সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে অপারেশন সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু রোগী মারা যাওয়ার বিষয়টি আমরা বুঝতে পারছি না।

মুন জেনারেল(প্রা.) হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মালেকা শফি (মঞ্জু) বলেন, দুই লাখ টাকা মেয়েটির মামাকে দিয়েছি। সকল জায়গায় টাকা দিয়ে ঘটনার মিমাংসা করেছি।

টাঙ্গাইল জেলা ক্লিনিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনম বজলুর রশিদ রিপন বলেন, আমি শুক্রবার ঢাকায় একটি মিটিংএ ছিলাম। আমি দুঃখজনক ঘটনাটি শুনেছি।

টাঙ্গাইল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নাজমুল হক ভূঁইয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ঘটনায় থানায় কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

(আরকেপি/এএস/আগস্ট ১৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৮ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test