E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

ব্যাংকিং খাত

সূচক সন্তোষজনক না হলেও বাড়ছে এমডিদের বেতন

২০১৪ এপ্রিল ২২ ১৮:৩৩:৩৮
সূচক সন্তোষজনক না হলেও বাড়ছে এমডিদের বেতন

স্টাফ রিপোর্টার : দেশের আর্থিক খাত ২০১২ ও ২০১৩ সালে ভালো যায়নি। ২০১২ সালে ব্যাংকের প্রধান প্রধান সূচক যেমন নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল), রিটার্ন অন অ্যাসেট ও রিটার্ন অন ইকুইটি ছিল অবনতির দিকে। সার্বিকভাবে সে বছর ব্যাংকিং খাতের মুনাফাও কম হয়েছে।

২০১৩ সালে ঋণ নীতিমালায় ব্যাপক ছাড় দেয়ার পরও মুনাফার অঙ্কে ২০১১ সালের অবস্থায় ফিরতে পারেনি খাতটি। তবে ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) বেতন বেড়েছে নিয়মিত। কারো কারো ক্ষেত্রে বেতন বৃদ্ধির হার ২৫ থেকে ৫০ ভাগ। কারো কারো ক্ষেত্রে বেড়েছে শতভাগ। যদিও প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সন্তোষজনক না হলে প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের বেতন সমন্বয় করার রেওয়াজ চালু রয়েছে বিশ্বব্যাপী।

এদিকে নতুন ব্যাংক কোম্পানি আইনে ব্যাংকের আর্থিক সূচক ক্যামেলসে উন্নতি ছাড়া এমডির বেতন না বাড়ানোর বিষয়টি যুক্ত হয়েছে। ফলে ঢালাওভাবে এমডিদের বেতন বাড়ানোর বিষয়টি বন্ধ হবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ব্যাংক উদ্যোক্তারাও।

ইস্টার্ন ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে এমডি সংকটের কারণেই তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। তবে ব্যাংকে ‘রিওয়ার্ড অ্যান্ড পানিশমেন্ট’ নীতি থাকা প্রয়োজন। বেতন বাড়বে না কমবে— এ নীতিতেই তা নির্ধারণ হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, বর্তমান বাজার বিবেচনায় ব্যাংকের এমডিকে অনেক বেশি দক্ষ ও আত্মবিশ্বাসী হওয়া প্রয়োজন। সে দিক বিবেচনায় তাদের সুবিধার বিষয়টিও ভাবতে হবে। তবে আর্থিক সূচকের উন্নতি ছাড়া এমডিদের বেতন বাড়ানো যাবে না, নতুন আইনে বিষয়টির সংযুক্তি নিঃসন্দেহে প্রশংসার।

আইএমএফের তথ্যমতে, ২০১০ সালে খাতটিতে রিটার্ন অন ইকুইটির হার ছিল ২১ শতাংশ, ২০১১ সালে যা কিছুটা কমে হয় ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১২ সালে তা আরো কমে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ২ শতাংশ। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ক্ষেত্রে এ হার ২০১০ সালে ২০ দশমিক ৯ থাকলেও ২০১২ সালে কমে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ২ শতাংশ।
সম্পদের বিপরীতে কী হারে মুনাফা হচ্ছে, তা বোঝা যায় রিটার্ন অন অ্যাসেটের মাধ্যমে। ২০১০ সালে এ হার ছিল ১ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১২ সালে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র দশমিক ৬ শতাংশে। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ক্ষেত্রে ২০১০ সালে এ হার ছিল ২ দশমিক ১ ও ২০১২ সালে যা কমে দাঁড়ায় দশমিক ৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, আইসিবি ইসলামিক ও নতুন ব্যাংকগুলো বাদে বিদ্যমান ২৮টি বেসরকারি ব্যাংকের নেট মুনাফা ছিল ২০১১ সালে ৫ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। ২০১২ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৭৪ কোটি টাকায়। ২০১৩ সালে ঋণ নীতিমালায় ব্যাপক ছাড় দেয়ার পরও মুনাফা স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি। এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০১৩ হিসাব বছরে এবি, এনসিসি, ইসলামী, প্রাইম, সোস্যাল ইসলামী, ডাচ্-বাংলা, স্ট্যান্ডার্ড, এক্সিম, প্রিমিয়ার ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের নেট মুনাফা ২০১২ সালের তুলনায় কমেছে। আবার ২০১১ সালের তুলনায় গত বছর কমেছে পূবালী, আইএফআইসি, ইউসিবিএল, সিটি, এনসিসি, প্রাইম, ঢাকা, ডাচ্-বাংলা, মার্কেন্টাইল, স্ট্যান্ডার্ড, ওয়ান, ব্যাংক এশিয়া, যমুনা ও ব্র্যাক ব্যাংকের।

তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে দ্য সিটি ব্যাংকের মুনাফা ছিল ২০৫ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে তা নেমে এসেছে ৯২ কোটি টাকায়। একই সময়ে এবি ব্যাংকের মুনাফা ১৩৯ কোটি থেকে কমে ৯৬ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক ৬১১ থেকে ২০৬ কোটি, এনসিসির ২২৩ থেকে ১১৯ কোটি, প্রাইম ৩৭১ থেকে ২০৩ কোটি, ব্যাংক এশিয়া ২০৪ থেকে ১৩৩ কোটি, যমুনা ১৩৫ থেকে ১২১ কোটি ও ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা ১৭৭ থেকে কমে হয়েছে ১৪১ কোটি টাকা।

