মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা
.png)
দেবেশ চন্দ্র সান্যাল
মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবময় ঘটনা। এই যুদ্ধের মধ্য দিয়েই আমরা লাভ করেছি স্বাধীন দেশের নিজস্ব পতাকা। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ তদানীন্তন বাঙালিদের অবিসংবাদিত নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা, শেষবানী ও শেষ পাকিস্তানি হানাদার সৈন্য থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নিদের্শ পেয়ে বাঙালি পুলিশ, ইপি আর, সৈন্য ও বাংলার ছাত্র-যুবক, কৃষক- শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনগন বর্বর হানাদার পাকবাহিণীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এই যুদ্ধই মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্ব মানচিত্রে অঙ্কিত হয় একটা দেশের নাম-স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে যারাঁ অস্ত্র হাতে সরাসরি পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন কেবল তাঁদেরই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হয় তা নয়। সেই সঙ্গে অস্থায়ী মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রী, সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী, ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলোতে ত্রান বিতরণসহ যারা বিভিন্ন সেবামূলক কাজে অংশ নিয়েছেন তারা, কোলকাতায় স্থাপিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র্রের পরিচালকমগুলী, সাংবাদিক, ভাষ্যকার ও শিল্পী, দেশের অভ্যন্তরে, ভারতে ও বর্হিবিশ্বে অন্যান্য দেশে অবস্থান করে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন। পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যদের দ্বারা ধর্ষিতা বীরঙ্গনা মা-বোন প্রমুখকেও মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকা করা হয়েছে।
২৫ মার্চ’৭১ কাল বাত্রিতে তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান এর নির্দেশে পূর্ব পাকিস্তানের গর্ভনর ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক লে. জেনারেল টিক্কা খানের নেতৃত্বে বিশ্বের জঘন্নতম জ্বালাও, পোড়াও, হত্যা সহ বিভিন্ন মানবতা বিরোধী কাজ শুরু হয়েছিল। পাকিস্তানি শাসক এই অপারেশণ-এর নাম দিয়ে ছিল “ অপারেশন সার্চ লাইট”। পাকিস্তানি সৈন্যরা “অপারেশন সার্চ লাইট” শুরু করার পরই জাতির-পিতা আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। ২৫ মার্চ’৭১ কাল রাত্রি থেকে আত্ম সমর্পনের পূর্ব-মুহূর্ত পর্যন্ত ঢাকা সহ দেশের সর্বত্র বিভিন্ন মানবতা বিরোধী কাজ করেছে। পাকিস্তানি হানাদার সৈন্যদের সাথে যোগ দিয়েছিল এ দেশের স্বাধীনতা বিরোধীরা।
স্বাধীনতা বিরোধীরা পাকিস্তানি সৈন্যদের সহ যোগিতা করার জন্য পীচ কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আল শামস ও অন্যান্য বাহিনী গঠন করেছিল। পাকিস্তানি সৈন্য স্বাধীনতা বিরোধীদের সহযোগিতায় সারা দেশ ব্যাপি অগ্নি সংযোগ, জ্বালাও, পোড়া, হত্যা, গন হত্যা, ধর্ষণ নিপীড়ন লুটতরাজ, চাঁদা বাজি, ধর্মান্তরকরন সহ বিভিন্ন মানবতা বিরোধী কাজ করেছে। নিরাপত্তার অভাবে ২৫ মার্চ এর পর প্রায় এক কোটি স্বাধীনতা কামী মানুষ পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে শরণার্থী হয়েছিল। ১০ এপ্রিল গন প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এর অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়েছিল। ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চল মেহেরপুর মহকুমার ভবের পাড়া আম্রকাননে (মুজিবনগর নাম করণ করে) বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহণ করে মুক্তি যুদ্ধ পরিচালনা করেছিল। অস্থায়ী গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি তখন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। তাঁর অনুপস্থিতে তাঁর নামে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন অন্যান্যরা। মুক্তিযুদ্ধের সেনা বাহিনী প্রধান ছিলেন কর্ণেল (অব:) এম.এ জি ওসমানী।
জাতির পিতার আহ্বানে সারা দিয়ে আমি জীবন পণ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিলাম। আমি এবং আমার রণাঙ্গনের সাথী অনেকেই ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে ছিলাম। আমার কারণে রাজাকারদের আলাটিমেটামে আমার গোটা পরিবার কে ভারতের আসামের মানিকার চর শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিতে হয়ে ছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধ গন দেশের জন্য জীবন পণ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিলেন। অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসতে হাসতে দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। “ জয় বাংলা” ছিল মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গণের প্রধান ধনী। মুক্তিযুদ্ধেযোগ দেওয়া ছিল একটি বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। দেশ স্বাধীন না হলে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিচ্ছিন্নতা বাদি হিসাবে চিহ্ন হতো। বিচ্ছিন্নতা বাদি হিসাবে তাদের বিচার হতো। একটি পরিবারের এক জন সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধে যোদ দিলে তাঁর গোটা বাড়িতে থাকতে পারতো না। বাড়ি ঘর সব ফেলে অন্যত্র আত্মগোপন করে থাকতে হতো অথবা ভারতে আশ্রয় নিতে হতো। