E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

লকডাউন ও বাংলাদেশ

২০২০ এপ্রিল ০৭ ১৮:৩০:১৩
লকডাউন ও বাংলাদেশ

আলাউদ্দিন হোসেন


লকডাউন শব্দের বাংলা অর্থ অবরুদ্ধ করে রাখা। অর্থাৎ যে শহরে করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাবে সেই শহরকে বা এলাকাকে লকডাইননের আওতায় আনা হবে। আর কোয়ারেন্টাইম বা হোম কোয়ারেন্টাইম অর্থ হলো (একাকিত্ব) নিরাপদ স্থানে থাকা, যা অনেকেরই অজানা, আর এজন্য গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষগুলো এসবে এত মত্ত না হয়ে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে হরদমে।

কারন তারা লকডাউন অর্থ জানে না,তাই তারা মিলামিশা করছে একে অন্যের সাথে। চুপিসারে আড্ডাও চলছে চায়ের দোকানগুলোতে। মহাবিশ্বের মানবজাতি যখন করোনা ভাইরাসের ভয়ে আতংকিত ও দিশাহারা হয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা চাইছেন, প্রার্থনা করছেন করোনা মহামারী থেকে মুক্তির জন্য।

চীনের ওহান শহর থেকে উৎপত্তি হয়ে এখন মহাবিশ্ব দখল করে একচেটিয়া রাহত্ব করে যাচ্ছে ভয়ংকর এই করোনা নামক ভাইরাস। একে একে পৃথিবীজুড়ে বিস্তার লাভ করে লক্ষ্য লক্ষ্য প্রাণ নিয়ে এখন বাংলাদেশ দখল করেছে করোনা।

এখন বাংলাদেশ সরকার করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য যে বিশাল বাজেট ঘোষণা করে ঘরে ঘরে খাদ্য পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তার অধিকাংশ ক্ষেত্রে খাদ্য-সামগ্রী সঠিকভাবে বন্টন না হওয়ার ধরুন খেটে খাওয়া মানুষগুলো জীবীকার তাগিদে কাজের সন্ধানে বেড়িয়ে পড়ছে এবং তারা মাঠে-ময়দানে কাজ করে সন্ধায় বাড়ি ফিরছে,এটা তাদের লকডাউন কি না,তা তারা বুঝতে পারছে না, তারা শুধু এটুকুই জানে যে, তাদের জীবন ধারনের জন্য কাজ করতে হবে, পরিবার পরিচালনা করতে হবে।

পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো তাদের দেশে লকডাউন ঘোষণা দেওয়ার পর জনগণের খাদ্য-সামগ্রী বাড়ি বাড়ি বা নিরাপদ স্থানে রেখে দিচ্ছে, যার দরকার নিয়ে নিচ্ছে। এতে করে তাদের জনগণকে লকডাউনের বাইরে যেতে হচ্ছে না।

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হলেও অনেক পিছিয়ে আছে বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশ থেকে। মহামারী করোনা প্রতিরোধ করতে বাংলাদেশ সরকার সারাদেশেব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করে দিয়ে বসে নেই,চলছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সেবা কার্য, ঢাকাসহ সারাদেশে চলছে হোম কোয়ারেন্টাইন। শহর বাসী, সরকারি চাকরিজীবী, সমাজের ধনী ব্যক্তিরা রীতিমতো হোম কোয়ারেন্টাইম পালন করছে কিন্তু গ্রামের গরীব, দিন মজুর, খেটে খাওয়া মানুষ মানছে না হোম কোয়ারেন্টাইম।

তারা বুঝেও না বোঝার ভান করে অবিরত ছুটে চলেছে মাঠেঘাটে কর্মের সন্ধানে। কাজ না করলে যাদের পেটে ভাত জোটে না, তাদের আবার হোম কোয়ারেন্টাইম,তাদের আবার লকডাউন!!

বাংলাদেশ সরকার লকডাউনের সময় চলাকালীন সময়ে যেসব খেটে খাওয়া মানুষগুলো কর্মে যোগ দিতে পারবে না বা কাজ করার কোনো সুযোগ পাবে না, তাদের সরকারি প্রতিনিধির মাধ্যমে বা স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে খাদ্য-সামগ্রী বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিবে। কিন্তু কি দেখে এসব, কে কি করে!
সরকার তো ঘোষণাদাতা মাত্র, মাঠে এসে দেখার সুযোগ নেই, সরাসরি জনগণের সাথে যোগাযোগ সুযোগ নেই বললেই চলে।

লকডাউন চলাকালীন সময়ে যারা খাদ্যের অভাব অনুভব করবে তারাই করোনার ত্রাণ পাওয়ার অধিকার রাখবে, যাদের ঘরে খাদ্যের অভাব নেই,তারাও যদি এখানে এসে ভাগ বসায় বা চুরি করে নিয়ে আত্মসাৎ করে তাহলে গরীব দূখী মেহনতি মানুষ এসকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেই তো।

কর্মহীন জীবনে আমজনতার দল পেটে ক্ষুধা নিয়ে যখন ত্রাণের খাবার পাচ্ছে না,তখন লকডাউন অমান্য করে কাজের জন্য বেড়িয়ে পড়ছে এবং পুলিশ বা সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে জরিমানা ঘুনছে।

পুলিশ প্রশাসনের কাজ যেখানে জনগণের পাশে থেকে তাদের খাদ্যের অভাব দূর করা বা খাবার পৌঁছে দেওয়া,সেখানে তারা তা না করে এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে জনগণের মনে ভয় ঢুকিয়ে বাড়ির দিকে ধাবিত করছে।

কিন্তু দেশের আপামর জনগণকে যদি সঠিকভাবে করেনার ত্রাণ- সামগ্রী বিলি করে বলা হত, যে যেখানে আছে সে সেখানেই থাকবে, তাহলে সবাই মানতে বাধ্য হত। পেটে ক্ষুধা রেখে কেউ কারো কথাই শুনতে চায় না। এই ভয়াবহ মহামারীতে যারা ত্রাণের টাকা বা খাদ্য মেরে খাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠিন থেকে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে
সেনাবাহিনীর হাতে ত্রাণের খাদ্য-সামগ্রীর দায়িত্ব দিয়েই জনগণ তাদের নেয্য অধিকার পাবে এবং দেশ পুরোপুরি লকডাউন করা সম্ভব হবে।

লেখক :শিক্ষার্থী (এমবিএ)সরকারি এডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, পাবনা।

পাঠকের মতামত:

০১ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test