অথচ ব্যাংকগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এমডি এএএম জাকারিয়ার মাসিক বেতন হয়েছে সব মিলিয়ে ১২ লাখ টাকা। যদিও ২০১২ সালের জানুয়ারিতে তিনি পেতেন ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বর্তমানে তিনিই সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিকধারী এমডি।

ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার সব মিলিয়ে পাচ্ছেন মাসে ১১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে তিনি পেতেন ৯ লাখ টাকা।
দ্য সিটি ব্যাংকের এমডি সোহেল আরকে হুসেইন প্রতি মাসে নিচ্ছেন ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকটির সে সময়কার এমডি কে মাহমুদ সাত্তার নিতেন ৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।

এবি ব্যাংকের এমডি শামীম আহমেদ চৌধুরী ও ঢাকা ব্যাংকের নিয়াজ হাবিব দুজনই নিচ্ছেন প্রতি মাসে ১০ লাখ টাকা করে। যদিও ২০১২ সালের জানুয়ারিতে এ দুই ব্যাংকের তত্কালীন এমডিরা বেতন পেতেন যথাক্রমে ৫ লাখ ও ৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা করে।

আইএফআইসির এমডি শাহ আলম সারওয়ার, ইউসিবিএলের মোহাম্মদ আলী ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শফিক বিন আবদুল্লাহ বর্তমানে বেতন নেন মাসে ৯ লাখ টাকা করে। ২০১২ সালে তখনকার এমডিরা পেতেন যথাক্রমে ৪ লাখ ৫০ হাজার, ৮ লাখ ২০ হাজার ও ৭ লাখ টাকা।

এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক এমডি সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার বলেন, প্রধান আর্থিক সূচক উন্নতির ভিত্তিতেই এমডিদের বেতন নির্ধারণ হওয়া উচিত। সারা বিশ্বেই এমনটি হয়। যারা ভালো করবেন তাদের বেতন বাড়বে আর যারা খারাপ করবেন তাদের কমে যাবে। তবে বেতন বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যাংক পর্ষদকে বাজার বাস্তবতা বিবেচনায় নেয়াটাও জরুরি।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে দক্ষ এমডি সংকটে আছে ব্যাংক খাত। নতুন করে নয়টি ব্যাংক কার্যক্রমে আসা ও একসঙ্গে অর্ধডজন এমডির অবসরে যাওয়ায় এ সংকট প্রকট হয়েছে। এসব কারণে ব্যাংক উদ্যোক্তারা অনেকটা বাধ্য হয়ে মাত্রাতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিচ্ছেন এমডিদের। বর্তমানে ব্যাংকের এমডি পদে নিয়োগের জন্য ১৫ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা এবং এমডির পূর্ববর্তী পদে কমপক্ষে দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। সংশোধিত নতুন আইনে ব্যাংকের প্রধান আর্থিক সূচক ক্যামেলসের উন্নতি না হলে প্রধান নির্বাহী পদে বার্ষিক বেতন বাড়ানো যাবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আগের আইনে প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধির সুবিধা ছিল।

ব্যাংকগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতি মাসে ৮ লাখ টাকা করে নিচ্ছেন পূবালী ব্যাংকের এমডি হেলাল আহমেদ চৌধুরী, ন্যাশনাল ব্যাংকের শফিকুর রহমান, এনসিসির গোলাম হাফিজ মোহাম্মদ, প্রাইম ব্যাংকের এহসান খসরু, মার্কেন্টাইলের এহসানুল হক, ওয়ান ব্যাংকের ফখরুল আলম, ব্যাংক এশিয়ার মেহমুদ হোসেইন, শাহজালাল ব্যাংকের ফরমান আর চৌধুরী ও ব্র্যাক ব্যাংকের সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। এছাড়া মিউচুয়াল ট্রাস্টের এমডি আনিস এ খান নিচ্ছেন প্রতি মাসে ৭ লাখ ৮২ হাজার টাকা। সাড়ে ৭ লাখ টাকা করে নিচ্ছেন যমুনা ব্যাংকের শফিকুল আলম, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের শফিকুর রহমান ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের মাজেদুর রহমান। ট্রাস্ট ব্যাংকের ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী নিচ্ছেন ৭ লাখ ২৫ হাজার এবং ডাচ্-বাংলার শামসী তাবরেজ ও স্ট্যান্ডার্ডের নাজমুস সালেহীন নিচ্ছেন ৭ লাখ টাকা করে।

এর বাইরে সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডি সহিদ হোসেন ও এক্সিম ব্যাংকের হায়দার আলী মিয়া নিচ্ছেন মাসে সাড়ে ৬ লাখ টাকা। আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের হাবিবুর রহমান ও উত্তরা ব্যাংকের এমডি শেখ আবদুল আজিজ নিচ্ছেন ৬ লাখ টাকা। যদিও ইসলামী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ আবদুল মান্নান প্রতি মাসে নেন সাড়ে ৫ লাখ টাকা।
এমডিদের বেতনের দিক দিয়ে খানিকটা পিছিয়ে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। বেসিক ব্যাংকের এমডি কাজী ফখরুল ইসলাম নিচ্ছেন মাসে ৪ লাখ, বিডিবিএলের এমডি জিল্লুর রহমান ২ লাখ, সোনালীর এমডি প্রদীপ কুমার দত্ত ৪ লাখ, জনতার এমডি এসএম আমিনুর রহমান সাড়ে ৩ লাখ ও অগ্রণী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ আবদুল হামিদ সাড়ে ৩ লাখ টাকা।

(ওএস/এটি/এপ্রিল ২২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test