E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

'ঢাকা সিটি নির্বাচন ও আমার ভাবনা'

২০১৫ এপ্রিল ২৬ ১৯:৫৬:১১
'ঢাকা সিটি নির্বাচন ও আমার ভাবনা'

রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ : ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচন। আর এই নির্বাচনকে ঘিরে রাজধানী ঢাকা পরিণত হয়েছে একটা নির্বাচনী উৎসবের নগরীতে। বিভিন্ন পাড়া মহল্লার প্রায় প্রতিটি চায়ের দোকানে চলছে নির্বাচনী প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।

আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণে চলছে প্রচার প্রচারণা। সরাসরি দলীয় ব্যানারে এই নির্বাচন না হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদের সমর্থনের রূপরেখায় ভোটারদের কাছে তাদের দলীয় পরিচয় মূলত স্পষ্ট !

এর আগে টানা ৯২ দিন হরতাল অবরোধের নামে বিএনপি বিভিন্ন যানবাহনে পেট্রোলবোমা ও নাশকতায় মানুষ হত্যা, ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণসহ সারাদেশব্যাপী অসহনীয় নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসী তান্ডব চালিয়েছে। দেশের উন্নয়নের ধারা ব্যাহত করা ও সরকার পতনের লক্ষ্যে সন্ত্রাসী পথ অনুসরণ করে বিএনপি সারা দেশের সাধারণ মানুষ, শিশু, বৃদ্ধ, চাকরীজীবী, রিক্সাচালক, বাস-ট্রাক চালক, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী, এমন কি ঘুমন্ত মানুষকে পেট্রোলবোমা ছুঁড়ে পুড়িয়ে মেরেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ণ ইউনিটসহ দেশের প্রায় সব নামকরা মেডিকেলেই দগ্ধ মানুষের আর্তনাদ ও একের পর এক দগ্ধ মানুষের মৃত্যু দেশের মানুষকে একটা অদৃশ্য আতংকের মধ্যে ফেলে রেখেছিল। হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতিসহ ধ্বংসলীলাতে নিমজ্জিত করেছে দেশের সম্পদ ও বাধাগ্রস্থ হয়েছে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা।

এমনকি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও পদে পদে আতংকিত হয়েছে। বিএনপির এই তান্ডবলীলার হাত থেকে দেশ ও মানুষের জানমাল রক্ষায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ও দেশের জনগণকে সচেতন করে দেশের সকল বাধা অতিক্রম করার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছেন। সৃজনশীল রাজনৈতিক ও সময় উপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকার কিছুটা কঠোর হলেও তা রাষ্ট্রের কাছে সরকারের দায়িত্ব হিসাবেই করেছেন। কারণ দেশের কোন খারাপ অবস্থার দায় দেশের সরকার এড়াতে পারে না। যে দেশের মানুষকে বিদ্যুতের জন্য মোমবাতি বা হ্যারিকেন মিছিল করতে হতো, যে দেশের জনগণকে পানির জন্য কলসি মিছিল-মানববন্ধন করতে হতো, যে দেশের মানুষের গ্যাসের জন্য কুমড়া, লাউ, আলু, পটল নিয়ে মিছিল করতে হতো, সেই দেশের মানুষের আজ আর ওই সব দুর্ভোগ পোহাতে হয় না।

দেশ এখন খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণ। কৃষকরা এখন তাদের টাকা বালিশের নিচে নয়, ব্যাংকে রাখেন। এ দেশের বিদুৎ ব্যবস্থারও হয়েছে আমূল পরিবর্তন। বিদ্যুতের এখন শুধু খাম্বা নয়, বিদ্যুৎও সঞ্চালিত হয়। বাংলাদেশের আয়তনও এখন বহুগুণ বেড়েছে সমুদ্র বিজয় অর্জনের মাধ্যমে। নির্দিষ্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রসীমা নির্ধারণে বাংলাদেশের ভৌগলিক আয়তন পরিবর্তনের সাথে সাথে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং মায়ানমারের সাথে দীর্ঘদিনের সমুদ্রসংঘাতের অবসান হয়েছে। ঘরে ঘরে ইন্টারনেট পৌঁছে আইটি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের চাকা সচল হয়েছে।

