আগে বাঙালিত্ব পরে ধর্মীয় পরিচয়

আবীর আহাদ
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে এসে ঘোষণা করেছিলেন : আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রদত্ত উপরোক্ত দার্শনিক বক্তব্যটি উচ্চারণ করে তিনি বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন যে, আমরা আগে বাঙালি পরে কেউ হিন্দু, কেউ মুসলমান, কেউ খৃস্টান, কেউ বৌদ্ধ, কেউ কেউ অন্যান্য ধর্মের অনুসারী।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করেছে। আর সেই স্বাধীনতা অর্জনের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি মুসলমান, হিন্দু, খৃস্টান, বৌদ্ধ, পাহাড়ি ও অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রক্ত দিয়ে, রক্ত নিয়ে, অত্যাচারিত হয়ে পাকি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যার যা ছিলো তাই নিয়ে অংশগ্রহণ করেছে। সেই মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো কিসের ভিত্তিতে? এক কথায় বাঙালিত্বের ভিত্তিতে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে। তবে এটাও ঠিক, বাঙালি জাতির মধ্যে অবস্থানকারী একটি শক্তিশালী বাঙালিবিরোধী অপশক্তি তথা রাজাকার আলবদর আলশামস ও তথাকথিত শান্তিকমিটি পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে হানাদার বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলো। পরিশেষে তারাও হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ন্যক্কারজনক পরাজিত হয়েছিলো। এখানে একটা বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়, তাহলো, ঐ যে হানাদার সহযোগী দেশীয় স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি, এরা আবির্ভূত হয়েছিলো ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মধ্য থেকে। অর্থাত্ তারা মুসলমান পরিচয়ে ইসলামকে আঁকড়ে ধরে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিলো। এরা মনে করতো, 'পাকিস্তান' অর্থ পবিত্র স্থান, ইসলাম ও পাকিস্তান এক ও অভিন্ন। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে এসেও এদেশের একশ্রেণীর মানুষের মন থেকে পাকিস্তান মুছে যায়নি, কারণ তারা ঐ একই ধারণা পোষণ করে যে, ইসলাম ও পাকিস্তান এক ও অভিন্ন!
এখানে একটা কথা সঙ্গত: কারণে বলা যেতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা 'জয়বাংলা ও জয় বঙ্গবন্ধু' ধ্বনি উচ্চারণ করে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও তাদের সশস্ত্র সহযোগী রাজাকারদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তাম অপরদিকে পাকিবাহিনী ও রাজাকাররা 'আল্লাহ্ আকবার-ইয়া আলী ও পাকিস্তান জিন্দাবাদ' এ শ্লোগান দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধসহ গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ধর্ষণযজ্ঞ চালাতো। এসব পৈশাচিক কার্যকলাপ তারা করতো ইসলাম ধর্মের নামে। তারা মনে করতো বাঙালিত্ব, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিবাহিনী, জয়বাংলা, বঙ্গবন্ধু এসব হলো ইসলামবিরোধী হিন্দুয়ানা ; কুফরি মতবাদ। অর্থাত্ আমরা মুক্তিযোদ্ধা ও জনগণ পরিচালিত হয়েছিলাম বাঙালি জাতীয়তাবাদী চিন্তাচেতনাকে পাথেয় করে, আর তারা পরিচালিত হয়েছিলো ধর্মীয় চেতনা তথা ইসলামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে সেদিন বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার কাছে ইসলামী চেতনা পরাজিত হয়েছিলো।
সুতরাং বাংলাদেশের স্বাধীনতার জয় সেটা মুক্তিযুদ্ধের জয়, সেটা বাঙালিত্বের জয় বাঙালি জাতীয়তাবাদের জয়। এটাই ঐতিহাসিক ও দার্শনিক সত্য। তাই এই বাংলাদেশের বুকে বসবাসরত সব ধর্মের অনুসারীরা স্ব-স্ব ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান নির্দ্বিধায় নিরুদ্বিগ্নে আস্থার সাথে পালন করবে এ-বিষয়ে কেউ কাউকে বাধা দেয়ার অধিকার ও এখতিয়ার রাখে না।
