বরিশালে জমে উঠেছে তরমুজের বাজার

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : গত বছরের তুলনায় কিছুটা বিলম্বে হলেও অবশেষে বরিশালে জমে উঠতে শুরু করেছে তরমুজের বাজার। দিনে দিনে আড়তগুলোতে তরমুজের আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর প্রথমদিকের বাজার হওয়ায় চাষীরাও বেশ ভাল মূল্য পাচ্ছেন।

এদিকে সময় যতো যাবে হাট-বাজারগুলোতেও রসালো তরমুজের আমদানি ততো বাড়তে থাকলে বাজার দর পরে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে চাষিদের। তবে ফলন ভালো হওয়ায় এই মুহুর্তে লোকসানের শঙ্কার কথা মাথায় আনছেন না চাষীরা।

ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, জেলার মেহেন্দীগঞ্জ, টুঙ্গিবাড়িয়া, বুখাইনগর, ভোলার চরফ্যাশন, চরকাজী, লালমোহন, পটুয়াখালীর গলাচিপা, রাঙাবালিসহ বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপক হারে তরমুজের চাষ হয়েছে। এসব এলাকার তরমুজের কদর রয়েছে গোটা দেশজুড়ে। এরইমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্নস্থানের তরমুজ বরিশাল থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে যেতেও শুরু করেছে।

নগরীর পোর্টরোড এলাকার পাইকারী বাজার কেন্দ্রীক ফলের বিশাল বাজার। এর পাশাপাশি বর্তমান মৌসুমে নিষেধাজ্ঞার কারণে নদীতে ইলিশ ধরা বন্ধ রেখেছেন জেলেরা। আর তাই দখিনের জনপদের মাছের আড়ৎ কিংবা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রগুলোতে তেমন একটা মাছের দেখা মিলছেনা। বিশেষ করে ইলিশ নির্ভর বরিশালের পোর্টরোডের একমাত্র মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি দিনের বেশিরভাগ সময়ই অনেকটা মাছবিহীন সময় কাটাচ্ছে। এ সুযোগে মৎস্য ব্যবসায়ীরা তাদের আড়তগুলোতে তরমুজের ব্যবসা শুরু করেছেন।

পোর্টরোড বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার একমাত্র সচল ও বৃহৎ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটির বেশিরভাগ আড়ৎ মাছশুন্য অবস্থায় রয়েছে। পুরো বাজারজুড়েই অনেকটা নিরবতা বিরাজ করছে। তবে এরইমধ্যে কিছু কিছু আড়তদারের আড়তে মাছের বদলে নৌকাসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে গ্রামগঞ্জের তরমুজ আসতে শুরু করেছে। সাথে সাথে তরমুজ বাছাই, ওঠানো-নামানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা।

অবতরণ কেন্দ্রের মৎস্য ব্যবসায়ী (আড়তদার) মোঃ আইয়ুব আলী জানান, ইলিশের অভয়াশ্রম কর্মসূচির আওতায় গত ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ইলিশ ও জাটকা ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আর এ সময়ে বরিশালের একমাত্র অবতরণ কেন্দ্রটিতে তেমন একটা মাছের চাঁপ থাকেনা। তাই এ পুরো মৌসুমজুড়েই তিনিসহ এখানকার আড়তদাররা তরমুজের ব্যবসা করে থাকেন।

আইয়ুব আলী বলেন, গত সপ্তাহখানেক ধরে বরিশালে তরমুজ আসতে শুরু করেছে। দিনে দিনে এর পরিমাণ বাড়ছে। বর্তমানে বাজারে বিট ফ্যামিলি, জাম্বু জাগুয়া, ড্রাগন নামক তরমুজ বেশি আসছে। যার আকার বা ওজন অনুয়ায়ী প্রতি একশ’ ৮ থেকে ১৭ হাজার টাকায় পাইকারী বিক্রি হচ্ছে। সুমন হোসেন নামের অপর আড়তদার বলেন, বর্তমানে আমদানি কম হওয়ায় তরমুজের দর একটু বেশি। আমদানি বাড়লে দর কিছুটা কমে যাবে। তবে গরম বাড়লে চাহিদা বেড়ে গেলে এর বিপরীতও হতে পারে।

চরফ্যাশনের চাষী জাকির হোসেন বলেন, আমদানি বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়া কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। এবার তরমুজের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। গত বছর অতিরিক্ত ও শীলা বৃষ্টির কারণে অনেক ক্ষেত নষ্ট হয়ে চাষীদের লোকসান হয়েছিলো। এবার সে ধরনের কোনো বিপদ এখনো হয়নি। ইসমাইল হোসেন নামের আরেক চাষী জানান, গতবছরের মতো অতিবৃষ্টি না হলে এবারে যে ফলন হয়েছে তাতে ভালো লাভ করতে পারবেন।

পাইকারী ব্যবসায়ী শান্ত মিয়া জানান, বাজার জমে না উঠলেও এরইমধ্যে চরফ্যাশন, বাকেরগঞ্জ, মেহেন্দীগঞ্জ থেকে বরিশালে তরমুজ আসতে শুরু করেছে। যা বরিশাল থেকে কুষ্টিয়া, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পাঠানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, সড়ক পথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রলারভর্তি করে বরিশাল পোর্টরোডের পাইকারী বাজারে আসছে রসালো তরমুজ। আনা-নেয়ায় ব্যয় কিছুটা কম হওয়ার পাশাপাশি নদী তীরবর্তীস্থানে জায়গা বড় হওয়াসহ সার্বিক সুযোগ-সুবিধার কারণেই বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডকে বেঁছে নিয়েছেন স্থানীয় চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

(টিবি/এসপি/মার্চ ২৪, ২০১৮)