E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শুরু হোক সংঘাতমুক্ত পথ চলা

২০১৫ এপ্রিল ১৫ ১৫:০৯:৪৩
শুরু হোক সংঘাতমুক্ত পথ চলা

মো. আতিকুর  রহমান : সময়টা অস্থির, বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধ, মানবতা অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া, সিটি নির্বাচন, ইত্যাদি ইস্যুতে সঙ্কটের মুখে দেশ ও জিম্মি দশায় জাতি। দেশে সহিংস রাজনৈতিক নানা পরিস্থিতির মধ্যে আমরা এবার পহেলা বৈশাখকে বরণ করলাম। দেশকে নিয়ে আমাদের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা অনেক।

৩০ লক্ষ শহীদের স্বপ্নের বৈষম্যহীন ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির একটি সুন্দর সোনার বাঙলা গড়ার। এই আশায় ভর করে বাংলা নববর্ষ ১৪২২ সনকে বরণ করতে চাই। আমরা এগিয়ে যেতে চাই বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে দাসসুলভ মনোবৃত্তি ও রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে নিজেদের মর্যাদা, সম্ভ্রম এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করে আত্মমর্যাদাশীল ও সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে। বাংলা নতুন বছরে শুরুতে রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি আমাদের প্রত্যাশা দেশ ও জনগণের স্বার্থে তারা সংহিস রাজনীতি কর্মকান্ড পরিহার করে জনগণের প্রতি আস্থা এনে সকলে মিলে এদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে, এমনটিই জাতি অধিক প্রত্যাশা করেন।

কেননা শত সমস্যার মধ্যেও জীবন ধাবমান। সঙ্কট ও সন্ত্রাসের হিংস্র ছোবল যতই আসুক না কেন তা সম্মিলিত ভাবে প্রতিহত করে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। সঙ্কট থেকে বাঁচাতে হবে দেশ, অর্থনীতি ও হতদরিদ্র্য জাতিকে। দেশে বিরাজমান সঙ্কট নিরসনে নিজেদের সঙ্গে নিজেদের যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে চিরতরে। যদিও একথা সত্য, এদেশের রাজনীতিতে শুভবোধ সম্পন্ন রাজনীতিবিদদের অভাব দিন দিন তীব্র হচ্ছে। অর্থ ও ক্ষমতার কাছে দেশে উদার গণতন্ত্র, মানবতা ও রাজনৈতিক আর্দশ ভুলন্ঠিত হচ্ছে।

রাজনীতি আজ যেন ইজারানীতিতে পরিণত হয়েছে। দেশের গুটি কয়েক সুযোগসন্ধানী ও সুবিধাভোগীদের সুবিধা আদায়ের এ হেন রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। বর্তমানে দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলির সংঘাতময় রাজনৈতিক কর্মকান্ড এবং ক্ষমতা দখলের অসহিষ্ণু প্রতিযোগিতার ফাঁদে পড়ে দেশের সাধারণ জনগণের অবস্থা যে নাকানিচুবানি এবং অনিশ্চয়তার খাদের কিনারে দোদুল্যমান তা দ্রুত অবসান করতে হবে। যদিও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বাড়িভাড়া বৃদ্ধি, শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য, ব্যবসা-বাণিজ্যে নাজুক দশা, দুনীর্তি, দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলার অবনতি, মানবাধিকার বহির্ভূত নানা কর্মকান্ড, জননিরাপত্তাহীনতা, গুম, খুন, শিল্পে মন্দাভাবসহ সংকুচিত আয়ের উৎসে যে টালমাটাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এর আসু সমাধান করতে সরকারসহ সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

রাজনৈতিক দলগুলির পারস্পারিক আস্থাহীনতা এবং ক্ষমতা দখলের বেপরোয়া সংঘাত এবং অবরোধ ও হরতালের মতো ব্যর্থ কর্মকান্ড দিয়ে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের সার্বিক অর্থনীতি যে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে যে ক্ষতি সাধিত হচ্ছে অন্তত এই ভাবনাবোধটুকু প্রতিটি রাজনীতিবিদদের চিত্তে নাড়া দিতে হবে। দেশ ও জনগণের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যদিও একথা চরম সত্য, রাজনৈতিক দলগুলির নীতি আদর্শে বিভাজিত জনগণ যার যার জায়গা থেকে নিজের পছন্দের দলকে সমর্থন দিচ্ছে। পাশাপাশি উক্ত সঙ্কটকে তাঁদের নিজস্ব ভাবনাবোধ, চিন্তাচেতনা, ধ্যান-ধারনার দিক থেকে বিচার বিশ্লেষণ করছে। তারপরও এদেশের শান্তিকামী প্রতিটি মানুষ চাচ্ছে সংঘাতবিহীন রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক জিম্মি দশা থেকে স্থায়ী মুক্তি। জনগণের এই প্রত্যাশা বাস্তবায়নে সকল রাজনৈতিক দল অধিক সচেষ্ট হবেন এমনটি নতুন বছরে শুরুতে আমাদের প্রত্যাশা।

