E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

গোঁজামিলে বাজেটে সংখ্যাগরিষ্ঠদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখা যায় না

২০২২ মার্চ ২৬ ১৬:৩১:৫৩
গোঁজামিলে বাজেটে সংখ্যাগরিষ্ঠদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখা যায় না

স্টাফ রিপোর্টার : সাম্রাজ্যবাদীদের চাপিয়ে দেওয়া মুক্তবাজার অর্থনীতির দর্শনের কল্যাণে জাতীয় বাজেট এখন সম্পদ জোর দখলকারী, দুর্বৃত্ত, লুটেরা, আত্মসাৎকারী, ফাউ-খাওয়া শ্রেণি, দুর্নীতিবাজ ও ফাটকাবাজ গোষ্ঠীর তোষণ আর পোষণে পরিণত হয়েছে। আর এ কারণেই অর্থ-বিত্ত-ক্ষমতাসহ সর্বোচ্চ সম্ভাবনা থাকলেও আঞ্চলিক বৈষম্যের অবসান হয় না।

শুক্রবার (২৫ মার্চ) বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ‘বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২২-২৩ প্রস্তুতি আলোচনা: সিলেট অঞ্চলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনাসভায় এ কথা বলেন বক্তারা। তারা বলেন— ঘাটতি, অস্বচ্ছতা ও গোঁজামিল দিয়ে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য প্রণীত জাতীয় বাজেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আকাঙ্ক্ষার কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের সভাপতিত্বে আলোচনায় সিলেট বিভাগের চারটি জেলার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী, আইনজ্ঞ, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতারা, মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন ও সাংস্কৃৃতিককর্মী, সাংবাদিক নেতারাসহ নানা শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি আঞ্চলিক সমস্যা ও সম্ভাবনার আলোকে বিকল্প বাজেটে অন্তর্ভুক্তির তাদের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন— রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনীতি এখন রেন্ট সিকার গোষ্ঠীর দাসে পরিণত হয়েছে। ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশে আবারও বৈষম্যমূলক দ্বৈত-অর্থনীতি পাকাপোক্ত রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে জাতীয় নীতি ও বাজেট প্রণয়নকারীদের চিন্তা ও স্বদেশপ্রেমের দীনতা। টানা ২৮ বছরসহ ৪৮টি জাতীয় বাজেটের মধ্যে ৩০টি উপস্থাপনকারী সিলেটে অঞ্চলের তিনজন অর্থমন্ত্রী এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ও বৈদেশিক মুদ্রার প্রাচুর্য থাকলেও কৃষি খাতের মাধ্যমে এ বিভাগের গ্রামীণ পরিবারের বার্ষিক আয় দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম—৬৩ হাজার ৪২১ টাকা, অথচ কৃষিযোগ্য জমির ৫৫ শতাংশই অনাবাদি পড়ে থাকে। এখানে ৪৯ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশু প্রসবের হার মাত্র ৩৮ শতাংশ, জন্মের সময় শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হারও দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় সিলেটের মানুষের যতটুকুই উন্নয়ন হয়েছে, তা সম্পূর্ণই প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে। বাজেট প্রণয়নে কালোটাকা ও অর্থপাচার বন্ধ করে সৎ কর্মকাণ্ড, বিনিয়োগবান্ধব কর্মকৌশল, আমলতান্ত্রিক জটিলতা কমানো, স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থাপনা ও সুষম আঞ্চলিক উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া হলে বিভিন্ন সূচকে পিছিয়ে থাকা অঞ্চলগুলোর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন অনেক আগেই বাস্তবরূপ পেতো।

সভায় সিলেট অঞ্চলের বক্তারা বলেন, বিনিয়োগের জন্য ওয়ান-স্টপ পরিষেবার মাধ্যমে শুধু প্রবাসী ও রপ্তানিতে অর্জিত অর্থ অবকাঠামোগত উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষাখাতে প্রবাহিত করা গেলে এ অঞ্চলের চেহারাই বদলে যেতো। এখানে রেমিট্যান্সের প্রবাহ অনুপাদনশীল খাতে ব্যয় না করে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ও বন্ড বাজারে আনতে উৎসাহিত করা জরুরি।

তারা বলেন, দেশের ১৬৭টি চা-বাগানের মধ্যে ১৩৬টিই এ বিভাগে। এ শিল্পে জড়িত শ্রমিকদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও চা প্রক্রিয়া-বাজারজাতকরণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও দক্ষতা বাড়াতে বাজেটে বিশেষ দিকনির্দেশনা থাকতে হবে। দেশের ৩৭৩টি হাওরের মধ্যে ২১৭টিই এ অঞ্চলে, এ জন্য হাওরে কৃষি সম্পদ-মৎস্য-পশুসম্পদের উন্নয়ন এবং মৎস্য প্রজনন দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ রেখে জেলেদের প্রণোদনা দেওয়া জরুরি।

এ ছাড়া প্রচুর সম্ভাবনাময় পর্যটন খাত সম্প্রসারণে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশবান্ধব যান চলাচল উৎসাহিতকরণ, পরিবেশ বিপর্যয় ও পাহাড় ধস কমাতে অপরিকল্পিতভাবে খনি থেকে পাথর উত্তোলন ও যত্রতত্র আবাসন বন্ধ করা, উজান থেকে আসা ঢলে আকস্মিক বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কমানো, নদী-খাল-হাওর অঞ্চলে নিয়মিত খনন কার্যক্রম, স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানীয়জলের সু-ব্যবস্থা, কর্মসংস্থান উপযোগী প্রকল্প গ্রহণ এবং ক্ষুদ্র জাতিসত্তা অধ্যুষিত এলাকায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসমস্যা নিরসন এবং পর্যটনসহ ক্ষতিকর কোনো শিল্প না করার জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ ও কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে।

সভায় সমিতির কার্যনির্বাহক কমিটির নেতারাসহ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আশরাফুর রহমান, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক, ড. মো. মাহবুবুল হাকিম, ড. মুহাম্মদ আবু তাহের, অধ্যক্ষ জালাল উদ্দিন শাওন ও আলী আসগর, শাল্লা উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এসপি/মার্চ ২৬, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

০২ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test