E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

এককেন্দ্রিক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই

২০২২ ফেব্রুয়ারি ২৩ ১৫:৫১:৫০
এককেন্দ্রিক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই

আবীর আহাদ


বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, ভুয়ামুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল, সুদমুক্ত গৃহঋণসহ আরো কিছু মৌলিক দাবি নিয়ে অবশ্যই আন্দোলনের যৌক্তিকতা রয়েছে। কারণ এসব দাবি জাতীয় ইস্যুরই অংশ। তবে যেহেতু এতদসংক্রান্ত দাবিদাওয়ার ভিত্তিতে আন্দোলনের সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের গণমানুষের সার্বজনীন স্বার্থ জড়িত ফলে এসব জাতীয় দাবির প্রেক্ষিতে সংগঠিতব্য আন্দোলনের সাথে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ একান্তই জরুরী। সেক্ষেত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বিভিন্ন প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠনসহ নেতৃস্থানীয়দের সাথে কোনো প্রকার আলাপ-আলোচনা, শলাপরামর্শ, সমন্বয়, সংযোগ ও যোগাযোগ স্থাপন না-করেই কোনো একটি বিশেষ সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ সংকীর্ণ সত্তায় আবির্ভূত হয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ভাঙিয়ে যে যার মতো রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত আন্দোলন করতে গিয়ে বাস্তবসম্মত কারণেই আন্দোলনে হোঁচট খাবে এটাই তো স্বাভাবিক। আরেকটি দিক হচ্ছে এই যে, এ-ধরনের তথাকথিত আন্দোলনের অন্তরালে মুক্তিযোদ্ধা/মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের ছদ্মবেশে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা  নিজেদের ভুয়োমি ঢেকে রাখার লক্ষ্যে এ প্রয়াসের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে অত্যন্ত কূটকৌশলে আন্দোলনকে বাঞ্চাল করার চক্রান্ত করার সুযোগ পায়। আর এসব অপরিণামদর্শি ও মতলববাজি অপপ্রক্রিয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান সংঘটিত হয়। সেক্ষেত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধারা এসবের দায় বহন করতে বাধ্য নয়।

যেহেতু উপরোক্ত জাতীয় দাবিনামার সাথে সব বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বার্থ জড়িত, সেহেতু বিশেষ কোনো সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গের সংকীর্ণ উচ্চাভিলাষী নেতৃত্ব নির্মাণের সাথে ব্যাপক বীর মুক্তিযোদ্ধা/ সন্তানরা সংগতকারণেই সম্পৃক্ত হতে সম্মত নন। সরকার তথা রাষ্টশক্তির নিকট থেকে উক্ত জাতীয় দাবিদাওয়া আদায় করার আন্দোলনটি হতে হবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের সর্বসংগঠনের ন্যুনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে ব্যাপক, ঐক্যবদ্ধ ও এককেন্দ্রিক নেতৃত্বের অধীনে। অন্যথায় আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। তাইতো আমরা ঐ ধরনের বিশেষ বিশেষ সংগঠনের জনসমর্থনহীন, সংকীর্ণ, বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত আন্দোলন বার বার ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে দেখে আসছি। এবং এ-ধরনের ব্যর্থ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বৃহত্তর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে জাতীয় স্বার্থে এসব বিষয়গুলো অনুধাবন করার জন্যে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। সেই সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বৃহত্তর স্বার্থে মুক্তিযোদ্ধা ও সন্তানদের সব সংগঠনকে একটি ঐক্যবদ্ধ এককেন্দ্রিক আন্দোলনের বিকল্পও নেই।

উপরোক্ত চিন্তাভাবনা ও চেতনার নিরিখে আমরা সর্বস্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের সাথে শলাপরামর্শ করে সম্প্রতি একটা কর্মপন্থা তৈরি করেছি। তারই আলোকে ৮ দফার একটি স্মারকলিপি প্রণয়ন করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গণস্বাক্ষরের জন্যে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছি। যেহেতু যেকোনো কর্মসূচি পরিচালনা করতে হলে একটা সাংগঠনিক পদ্ধতিতে এগোতে হয়, সে-অবস্থায় আমরা একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ব্যানারে সেটি সন্নিবেসিত করে মুক্তিযোদ্ধা-গণস্বাক্ষর কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। এতে বেশ সাড়া পরিলক্ষিতও হয়েছে। আমরা এখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে পেশ করার প্রক্রিয়া নিয়ে গভীরভাবে পর্যালোচনা করছি। এ জন্য অবশ্যই আমাদেরকে একটা আন্দোলনের কর্মপরিকল্পনা করতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় সর্বস্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠার বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। সর্বস্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সদয় জ্ঞাতার্থে প্রণীত স্মারকলিপি এতদসঙ্গে উপস্থাপন করছি।

লেখক :চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

পাঠকের মতামত:

০১ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test