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হতে আমাদের হয়তো আরো সময় লাগতো।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল পাকিস্তানি শাসকদের বঞ্চনার, নিপীড়নের আর অধিকার হরোনের বিরুদ্ধে বাঙালিদের ন্যায়ের যুদ্ধ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল ন্যায়ের যুদ্ধ। পাকিস্তানি হানাদাররা ছিল অন্যায় পথে। সৎ পথে থাকলে নিশ্চিত ভাবে বিজয় হয় এবং প্রাকৃতিক ভাবে একটি পথ বেড় হয়ে আসে। মুক্তিযোদ্ধাদের ও এমন একটা সুযোগ চলে এসেছিল। পাকিস্তানি সরকার ফান্দি এটেছিল বাংলাদেশের মহান মুক্তি যুদ্ধ কে বিশ্বে ভারত- পাকিস্তানের যুদ্ধের রুপ দিবে। তাহলে বিশ্ব ভারত পাকিস্তানের সমর্থকরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়বে। বিশ্ব যুুদ্ধ লেগে যাবে। পাকিস্তান ৩ ডিসেম্বর’ ৭১ প্রথম ভারতীয় বিমান ঘাটিতে আক্রমন করে। ভারতীয় সৈন্যরা তখন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগ দেয়। ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের মুক্তি বাহিনীর সাথে থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করায় পাকিস্তানি সৈন্যরা ১০ দিনের মধ্যে যৌথ বাহিনীর কাছে আত্ম সমর্পন করতে বাধ্য হয়। ১৬ ডিসেম্বর’ ৭১ পূর্ব পাকিস্তানি সৈন্য প্রধান নিয়াজী একানববই হাজারাধিক সৈন্য নিয়ে মাথা নীচু করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দানে) আত্ম সমর্পন করে। মুক্তিযদ্ধের বিজয় হয়।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।
পাঠকের মতামত:
- উৎপাদনে ফিরল বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট
- গোপালগঞ্জে সহিংসতা : ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ ৪৭৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা
- সোনারগাঁয়ে চাঁদাবাজি আর দখলদারিত্বের মহা উৎসব
- সালথায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর থেকে গৃহবধুর লাশ উদ্ধার
- গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারালো আরও কমপক্ষে ৭১ ফিলিস্তিনি
- ‘নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই, একদিনও দেরি হবে না’
- অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা আজ
- সালথায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী ও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ
- ‘আজকের মধ্যেই আলোচনা শেষ হবে’
- প্রেসক্লাব জামালপুরের সাধারণ সম্পাদকের মায়ের মৃত্যু
- ঢাকায় টানা ৫ দিন বৃষ্টির আভাস
- সালথায় অজ্ঞাত ব্যক্তির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার
- প্রবাসীদের ভোটার কার্যক্রমে জাপান যাচ্ছেন ইসি সচিব আখতার
- এশিয়ান কাপের আগে পূর্ণ প্রস্তুতির লক্ষ্য বাফুফের
- ‘নারীকে কামনার বস্তু হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে’
- জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ
- ‘হাসিনার নির্দেশেই আন্দোলনে মারণাস্ত্রের ব্যবহার হয়’
- ‘আ.লীগ দেশের জন্য রাজনীতি না করে ভারতের তাবেদারি করেছে’
- শ্যামনগর বিএনপি’র একাংশের বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ
- কুষ্টিয়ায় জিকে খালে মিলল অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ
- প্লট জালিয়াতি, শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের বিচার শুরু
- ‘আমরা এমন জাতি নিজেদের সন্তানদেরও পুড়িয়ে মারি’
- ‘শেখ হাসিনাকে ১০ বার ফাঁসিতে ঝোলালেও তার অপরাধ কমবে না’
- ভারতে শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৭১ লাখ ৩৩ হাজার ৪ জন
- নিজেকে বাঁচাতে মাকে দিয়ে বাদির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা সন্ধিগ্ধ আসামী রফিকুলের!
- ‘কোন মানুষ অর্থের কাছে চিকিৎসায় হেরে যাবে না, সবাই বাঁচবে’
- রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল ৩ মোটরসাইকেল আরোহীর
- ঝিনাইদহে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ কর্মী নিহতের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি
- প্রজন্মের কাছে এক মুক্তিযোদ্ধার খোলা চিঠি
- প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি, বিএনপি নেতা চাঁদের নামে মামলা
- মা
- ঝিনাইদহে বজ্রপাতে মৃত দুই কৃষক পরিবারকে তারেক রহমানের মানবিক সহায়তা প্রদান
- পারিবো না
- অতিরিক্ত ঠান্ডায় ঠাকুরগাঁওয়ে বেড়েছে শিশু রোগীর সংখ্যা
- রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করছে জান্তা
- লক্ষ্মীপুরে গুলিবিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু
- লক্ষ্মীপুরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন
- নৌকার পক্ষে সমর্থন জানানেল এডভোকেট আব্দুল মতিন
- লক্ষ্মীপুরে দোকান ঘর বিক্রির নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা
- রুমা-থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি: ১৭ নারীসহ ৫২ জন রিমান্ডে
- মহুয়া বনে
- সাংবাদিক নাদিম হত্যার প্রতিবাদে শেরপুরে প্রতিবাদ সমাবেশ
- বিজনেস সামিটের পর্দা নামছে আজ
- রামগঞ্জে ইমতিয়াজ ও রায়পুরে অধ্যক্ষ মামুন উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত
- শায়েস্তাগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে মুখোমুখি দুই সাংবাদিক