E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বঙ্গবন্ধু চেতনা চিরজীবী হোক

২০১৫ মার্চ ১৭ ০৮:৪৪:০৪
বঙ্গবন্ধু চেতনা চিরজীবী হোক

চৌধুরী আ. হান্নান : মার্চ মাস জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মমাস এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার মাস। বর্তমান জাতীয় সংকটে তাঁকে বেশি করে স্মরণ করা ও তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে কাজ করার সময়।

যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুর্নগঠনের লক্ষ্যে এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু এক দলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হয়েছিলেন। আমরা যারা কিছুটা রাজনীতি সচেতন তারাও জানি এক দলীয় শাসন কখনও একটি দেশের জন্য শুভ হয় না, বরং স্বৈরতন্ত্রের জন্ম দেয়। এক পক্ষ ক্ষমতা ভোগ করে, অন্য পক্ষ নিপীড়িত হয়। দীর্ঘ সময়ের জন্য দলীয় শাসন, স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার শেষ পরিনতি কী হয় তার অসংখ্য নজির রয়েছে।

তবু কী কারণে জাতির জনক সদ্য স্বাধীন দেশটা শাসন করতে এক দলীয় ব্যবস্থার কথা ভেবেছিলেন ?

পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে পদার্পণ করে জাতির উদ্দেশ্যে প্রথম ভাষনে কেঁদেছিল সকল বাঙালি (ইতিমধ্যে স্বাধীনতা বিরোধীরা গর্তে ঢুকে পড়েছে)। সে কান্না যতটা না দেশ স্বাধীন হওয়ার সুখে, তার চেয়ে বেশি বঙ্গবন্ধুকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে। সেদিন বাঙালি জাতি তাঁর প্রতি যে প্রাণঢালা ভালবাসা দেখিয়েছিল তা পৃথিবীর অন্য কোন নেতা, রাষ্ট্র নায়ক পেয়েছেন কি না সন্দেহ।

জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ শিখরে, এক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছিলেন তিনি। মাত্র ৫২ বছর বয়সে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম দিতে সক্ষম হন এবং জীবদ্দশায় কিংবদন্তী হয়ে উঠেন।
পৃথিবীর ইতিহাসে অমর হয়ে থাকার জন্য তাঁর আর কিছু করার প্রয়োজন হত না কিন্তু তিনি তাঁর প্রাণপ্রিয় বাঙালির ভালবাসা মর্যাদা দিতে চেয়েছেন, যুদ্ধে ধ্বংস প্রাপ্ত দেশটা গড়ে দিতে চেয়েছেন।

৯ মাসের যুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের তৈরী করা ধ্বংস স্তুপের উপরে দাড়িয়ে বঙ্গবন্ধুকে পুর্নগঠনের কাজ শুরু করতে হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর উদারতার সুযোগ নিয়ে পরাজিত শক্তি গর্ত থেকে ধীরে ধীরে মাথা বের করতে থাকে এবং সরকারকে অস্থিতিশীল করতে নানা ফন্দি করতে শুরু করে দেয়। প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে পাটের গুদামে আগুন দেয়াসহ নান নাশকতার খবর আসতে থাকে। কয়েকটি দেশের (বিশেষত আমেরিকার) আর্ন্তজাতিক রাজনীতির কুট কৌশলে ১৯৪৭ সালে বাংলাদেশে এক ভয়ানক খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়। এ সুযোগে দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক শত্রুরা দেশে অরাজকাত সৃষ্টির মাত্রা বাড়াতে থাকে। উদ্দেশ্য- বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে কিন্তু টিকে থাকবে না- এমন অবস্থা তৈরী করা।

একটি সদ্য স্বাধীন দেশের এরূপ অবস্থায় তিনি একক দল বাকশাল গঠন করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি ভাবতেন সব শক্তি এক হলে দেশের উন্নতি হবেই। কিন্তু ঘাতকরা জাতির পিতাকে সে সুযোগ দিল না।

বঙ্গবন্ধুর মত বাঙালির এমন এক অভিভাবকের একক হাতে ১০(দশ) বছরের জন্য দেশ শাসনের ভার সমর্পণ করলে বাংলাদেশ কত উন্নতির শিখরে পৌঁছাত তা দেখার সুযোগ নেই।

বর্তমান রাজনৈতিক অরাজকতা কিছুটা হলেও স্বাধীনতার অব্যবহিত পরের পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে দেয়। সকলেই একমত হওয়ার কারণ রয়েছে যে তখনকার পরিস্থিতি অনেক বেশি ভয়াবহ ছিল। জনগণ প্রত্যাশা করে বর্তমান দীর্ঘদিন থেকে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা দমন করে সরকার দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনুক। সরকার ও কঠোর হাতে নাশকতা দমন করে মানুষের মনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর। সে ক্ষেত্রে ৭১এ যুদ্ধ পরবর্তী সীমাহীন অরাজকতা দমনে একজন মহান নেতার মানসে সাময়িক এক দলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা কেন এসেছিল তা বুঝতে আমাদের আর অসুবিধা হয় না। যাঁর হৃদয়ে প্রকৃত ভালবাসা বিদ্যমান, তিনি শাসন করার অধিকার ও রাখেন। স্বাধীনতার জন্য তিনি জাতিকে ধীরে ধীরে তৈরী করেছিলেন, উপযুক্ত সময়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এক দলীয় শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে তিনি নিশ্চয়ই আমাদের পূর্ণতা দিতে চেয়েছিলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা তা নিতে পারিনি।

বঙ্গবন্ধু চেতনা চিরজীবী হোক।

লেখক: সাবেক ব্যাংকার

পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test