আবহমানকাল থেকে বাঙালির যেসব সার্বজনীন জাতীয় উৎসব গড়ে উঠেছে, এসবের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কিছু কিছু উৎসবও সার্বজনীনতা লাভ করে বাঙালি সংস্কৃতি ও উৎসবকে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করেছে। যেমন, মুসলমানদের ঈদ, হিন্দুদের দুর্গাপূজা, খৃস্টানদের বড়দিন, বৌদ্ধদের প্রবরণা উৎসব ও বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর উৎসব বাঙালির সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। স্থূল ধর্মীয় চিন্তাচেতনা দিয়ে এগুলোকে বিচ্ছিন্ন করা এখন আর সম্ভব নয়। কেউ যদি নিজের ধর্মকে শ্রেষ্ঠ ও মহিমান্বিত জ্ঞান করে উগ্রধর্মীয় চেতনায় অন্য ধর্মের ওপর বা জাতীয় সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানার চেষ্টা করেন, সেটা কোনোদিন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না, বরং সেই ধর্মটির চেতনা হারিয়ে ক্রমান্বয়ে সন্ত্রাসবাদী বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত হয়ে বিলুপ্তির দিকে ধাবিত হবে।
বিশেষ করে মুসলমানদের মধ্যের একটি কট্টরপন্থী অংশ অন্য ধর্মকে সহ্যই করতে চান না। ইদানীংকার তথাকথিত আইএস, ব্রাদারহুড, তালিবান, জয়শী মুহাম্মদ, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, জেএমবি প্রভৃতি উগ্রপন্থী ধর্মান্ধসহ বেশির ভাগ মুসলমান বিশ্বাস করে যে, আরবী ভাষা আল্লাহর ভাষা, ইসলাম ধর্মই আল্লাহর ধর্ম। অথচ পবিত্র কোরানে পরিষ্কারভাবে এরকম বলা হয়েছে : আমি প্রত্যেক যুগে যুগে, প্রত্যেক ভাষাভাষীর মধ্যে কেতাব ও নবী পাঠিয়েছি। আবার অন্যত্র এভাবে বলা হয়েছে : খৃস্টান ইহুদি সেবিয়ান মেজিয়ান পলিথিস্ট স্ক্রিপচার্স এবং আর যারা আছে, যারা পরকালে বিশ্বাস করে, যারা সৎ পথে চলে তাদের কোনো ভয় নেই। এ-দুটি আয়াতদৃষ্টে বাকি ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন।
আরবী ভাষার কথা বলছিলাম যে, কট্টরপন্থীসহ অধিকাংশ মুসলমান আরবীকে আল্লাহর ভাষা জ্ঞান করে মুসলমানদের ভাষা ভেবে বসেন। অথচ গোটা আরবীয় ভাষাভিত্তিক ভূখণ্ডের মধ্যে বিভিন্ন ধর্ম ও নবীদের অনুসারীরা বিশেষ করে খৃস্টান, ইহুদি প্রভৃতি সম্প্রদায়ের লোকেরাও বসবাস করেন এবং তাদের ভাষাও আরবী। অপরদিকে ইসলামী নাম ও পোশাক বলতেও কিছু নেই। মুসলমানদের অধিকাংশই মনে করে যে, আরবের পাগড়ি ও সাদা জোব্বাই হলো ইসলামী পোশাক। অথচ আরবীয় অঞ্চলে বসবাসরত মুসলমান খৃস্টান ও ইহুদি নির্বিশেষে সবাই ঐ একই পোশাক পরিধান করে। আসলে পোশাকটির প্রচলন ঘটেছে অত্যধিক গরম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। এটা আরবীয় অঞ্চলে বসবাসকারী সব ধর্মের মানুষের পোশাক। আরবী ভাষার নামকেও অনেকে ইসলামী নাম ভেবে বসে। অথচ বহু খৃস্টান ও ইহুদিদের নামও আরবী ভাষা থেকে এসেছে। যেমন ইরাকের এককালীন প্রধানমন্ত্রী তারিক আজিজ। তিনি ছিলেন খৃস্টান । আবার যেমন, ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের হিন্দু সম্প্রদায় বিভিন্ন উৎসবে যে উলুধ্বনি দিয়ে থাকেন, সেই উলুধ্বনি তো স্বয়ং সৌদি আরবসহ অন্যান্য আরবীয় মুসলমানরাও দিয়ে থাকেন! সুতরাং কীভাবে একটি ধর্মীয় চিন্তা নিয়ে অন্য ধর্মের ওপর চড়াও হবেন তা বোধগম্য নয়। একটাই বোধ দেখতে পাই, তাহলো ধর্মের নামে শোষণ, হানাহানি ও রক্তপাত যা সুষ্ঠু সুন্দর বিবেকবান মানুষ কল্পনাও করেন না।
উপসংহারে এটা বলে শেষ করবো যে, দৈশিক ও জাতীয় চিন্তায় ধর্মকে দূরে রাখতে হবে। ধর্ম যার যার ব্যক্তিবিশ্বাসের বিষয়; এখানে জবরদস্তির স্থান থাকতে পারে না। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির অর্থ, সংঘাত দ্বন্দ্ব হানাহানি রক্তপাত যা দেশ, জাতি, অগ্রগতি, মানবতা ও সভ্যতাকে ধ্বংস করে দেয়। এসব অনুধাবন করে পবিত্র কোরআনেও বলে দেয়া হয়েছে : লা-কুম দ্বীনা-কুম ওয়ালীয়াদ্বীন লা-ইকরা হা-ফীদ্বীন!