এমন হাজারো উন্নয়নের দেশ এখন বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার সরকার অতিদ্রুত আমাদের এ দেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এতো কিছুর পরেও কেন একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটানোর জন্য এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ? তাদের রাজনৈতিক ভুলের কারণে কেন ৩০ লক্ষ শহীদ ও ৩ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের নিরীহ জনগণকে খেসারত দিতে হবে ? আফসোস বাঙালিরা ভুলোমনা, সবকিছু অতি সহজেই ভুলে যায় !
ক্ষমতালোভী বিএনপি’র প্রতিহিংসার বহি:প্রকাশ এই ধ্বংসলীলা দেশের সর্বস্তরের সচেতন জনগণ দ্বারা প্রত্যাখাত হবার পর, এলো এই ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নিবার্চন। আওয়ামীলীগ এই নির্বাচনে তাদের যোগ্য প্রার্থীই দিয়েছেন মেয়র ও কাউন্সিলর পদে। সমাজের সুখ্যাতি আছে এমন দুইজনকেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছে।

অপর দিকে বিএনপি প্রার্থী দিয়েছে রাজনৈতিক ইস্যু তৈরিতে সুবিধা হবে এমন দু’জনকে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এই নির্বাচনকে নিয়েছে তার পরবর্তী আন্দোলনের চাবিকাঠি হিসেবে। মূলত গুলশান কার্যালয়ের নাটকে বেগম জিয়া জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখাত হওয়ার পর নিজ বাসায় গিয়ে বসে বসে সময় কাটানো ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না! হয়তো সরকারের দেওয়া এই সিটি নির্বাচন তাকে আরেকটা নাটক করার সুযোগ দিয়েছে। এই নির্বাচনে পরাজয়েও বিএনপি’র লাভ, আবার জয়েও বিএনপি’রই লাভ। পরাজয়ে আন্দোলনের একটা নতুন ইস্যু তৈরি হবে। ইস্যু বিহীন আন্দোলন যে জনগণ পছন্দ করে না। সেটা হয়তো তিনি(খালেদা) ইতোমধ্যে অনুমান করে নিয়েছেন। আর এই জন্য দুইজন অযোগ্য প্রার্থীকে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে। আর জয়লাভ করলে ‘নাই মামা থেকে কানা মামা ভালো’ টাইপ চিন্তা-ভাবনা করে আন্দোলন জোরদার করার চেষ্টা চালাবে। বিএনপি’র লক্ষ্যই যেখানে শুধু আন্দোলন, তার জন্য সুযোগ সৃষ্টি হলো এই ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। ‘এমনিতেই নাচনি বুড়ি, তার উপরে ঢোলের বারি’ এ রকম অবস্থা আর কি!

অপরদিকে আওয়ামীলীগ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীতার ব্যাপারে খুবই সতর্ক ছিলো। তাইতো তাদের প্রার্থীরাও জনগণের মনের মত। আওয়ামীলীগ চায় একটি অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে রাজধানীর ভোটাদের সর্বাধিক অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়াই আওয়ামীলীগ সরকারের লক্ষ্য। আওয়ামীলীগ চায় তাদের দেওয়া এই যোগ্য প্রার্থীরাই জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত ভোটে জয়লাভ করুক।

বিএনপির গত আন্দোলনের সময় থেকে যেমন জঙ্গি বা সন্ত্রাসী দল হিসেবে জনগণের কাছে স্বীকৃতি পেয়েছে, অপরদিকে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াও স্বীকৃতি পেয়েছে ‘জঙ্গিনেত্রী’ বা ‘বোমামানবী’ হিসেবে। সভ্যতার এই অত্যাধুনিক ডিজিটাল যুগে অসভ্যতা ও খারাপের পতন অবধারিত। সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের দরবারে দেশের জনগণের পক্ষে ক্ষমতায়ন, দারিদ্র বিমোচন ও দেশের স্বাধীনতা বিরোধী শত বাধা উপেক্ষা করে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে প্রতিনিয়ত অক্লান্ত প্ররিশ্রম করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে বিশ্বে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। দেশের মানুষের ভাগ্য ফেরানোই তাঁর সরকারের একমাত্র লক্ষ্য।