কেবলমাত্র নিজেদের ব্যক্তিগত ও সুবিধাভোগীদের স্বার্থে দেশকে নিয়ে টানাহেঁচড়া, রাজনৈতিক মিথ্যাচার ও কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি চিরতরে বন্ধ করে বিরাজমান সমস্যার সমাধান করতে হবে। আমরা মনে করি, সরকারি-বিরোধী দলের নেতাদের সদিচ্ছাই পারে দেশের গণতন্ত্রকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে এবং দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি রোধ করে জাতিকে জিম্মি দশা থেকে মুক্তি দিয়ে। কেননা এদেশের জনগণ আস্থাহীন রাজনীতির হিংস্র দশা আর দেখতে চায় না। রাজনৈতিক দলগুলো যদি একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও আস্থা আনতে পারে তবে যে কোন সঙ্কট মোকাবেলা করা সম্ভব। অন্যথায় দেশে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট আরো অধিক ঘনীভূত হবে, যা এদেশকে আরো অন্ধকারের দিকে ঢেলে যেবে। যা কারো জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না।

দেশের গণতন্ত্রকে কার্যকর করতে চাইলে আগামী নির্বাচন কিভাবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করা সকল রাজনৈতিক দলকে সেই ব্যাপারে দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করতে হবে। নির্বাচন প্রক্রিয়ার জনগণের সন্তুষ্টি ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কোন কোন বিষয়কে অধিক গুরুত্বে আনা প্রয়োজন সেই বিষয়গুলির প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়ে আগামী নির্বাচন কী পদ্ধতিতে হবে এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি সমঝোতায় আসতে হবে। তবেই সকল দলের উপস্থিতিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারবে। কেননা নির্বাচন পরবর্তি সহিংসতা দেশের সার্বিক অগ্রগতির পথে বিরাট অন্তরায় সেই ভাবনা বোধটুকু জাগ্রত করতে হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের দলীয় প্রভাব থেকে মুক্ত করে স্বাধীন ভাবে কাজ করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে আরো অধিক স্বাধীন ভাবে কাজ করার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন বলার এমন হীন কালিমা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সকল দলের আস্থা অর্জন করতে হবে। অত্যন্ত দক্ষতা ও নিবিড় পর্যপক্ষেণের মাধ্যমে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করে নির্বাচন প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে সকল দলের অংশগ্রহণ ও নির্বাচন কমিশনকে সব পক্ষের সার্বিক সহযোগিতাই পারে দেশে শান্তিপূর্ণ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরি করতে। সামনের সিটি নির্বাচনে এমনই একটি দৃশ্য জাতি অবলোকন করবেন এমনটিই অধিক আশা করি। এক্ষেত্রে প্রয়োজন সরকার, রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশনের অধিক সদিচ্ছা।

যদিও এ দেশের সম্ভাবনাময়ি তরুণ ও যুবসমাজকে নিয়ে আমাদের অনেক আশা, তারাই এগিয়ে আসবে সঙ্কট নিরশনে। কেননা এদেশের সার্বিক উন্নয়ন আগামী দিনের তরুণদের হাতেই। তাই সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশের এই তরুণ সমাজকে সকল প্রকার অবক্ষয়ের হাত থেকে মুক্ত রেখে দেশের সার্বিক উন্নয়নে তাদের জন্য নতুন নতুন পরিকল্পনা, সততা, অভিজ্ঞতা ও দেশপ্রেম দিয়ে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বর্হিবিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

অতীতের সকল প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে দেশ ও দেশের অসহায়া মানুষগুলিকে বাঁচাতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। বাংলা নতুন বছরের শুরুতে এমনটিই আমাদের সকলের প্রত্যাশা। ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ এই বাণীকে বুকে ধারণ করে আমরা সকলে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। নতুন বছরের শুরুতে এটাই হোক সকলের ব্রত। দূর হোক সকল অন্ধকার আগামী দিনগুলো হোক দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর ও শান্তিময়।

লেখক : কলামিষ্ট


পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test