সুতরাং বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কন্ঠ মিলিয়ে, আসুন, আমরা সব ধর্মানুসারীও বলি, আগে আমরা বাঙালি ; তারপর আমরা ধর্মীয় পরিচয়ে অন্যকিছু।
লেখক :চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।
পাঠকের মতামত:
- ভারতে শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৭১ লাখ ৩৩ হাজার ৪ জন
- নিজেকে বাঁচাতে মাকে দিয়ে বাদির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা সন্ধিগ্ধ আসামী রফিকুলের!
- জেলা প্রশাসকের বাসভবনে হামলার ঘটনায় ১০১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
- আরবি লেখা শেখার ছলে ঘরে নিয়ে শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণ, ধর্ষক গ্রেফতার
- সাত উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোপালগঞ্জ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ম ব্যাচের 'শিক্ষা সমাপনী
- হৃদরোগে আক্রান্ত জামায়াত আমির, বাইপাস সার্জারির পরামর্শ
- ‘৫ আগস্ট ঘিরে কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা নেই’
- ‘সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে ফ্যাসিস্ট মাথাচাড়া দিতে পারে’
- শ্রীনগরে অনুমোদনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে চলছে স্বাস্থ্য সেবা
- হাসিনাকে দেশে ফেরাতে আ.লীগের নতুন পরিকল্পনা
- ‘গাজীপুরে আসন বাড়বে, কমবে বাগেরহাটে’
- ডেঙ্গুতে আরও ২ মৃত্যু, হাসপাতালে ৩৮৬ জন
- ১০২ এসিল্যান্ড প্রত্যাহার
- জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি ঐক্য পরিষদের
- ‘তিন মাসে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন হয়েছে, এক বছরেও না হওয়ার কারণ দেখছিনা’
- পাংশায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ
- স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে শাহীন গ্রেপ্তার
- জামালপুরে দুই টিকিট কালোবাজারি আটক
- গোপালগঞ্জে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
- সোনাতলায় কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা
- ফুলপুরে পরিষ্কার পরিছন্নতার বিশেষ অভিযান
- স্বাধীনতা ও জাতিসত্তা রক্ষার লড়াইয়ে চাই জাতীয় ঐক্য
- নিউ ইয়র্কে বন্দুক হামলার সময় কর্মরত ছিলেন না নিহত বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল
- সেরা দূরপাল্লার এয়ারলাইনের স্বীকৃতি পেলো এমিরেটস
- ডিসকভারির সাথে পার্টনারশিপে উদ্বোধন হলো অপো রেনো ১৪ সিরিজ ৫জি স্মার্টফোন
- কমলনগরে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার আটক
- হিমেল হাওয়ায় কাবু কুড়িগ্রামের মানুষ
- ‘কোন মানুষ অর্থের কাছে চিকিৎসায় হেরে যাবে না, সবাই বাঁচবে’
- ঝিনাইদহে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ কর্মী নিহতের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি
- রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল ৩ মোটরসাইকেল আরোহীর
- প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি, বিএনপি নেতা চাঁদের নামে মামলা
- মা
- প্রজন্মের কাছে এক মুক্তিযোদ্ধার খোলা চিঠি
- পারিবো না
- ঝিনাইদহে বজ্রপাতে মৃত দুই কৃষক পরিবারকে তারেক রহমানের মানবিক সহায়তা প্রদান
- অতিরিক্ত ঠান্ডায় ঠাকুরগাঁওয়ে বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা
- লক্ষ্মীপুরে গুলিবিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু
- রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করছে জান্তা
- লক্ষ্মীপুরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন
- নৌকার পক্ষে সমর্থন জানানেল এডভোকেট আব্দুল মতিন
- লক্ষ্মীপুরে দোকান ঘর বিক্রির নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা
- মহুয়া বনে
- রুমা-থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি: ১৭ নারীসহ ৫২ জন রিমান্ডে
- বিজনেস সামিটের পর্দা নামছে আজ
- সাংবাদিক নাদিম হত্যার প্রতিবাদে শেরপুরে প্রতিবাদ সমাবেশ