খালেদা জিয়া রাজনৈতিক ‘কোমা’ থেকে ফিরে এসে আবার কি নতুন ফন্দি আটছেন বা নির্বাচনের পর কি করবেন তা নিয়ে শেখ হাসিনা মাথা ঘামাচ্ছেন না। তাঁর বিশ্বাস মুক্তিযুদ্ধের এই দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে যাবেন এবং দেশের জনগণ তার এই উন্নয়ন ও শান্তির পক্ষে থাকবেন। তিনি হয়তো বুঝে গেছেন মিথ্যা আর অভিনয় দিয়ে বিএনপি আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনাকে নষ্ট করে জনগণকে বোকা বানাতে পারবে না। আর সরকার পতনের আন্দোলন করার মত ইস্যু বিএনপি কোন দিন এই উন্নয়নের দেশে পাবে না, অথবা রাজনৈতিক কোমায় অবস্থান করা একটা দল কোনদিনই তার অপশক্তি দিয়ে জনগণের ক্ষমতাকে খর্ব করতে পারবে না। সেই শক্তি বা সামর্থ আর বিএনপি’র এই মুহূর্তে নেই।

যাইহোক আমি ভেবে পাই না, একটা রাজনৈতিক দল কতটা দেউলিয়া হলে একটা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তার দলের সমর্থক প্রার্থীর জন্য ওই দলের সর্বোচ্চ নেতার মাঠে নামতে হয়। এছাড়া কিইবা করবেন তিনি ? ‘নেই কাজ খই ভাজ’ অবস্থা আর কি ! এতো গুলো মানুষ হত্যার পর বাসায় গিয়ে রংচং মেখে খালেদা জিয়া কোন মুখে আবার সেই সব জনগণের কাছে ভোট ভিক্ষা চাইতে যাচ্ছেন? যানবাহন পোড়ানো ও মানুষ পুড়িয়ে মারার বিরতিতে আবার তাদেরই কাছে যাচ্ছেন ভোট চাইতে!

আপনি খালেদা জিয়া, এই তো কিছুদিন আগেও পুতুল সেজে বসে ছিলেন আপনার গুলশান কার্যালয়ে। ইজি চেয়ারে শুয়ে-বসে পায়ের উপর পা তুলে সুবিশাল টিভি স্ক্রিনে আরাম করে দেখছিলেন আপনার লেলিয়ে দেওয়া নেতা-কর্মী-সন্ত্রাসীবাহিনী দ্বারা দেশ-জাতির ধ্বংসলীলা। আর একটার পর একটা লাশের হিসাব কষছিলেন! আজ আপনি খালেদা কতটা নির্লজ্জ হলে আপনার হত্যা করা সন্তান হারা মা, ভাই হারা বোন, পঙ্গু হওয়া বাবা ও স্বজন হারা জনতার কাছে ভোট ভিক্ষা চাইতে পারেন ? ওই হরতাল-অবরোধে কত ব্যবসায়ীকে ফকির বানিয়েছেন, কত গরীবের পেটে লাথি মেরেছেন, ভুলে গেছেন কি সেই সব দুঃসহ স্মৃতি ?

জনগণ ভুলে নাই। জনগণ ভুলতে পারে না, সেই দুঃসহ স্মৃতি ! জনগণ এখন অনেক সচেতন। তারা চায় দেশের উন্নয়ন ও শান্তি। যদি ব্যতিক্রম কিছু না হয় তাহলে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জনগণ আওয়ামীলীগের প্রার্থীদেরই ভোট দিবে এবং আওয়ামীলীগের প্রার্থীরাই বিজয়ী হবে ! কারণ আওয়ামীলীগকে ভোট দিয়ে দেশের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখাই হবে সচেতন জনগণের বিচক্ষণতার পরিচয়। বোমা মেরে মানুষ মারার ফলাফল জনগণ খুব ভালভাবেই বুঝিয়ে দিবে বলে আমার বিশ্বাস।

একটা স্বাধীন দেশে স্বাধীনতা বিরোধী ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে আধুনিক শিক্ষিত বাঙালীদের ভোট পাওয়া যায় না এটাই বিএনপিকে বুঝিয়ে দেওয়ার মোক্ষম সময়। তাই আমার বিশ্বাস, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সমর্থিত প্রার্থীরাই জয়ী হবে, প্রতিফলন ঘটবে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার নীরব প্রতিবাদের।

লেখক : রাজনৈতিক কর্মী।

পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test