E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং খেলাপি ঋণ আদায়

২০১৫ মার্চ ২৫ ১৭:৪৮:১৩
সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং খেলাপি ঋণ আদায়

চৌধুরী আ. হান্নান : ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী সাঈদ খোকনকে গণভবনে ডেকে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ব্যাংক সংক্রান্ত কোন ঝামেলা থাকলে তা মিটিয়ে ফেলার তাগিদ দিয়েছেন। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সফল মেয়র মো: হানিফের পুত্র সাঈদ খোকন এখন আর ঋণ খেলাপি নন মর্মে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন।

বিষয়টি পরিস্কার যে, মেয়র পদপ্রার্থীর খেলাপি ঋণ থাকলে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পূর্বে ব্যাংক ঋণ নিয়মিত করে ফেলতে হবে। মেয়র প্রার্থীদের ঋণ নিয়মিত করণের প্রধানমন্ত্রীর তাগাদা ব্যাংক গুলোকে খেলাপি ঋণ আদায়ের ও নির্দেশনা। প্রধানমন্ত্রীর বার্তা কেবল সাঈদ খোকনের জন্য নয়, এ বার্তা সকল মেয়র প্রার্থীর জন্য প্রযোজ্য।

আমাদের দেশে ব্যাংকের ঋণ ফেরত না দেওয়ার একটা সাধারণ প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে ঋণ বের করতে গ্রাহকগণ নানা হয়রানির শিকার হন, বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয়। সে কারণে ও ঋণগ্রহীতারা ঋণ নেওয়ার পর আর ব্যাংক মুখো হতে চান না। ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংকের হাতে কোন শক্ত ব্যবস্থাও নেই। বলতে গেলে ঋণ গ্রহীতারা ইচ্ছা করে দেনা পরিশোধ না করলে তা আদায় করা মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। আর একটা উল্টো প্রথা চালু রয়েছে ব্যাংকে। তা হলো যে বেশি দিনের খেলাপি অনেক সময় সেই বেশি সুবিধা পেয়ে থাকে। সুদ মওকুফ, ঋণ পুন:তফসিল, আসল টাকা কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ ইত্যাদি। সে বিবেচনায় ভাল গ্রাহকদের জন্য তেমন কোন প্রনোদনা নেই।

ব্যাংক সেক্টরে ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি এক ভয়াবহ সমস্যা। বর্তমানে পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ব্যাংক গুলো দাঁড়িয়ে আছে। খেলাপি ঋণের যে হিসাব দেওয়া হয়, তা আসলে এক ধরণের প্রতারনা মনে করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মইনুল ইসলাম। কারণ এর মধ্যে অবলোপনকৃত (ব্যাংকের খেলাপি খাতা থেকে মুছে দেওয়া কিন্তু বকেয়া হিসেবে দাবি বলবৎ থাকা ঋণ) ঋণের হিসাব থাকে না।

রাজনৈতিক অস্থিরতা জনিত কারণে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য এক নির্দেশনায় ডাউন্ট পেমেন্টের শর্ত শিথিল করে ঋণ পুন:তফসিল করার সুযোগ দেওয়া হয়। ওই সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন গ্রাহকের ২৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুন:তফসিল করা হয়েছে। এ সুযোাগ তো দিতেই হবে। ওই সময়ে তারা কেবল ব্যবসা করতে পারেনি তা ই নয়, নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা যদি ওই সময়ের ব্যাংক সুদ পরিশোধ করার বায়না না ধরেন তা হলে তা অযৌক্তিক বলা যাবে না।

দ্বিতীয় দফায় গত জানুয়ারি থেকে শুরু করে দীর্ঘ সময় ধরে চলমান হরতালÑঅবরোধ আবারও শিল্প কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবারও তারা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যাংকের দারস্ত হবেন সন্দেহ নেই। এভাবে চলতে থাকলে ব্যাংক ব্যবস্থা আরও হুমকির মুখে পড়বে। পেট্রোল বোমায় আক্রান্ত ব্যক্তির দুর্বিসহ যন্ত্রণা চোখে দেখা যায় না কিন্তু পাহাড় সমান খেলাপি ঋণ সমাজের প্রতিটি মানুষের কী ক্ষতি করে তা দৃশ্যমান নয়। বেনামি ঋণ, খেলাপি ঋণ, আত্মসাতকৃত অর্থ সমাজে, অর্থ বাজারে কী ধরণের বিষ ছড়ায় তা ভাল বুঝবেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এ অবৈধ, কালো টাকার মালিক বেপয়ারা আচরণ করতে বাধ্য এবং তার দাপটে আশপাশের লোকের শান্তিপূর্ণ বসবাস সম্ভব নয়।

আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যাংকগুলো তাদের খেলাপি ঋণ আদায়ের একে সুযোগ নিতে পারে। ক্ষমতাশালী ঋণখেলাপিরা যখন বুঝতে পারবে যে খেলাপি ঋণের কারণে তাদের প্রার্থীতা বাতিল হয়ে যাবে, তখন ঋণ নিয়মিত করার জন্য ব্যাংকে দৌড়াবে। জাতীয় নির্বাচনে বা যে কোন নির্বাচনে খেলাপি ঋণ আদায়ে সচেষ্ট হতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সকল ব্যাংকে নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে। এ নির্বাচনকে উপলক্ষ করে খেলাপি ঋণের একটা অংশ আদায় হওয়ার এক সম্ভাবনা যেমন রয়েছে, অন্য আরও একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তা হলো সিটি করপোরেশন নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন হলে নাগরিক জীবনে আবার স্বাভাবিক কর্মমুখরতা ফিরে আসবে। মানুষ শংকামুক্ত জীবন পাবে, স্বস্তি ফিরে আসবে। আমাদের বিশ্বাস নির্বাচন বজর্নের মত আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল আর গ্রহণ করবে না। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে এলে দেশ আবার দ্রুত এগিয়ে যাবে।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার

পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test