E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

তবুও এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ

২০১৫ এপ্রিল ০৫ ১৫:১৭:১৬
তবুও এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ

চৌধুরী আ. হান্নান : পুরনো দিনের ব্যর্থতার কষ্ট ভুলে যেতে হয়। সমৃদ্ধ আগামীর প্রত্যাশায় পথ চলা যেমন অনুপ্রেরণার, তেমনি আনন্দেরও। মার্চ মাসের শুরু থেকে দেশব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালা, আনন্দ উৎসব চলে আসছে। একাত্তরের এই দিনে কোথায় কী ঘটেছিল তার স্মৃতিচারণ, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও স্বাধীনতা দিবস ছিল এ সব অনুষ্ঠানের মূলে। দু-একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়েছিল আমাার।

একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন তরুণ শিক্ষক শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বললেন-‘আমি গর্বিত, আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে একসময় আমার বিভ্রান্তি ছিল, এখন নেই। সঠিক ইতিহাস জানতে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি, এমনকি বিদেশী বই-পুস্তকও আমার সহায়ক হয়েছে।’

একজন প্রবীন মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনার জবাবে বললেন ‘জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে গিয়েছিলাম, স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি কিন্তু ৪৪ বছরেও স্বাধীনতার মূল চেতনা বাস্তবায়িত হয়নি। জীবনের পড়ন্ত বেলায় মনে হচ্ছে আগামী প্রজন্মের জন্য কী রেখে গেলাম ? কেবল হতাশা, রাজনৈতিক কোন্দল আর রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের নগ্ন লড়াই ছাড়া আর কী ?’

এই স্বাধীন ভ’-খ- মুক্তিযোদ্ধাদেরই অবিস্মরণীয় দান। একটি পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতা এনে দেওয়ার চেয়ে আর কী বড় অবদান থাকতে পারে আগামী প্রজন্মের জন্য ? বাঙালিরা কখনও শাসক ছিল না, তারা চিরদিন কেবল অন্যের দ্বারা শাসিত, শোষিত, নি:গৃহীত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হলো ঠিকই কিন্তু তিনি সদ্য স্বাধীন যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশকে পুনর্গঠনের সময় পেলেন না। বঙ্গবন্ধু বাঙালিদের ভালবেসেছিলেন কিন্তু শাসন করে ‘মানুষ’ করার সময় দেয়নি ঘাতকেরা। স্বাধীনতার অর্থ বোঝার আগেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। সাধারণ মানুষ যখন শিক্ষিত হয়ে উঠবে, ইতিহাস জানবে, সচেতনতা বাড়বে, তখন বুঝতে শুরু করবে বঙ্গবন্ধু আমাদের কী দিয়ে গেছেন। সন্তানেরা যখন পিতাকে হত্যা করে সে পরিবারের দুদর্শা ললাট লিখন তো হবেই।

বাংলাদেশ ৪৫ বছরে পা রেখেছে। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার মত দ্রুত আমরা আগাতে পারিনি। প্রধান কারণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব। তারপরও অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের সাফল্য কম নয়। তৈরি পোষাক রপ্তানীতে বিশ্বে আমাদের অবস্থান দ্বিতীয়- চীনের পরই। এক বিষ্ময়কর উত্থান নয় কী !

‘৭১ সালে সাড়ে সাত কোটি মানুষকে খাওয়া,পরা দিতে হিমশিম খেতে হত কিন্তু বর্তমানে ১৬ কোটি লোকের ভার বহন করার সক্ষমতাই কেবল অর্জন করেনি, খাদ্য রপ্তানি ও করে বাংলাদেশ নামের ছোট্ট একটি দেশ। প্রায় এক কোটি প্রবাসী বাঙালির প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রায় পূর্ণ হচ্ছে সরকারের অর্থ ভা-ার। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন প্রতিবেশী বৃহৎ দেশ ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে।

উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে বাঙালি জাতি কাজ করতে পারে। রাজনীতির অঙ্গনে হরতাল, অবরোধের বিকল্প ভাবতে হবে। অন্যের অধিকার ক্ষুন্ন হয় এমন রাজনৈতিক কর্মসূচি নিষিদ্ধ করতে হবে। সরকার অবকাঠামোগত সুবিধাসহ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করলে দেশ দ্রুত সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।

সুস্থ্য রাজনীতি ও বলিষ্ট নেতৃত্বের জন্য আমরা কোন রাজনৈতিক দলটির প্রতি ভরসা রাখব ? বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের দীর্ঘ দিন ধরে মানুষকে পুড়িয়ে মারা, বিভীষিকা তৈয়ারী করে রাখার খেসারত নিশ্চয়ই তাদের দিতে হবে। জনগণ কিভাবে তাদের গ্রহণ করবে তা দেখার জন্য আমাদের ২০১৯ সালের নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় ধস দেখার জন্য কেবল গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন মেয়র নির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকাতে হয় না, অনেক ক্ষেত্রেই তা দৃশ্যমান।

দুর্নীতিতে প্রথম সারির একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর রাজনৈতিক কট্টর প্রতিপক্ষ, এমনকি শত্রুরা ও শেখ হাসিনাকে দুর্নীতিপরায়ণ বলে সমালোচনা করেননি। বুঝতে অসুবিধা হয়না যে তিনি নিজেকে কতটা স্বচ্ছতার মধ্যে রেখেছেন। বর্তমান মন্ত্রী পরিষদে ও অপেক্ষাকৃত যোগ্য, স্বচ্ছ লোক রয়েছেন বলে জনমনে বিশ্বাস রয়েছে। তারপরও সরকারের জনপ্রিয়তার হ্রাস পাওয়ার কারণ অনুসন্ধান ও প্রতিকারের ব্যবস্থা এখনই নিতে হবে। না হলে, আ. লীগের অবস্থা ভারতের কংগ্রেসের ভাগ্য বরণ করে নিতে হলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। দারিদ্র ও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছোট দেশ সিঙ্গাপুরকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ গুলোর সারিতে পৌঁছেছেন আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক লি কুয়ান। ৩১ বছর দেশ শাসন করেছেন তিনি, অথচ জনপ্রিয়তা কমেনি তাঁর। রাষ্ট্র-শাসন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান-সংস্থা রয়েছে সেখানে।

এমন নেতৃত্বের অপেক্ষায় থাকতে হবে আমাদের।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার

পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test