E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ

২০১৫ ফেব্রুয়ারি ১৬ ১৮:০৯:১৪ ২০১৫ ফেব্রুয়ারি ১৬ ১৮:০৫:০০
ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ

চৌধুরী আ. হান্নান : মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আমাদের একনিষ্ঠ সহায়তাদানকারী ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে একটি দূরদর্শিতার, প্রজ্ঞার কথা স্মরণ করতে চাই। প্রায় ১ (এক) কোটি বাঙালি নিপীড়িত শরনার্থী যখন ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে তখন উদ্ভুত পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিক রূপ দেওয়া সমাধানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রত্যাশা নিয়ে বিশ্বের প্রভাবশালী কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেছিলেন তিনি। দেশগুলোর মধ্যে একটি ছিল মার্কিনযুক্ত রাষ্ট্র, প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সময়কাল।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন সহযোগিতা পাওয়ার কোন প্রকার সম্ভাবনা না থাকা সত্ত্বে ও সাগর, মহাসাগর পাড়ি দিয়ে তিনি কেন নিক্সনের নিকট ধর্ণা দিতে গিয়েছিলেন ? জল্লাদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাওয়া আর কী !

১(এক) কোটি লোকের দেশত্যাগ, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্য কর্তৃক নির্বিচারে গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগকে তারা পাকিস্তানের আভ্যন্তরিন বিষয় মনে করে বলে ইন্দিরা গান্ধীকে সাফ জানিয়ে দেয়। বিশ্ববিবেকের কাছে বার্তা পৌঁছাতে বিলম্ব হয়নি যে নিক্সন প্রশাসন নিপীড়িত, স্বাধীনতাকামী, আক্রান্ত জনগোষ্ঠির পাশে দাঁড়ায়নি।
এ ঘটনাকে সাধারণ মানুষ ব্যর্থ মিশন ভাবলেও বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিতে এটাকে ইন্দিরা গান্ধীর কূটনীতির বিরল সাফল্য হিসেবে দেখা হয়। শত বাধা সত্ত্বে ও বাংলাদেশ জন্ম লাভ করেছে, মাথা উঁচু করে টিকে আছে, এগিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট ‘৭১ সালের মত বড় সংকট নয় নিশ্চয়ই। নতুন সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন করে দিয়ে, এ অচলাবস্থা ঠিকই একদিন কেটে যােেব। সংকট নিরসনে রাজনীতিকদের পরামর্শ দেওয়ার মত বুদ্ধি আমার নেই। কিন্তু নির্বিঘ্নে পথ চলার অধিকার আমার আছে। মানসিক অশান্তি, অস্থিরতা নিয়ে দিন কাটানো যায় না। আমার সন্তান এখনও ঘরে ফিরেনি-এ উৎকন্ঠা নিয়ে কত দিন থাকা যায় ! আতংকের মধ্যে বসবাাস করে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

বর্তমান অচলাবস্থা অসুস্থ রাাজনীতি নামক বিষবৃক্ষের ফল। আমরা আওয়ামী লীগকে পছন্দ করি কারণ তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে, বিএনপিকে পছন্দ করি না কারণ তারা জামায়াতের দোসর। স্বল্প শিক্ষিত মাতা-পুত্রের হাতে যে দলের রাাজনীতি জিম্মি তাদের সম্পর্কে যত কম কথা বলা যায় ততই ভাল। তাদের বর্তমান আবদার মধ্যবর্তী নির্বাচন। মধ্যবর্তী নির্বাচন হলে যারা পরাজিত হবে তারা আবারও সংসদকে অকার্যকর করবে না বা একইভাবে আন্দোলনের নামে সহিংসতা করবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তা হলে বিপুল অর্থ ব্যয় করে এ নিষ্ফল নির্বাচন করে লাভ কী ?

কিন্তু বোমার আগুন থেকে মানুষের জানমাল রক্ষা পাবে কীভাবে ? এ দায়িত্ব কেবলই সরকারের, অন্য কারো নয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের কার্যক্রমে নাশকতার শিকার সাধারণ মানুষ সন্তুষ্ট হতে পারছে না। পেট্রোল বোমাসহ হাতে নাতে ধরা পড়া ২০ দলীয় জোটের মদদ পুষ্ট দুর্বৃত্তকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে বর্তমান রাজনৈতিক সন্ত্রাস বন্ধ করা যাবে না। অসুখের মাত্রা বুঝে ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যাই হোক না কেন। এ যাবৎ ক্রস ফায়ারে যত মানুষ মারা গেছে তাদের প্রায় সবাই হত্যা মামলাসহ বহু মামলার আসামি ছিল। তাতে মানুষ অনেকটাই স্বস্তি পেয়েছে। তাছাড়া আগাছা নির্মূল করার কোন বিকল্প নেই। গণতন্ত্র, মানবাধিকারের দিকে পরে তাকানো যাবে।

মানুষ রাজনীতিকদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ, তারা সহিংসতা বন্ধ করবে তা এখন কেউ আর বিশ্বাস করে না। সরকারের প্রশাসন যন্ত্রই এখন ভরসা। সরকার প্রধানের যথাযথ নির্দেশনা সত্ত্বেও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী আজও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়নি। আবার সন্ত্রাস দমনে সরকার দলীয় কর্মীদের অংশ গ্রহণ বা ভূমিকা আশানুরূপ নয়। তারা কেবল রাজ-ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করবেন আর গা নড়াচড়া দিবেন না, তা তো হয় না।

সরকার বহির্বিশ্বে ইমেজ সংকট কিছুটা কাটিয়ে উঠেছে। যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত বছর ও তার রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যন্তরিণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে। এখন তাদের দক্ষিণ এশিয় অঞ্চলের কূটনীতির সুরও পাল্টে গেছে কিছুটা। বিএপি’র আন্দোলন-নাশকতা দমনে শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, অবিচল। সেক্ষেত্রে, এক বৃহৎ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের দেওয়া ‘জাতীয় সংলাপ’ এর প্রস্তাব গ্রহণ করতে দোষ কী ? আর আলোচনার বিষয়বস্তু যদি হয়-নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, একাদশ সংসদ নির্বাচন, নাশকতার দায়দায়িত্ব ও ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ ইত্যাদি।

বাংলাদেশের জন্মকালীন সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সাথে ইন্দিরা গান্ধীর আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি, তাতে কী তিনি হেরে গিয়েছিলেন ?

লেখক : সাবেক ব্যাংকার

পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test