E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

শ্রীবরদীর আদিবাসী শিশুদের স্বাস্থ্য সেবার বেহাল দশা

২০১৪ আগস্ট ০৯ ১৪:৪১:৫৯
শ্রীবরদীর আদিবাসী শিশুদের স্বাস্থ্য সেবার বেহাল দশা

শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুরের শ্রীবরদীতে অপুষ্টিতে বড় হয় আদিবাসী শিশুরা। বিকাশের সময় ০-৫ বয়সে যত্নহীনভাবে বেড়ে উঠে। মায়েরাও সন্তান ধারন এবং প্রসূতিকালীন সময়ে স্বাস্থ্য সেবা পায়না। স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ কেন্দ্র না থাকার কারণে জটিল রোগীদের পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে। এভাবেই বেড়ে উঠে শিশুরা।

মায়েরাও বেচেঁ থাকে পরিপূর্ণ ঝুঁকি নিয়ে। ফলে শিশুরা মারা যাচ্ছে মারাত্মক সংক্রমন, শ্বাসকষ্ট, সময়ের আগে জন্ম নেওয়া, নিউমোনিয়া, ধনুষ্টংকারসহ বিভিন্ন রোগে। এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এমন বাস্তবতায় ৯ আগস্ট পালিত হচ্ছে বিশ্ব আদিবাসী দিবস।
শ্রীবরদী উপজেলার গারো পাহাড়ের বাসিন্দা ও আদিবাসী সংগঠন ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সুশীল নকরেক বলেন, আদিবাসীদের বসবাস স্মরণাতীত কাল থেকে এ গারো পাহাড়ে। বংশনুক্রমেই আমাদের বাস পাহাড়ে। অথচ পাহাড়ে এখনও অবকাঠামোর তেমন উন্নয়ন হয়নি। যোগাযোগ ব্যবস্থাও নাজুক। বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। ২২/২৩ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো হাসপাতাল নেই। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র গুলোও ৫/৬ কিলোমিটার দূরে।
জানান, উপজেলার প্রাচীন এবং বৃহত্তম গ্রাম হাড়িয়াকোনায় প্রায় ২০০ পরিবারের বাস। এ গ্রাম থেকে ২৩ কি. মি. দুরে উপজেলা সদরে একমাত্র উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। যোগাযোগের জন্যে সড়ক ব্যবস্থা নাজুক। এ কারনে অনেক গর্ভবতী মায়েদের জটিল এবং মূমূর্ষ রোগীদের পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। স্বাস্থ্য সচেতনতা বা পরামর্শ কেন্দ্র না থাকায় শিশুরা বড় হয় যত্নহীন ভাবে। অনেক শিশু ভোগে অপুষ্টিতে। বয়সের সাথে বাড়ন্ত শিশুদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও পরির্চযার ধাপগুলো জানার কোন মাধ্যম নেই। তাই এমনিতেই বেড়ে উঠে শিশুরা। অনেকে মারা যায়।
জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান এবং শিশু স্বাস্থ্য গবেষণার তথ্য মতে, জন্মের পর থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে শিশুদের মস্তিকের ৭০% ভাগ কোষের সংযোগ হয়। এ সময়ে শিশুদের পরিপূর্ণ পুষ্টি ও যত্ন দিতে হয়। কিন্তু এখানকার শিশুরা খাদ্য এবং পরিবেশগত কারণে তা থেকে বঞ্চিত হয়। এসব কারনেও শিশুরা বেড়ে উঠলেও শারীরিক এবং মানষিকভাবে বাধাগ্রস্থ হয় বলে জানান শিশু পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ড. আশিকুল হক। তার দেওয়া তথ্যমতে, ০-৫ বছরে পুষ্টি প্রাপ্তি এবং পরিচর্চার উপর নির্ভর করেই শিশুদের পরবর্তী জীবনে সুস্থ-থাকা, বুদ্ধিবৃত্তি ও বিকাশ। কিন্তু অনেকটা অভাব, অসচেতনা এবং সুযোগের অভাবেই পাহাড়ি শিশুরা এক অনিশ্চয়তার মধ্যে বড় হয়। অনেক বাবা মায়েরাও এসব বিষয়ে না জানার কারণে প্রকৃতিগত নিয়মেই জীবনযাপন করে। অনেক সময় সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যারও চিকিৎসাও পায়না তারা। এ জন্যে পরবর্তী সময়ে জটিল সমস্যা মোকাবেলা করতে হয় তাদের। কৃমি, চোখে ঝাপসা দেখা, রক্তস্বল্পতা, ঠাণ্ডা, নিউমোনিয়াসহ নানা সমস্যার চিকিৎসা সময়মত পায়না। এসব কারণে এক সময় জটিল আকার ধারন করে শিশুদের।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এ পাহাড়ের অধিবাসীদের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা কবিরাজি। তাতে অনেক রোগ ভাল হলেও মা এবং শিশু স্বাস্থ্য সমস্যায় তা সামান্যই কাজে লাগে। জাতি সংঘের শিশু অধিকারের ৫৪টি ধারা সম্বলিত সার্বজনীন শিশু অধিকার সনদ ঘোষণা করেছে। পাঁচটি মৌলিক বিষয়ের সবগুলোর বাস্তবায়ন প্রয়োজন তাদের। বেঁচে থাকা, বেড়ে উঠা, এবং বিকাশের অধিকারটি তাদের জন্যে সবার আগে প্রয়োজন। স্থানীয় প্রতিষ্ঠান-কালচারাল এন্ড ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (সিডিএস) এর তথ্য মতে, শ্রীবরদী উপজেলায় আদিবাসীদের মোট জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ শিশু। তাদের অন্যান্য চাহিদার মত স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা ভাল না। এসব অঞ্চলে শিশুদের নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করা প্রয়োজন।
শ্রীবরদী ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রাঞ্জল এম. সাংমা বলেন, বেসরকারী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ওর্য়াল্ড ভিশন বাংলাদেশ, শ্রীবরদী এডিপি স্পন্সরশীপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার নিয়ে কিছুটা কাজ করে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল এবং অস্থায়ী। শিশুরা সরাকারি ভাবে ৬টি রোগের টিকা পায় কোনমতে। তাই পাহাড়ি মানুষের অধিকার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিতে শিশু স্বাস্থ্যসহ সকল সুযোগ ও সেবা পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন। এদিকে বিশ্ব আদিবাসী দিবস উপলক্ষে শ্রীবরদীর হারিয়াকোনা এলাকায় স্থানীয়ভাবে র‌্যালি-আলোচনা সভা ও স্বাস্থ্য সচেতনতামুলক নানা কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়েছে।
(এইচবি/এএস/আগস্ট ০৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৯ আগস্ট ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test