E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

‘সংখ্যালঘু প্রতিনিধি’ নিয়োগে দাবি জানাতে হবে কেন ?

২০২২ ফেব্রুয়ারি ১৬ ১৫:২৬:৪৫
‘সংখ্যালঘু প্রতিনিধি’ নিয়োগে দাবি জানাতে হবে কেন ?

গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু


এ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত নাম 'সার্চ কমিটি'। এ কমিটির মাধ্যমে আগামি নির্বাচন কমিশনে কোন পাঁচজন নতুন করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন, তা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যমে বিস্তর লেখালেখি, বিশ্লেষণ ও দফায় দফায় টকশোসহ গোটা দেশেই আলোচনার ঝড় বইছে। এরইমধ্যে গণমাধ্যমের কল্যাণে জানতে পারলাম, ইতিমধ্যে সার্চ কমিটি তথা অনুসন্ধ্যান কমিটির আমন্ত্রণে একাধিক বৈঠকে যোগ দেয়া আমন্ত্রিত দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা তাঁদের পছন্দসই ৩২২ জনের নাম সেই অনুসন্ধান কমিটির কাছে জমা দিয়ে এসেছেন।

ইতিমধ্যে সবকটি গণমাধ্যমে সেই বহুল আলোচিত ৩২২ জনের নামের তালিকাও ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে।
যদিও মঙ্গলবার রাতে বিশিষ্ট কলামিস্ট ও সাংবাদিক প্রভাষ আমীনের উপস্থাপনায় এটিএন নিউজের জনপ্রিয় টকশো 'নিউজ আওয়ার এক্সট্রা' অনুষ্ঠানে দেশের আরেকজন সাংবাদিক নেতা, বিশিষ্ট সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল এভাবে প্রকাশ্যে নামের তালিকাটি প্রকাশ করা মোটেই সঠিক হয়নি বলে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।

জনাব বুলবুল ওই টকশোতে তাঁর স্বভাব সুলভ গুরু গম্ভীর বিশুদ্ধ উচ্চারণে মঙ্গলবার সার্চ কমিটির সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বিষয়ে তারা কি কি দাবি পেশ করে এসেছেন, সেটিরও চমৎকার বর্ণনা দিচ্ছিলেন।

মঞ্জুরুল বুলবুল আহসান বুলবুল এক পর্যায়ে বললেন, 'আমরা সিনিয়র চার সাংবাদিকের পক্ষ থেকে এবারের নির্বাচন কমিশনে যোগ্যতার ভিত্তিতে একজন সংখ্যালঘু ও একজন নারীকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জোর দাবি বা সুপারিশ করে এসেছি।'

এর আগে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের একজন প্রতিনিধি, দেশের বিশিষ্ট এক নাগরিককেও একই কায়দায় সার্চ কমিটির সাথে নাগরিক সমাজের বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনে একজন সংখ্যালঘু প্রতিনিধি নিয়োগের দাবি করে এসেছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে মতামত দিতে দেখা গেছে।

এরও আগে নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে, গত ক'দিন দিন আগে সংখ্যালঘুদের অধিকার আদায়ে কাজ করা বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক দেশের প্রবীন আইনজীবী এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে এক লিখিত পত্রের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশনে 'সংখ্যালঘু প্রতিনিধি' রাখার জোর দাবি জানিয়ে একখানা আবেদনপত্রও পাঠিয়েছেন।

প্রিয় পাঠক, এখানেই আমার আপত্তি। আর এ জন্যই এ লেখার অবতারনা। আমি একজন নগন্য সংবাদকর্মী, একজন সংস্কৃতিকর্মী। পাশাপাশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা ও আদায়ের লড়াইয়ে একজন সত্যনিষ্ঠ মাঠকর্মী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। আমার মতো অজ্ঞান, স্বল্প শিক্ষিত নগণ্য নাগরিকের কাছে কোনভাবেই বিষয়টি বোধগম্য হচ্ছেনা, এ দেশে এখনও এক দশমাংশ ভোটার সংখ্যালঘু থাকার পরও, সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব রাখার জন্য কেন এভাবে বিশিষ্ট নাগরিকদের রাষ্ট্রের কাছে দাবি জানাতে হবে?

বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিসহ রাষ্ট্রের অতীব গুরুত্বপূর্ণ বহু উচ্চপদে সংখ্যালঘুরাতো যথেষ্ট যোগ্যতার সাথেই গত ৫০ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করার স্বাক্ষর রেখে এসেছেন। তাহলে 'নির্বাচন কমিশনে একটি পদ পাওয়ার জন্য আমাদেরকে নানাভাবে একের পর এক দাবী জানাতে হবে কেন? নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পেতে সংখ্যালঘুদের মধ্যে কি একজন ব্যক্তিও যোগ্য নেই? অথচ, নির্বাচনের সময় আমরা মহামূল্যবান 'ভোটার' হিসেবে প্রতিটি সংখ্যালঘু কতটায় না আত্মীয়, আদরনীয়, বরণীয় হয়ে উঠি!!

ফলে এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটিতে 'সংখ্যালঘু প্রতিনিধি' আমরা নিয়োগ দিতে পারিনি, এ লজ্জা ও ব্যর্থতা কাদের? রাষ্ট্রের, রাজনৈতিক দলগুলোর, সুশীল সমাজের নাকি মেরুদন্ডহীন আমাদের সংখ্যালঘু অনেক নেতৃবৃন্দের!

আমরা মনে করি, দেশটির স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে, হয়তো এ রাষ্ট্রের চার মূলনীতির অন্যতম 'ধর্মনিরপেক্ষতা' কখনও কোনভাবেই নির্বাসনে যেতনা, আর ৫০ বছর পর এসে নির্বাচন কমিশনের মতো একটি স্পর্শকাতর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে 'সংখ্যালঘু প্রতিনিধি' নিয়োগে আমাদেরকে এভাবে অনেকটা 'অবলা'র মতো জোর দাবিও তুলতে হত না!


লেখক : বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক বাংলা ৭১ ও সম্পাদক, নবীনগরের কথা।

পাঠকের মতামত:

১৪ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test