E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

অটিজম নিয়ে কুসংস্কার নয়, চাই সচেতনতা

২০২২ এপ্রিল ০২ ১৪:২১:৫০
অটিজম নিয়ে কুসংস্কার নয়, চাই সচেতনতা

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


আজ শনিবার ২ এপ্রিল ১৫ তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস ২০২২। অটিজম বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হবে। এবারের প্রতিপাদ্য এমন বিশ্ব গড়ি, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির প্রতিভা বিকশিত করি’।অটিজমে আক্রান্ত শিশু ও বয়স্কদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০০৭ সালে ২ এপ্রিলকে ‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’ হিসেবে পালনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর থেকে প্রতি বছর দিবসটি পালন করা হচ্ছে। একসময় অটিজম ছিল একটি অবহেলিত জনস্বাস্থ্য ইস্যু। এ সম্পর্কে সমাজে নেতিবাচক ধারণা ছিল।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা ও স্কুল সাইকোলজিস্ট সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নিরলস প্রচেষ্টায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অটিজম বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ২০০৭ সালে এ বিষয়ে দেশে কাজ শুরু করেন। সায়মা ওয়াজেদ এ অবহেলিত জনস্বাস্থ্য ইস্যুতে তার বিরাট অবদানের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃতি পেয়েছেন।

অটিজম বা অটিস্টিক স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার শিশুদের একটি স্নায়ুবিক-বিকাশজনিত সমস্যা(নিউরোডোপোভমেন্টাল ডিসঅর্ডার)যা আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের তৈরি করা মানসিক রোগের শ্রেণিবিন্যাসের ভিত্তিতে রচিত। অটিজম উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেরও একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা।আজ অটিজম নিয়ে বিশেষ কলাম লিখেছেন, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা, ডা.এম এম মাজেদ তাঁর কলামে লিখেন... সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও ইদানীং অটিজম আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৯০ সালে এদের সংখ্যা বিশ্বব্যাপী প্রতি দশ হাজারে একজন ছিল। ২০০৯ সালে ১৫০ জনে একজন এবং এরপর প্রতি এক’শ জনে একজন অটিস্টিক ছিল।

সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে, গ্রামের তুলনায় শহরে অটিস্টিক শিশু জন্মের হার বেশি। গ্রামে প্রতি ১০ হাজারে ১৪ জন এবং শহর এলাকায় প্রতি ১০ হাজারে ২৫ শিশু অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। মেয়ে শিশুর চাইতে ছেলে শিশুর মধ্যে অটিজমে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় আড়াই গুণ বেশি। এছাড়াও দেশে ১৬ থেকে ৩০ মাস বয়সি শিশুদের মধ্যে অটিজম বিস্তারের হার প্রতি ১০ হাজারে ১৭ জন। গ্রামের চেয়ে শহরে অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা বেড়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মতে, দেশের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মধ্যে ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। তবে ধারণানুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় দেড় লাখের মতো অটিজম আক্রান্ত মানুষ রয়েছে। প্রতি বছর তার সঙ্গে যোগ হচ্ছে আরও প্রায় ১ হাজার ৫০০ শিশু। যুক্তরাষ্ট্রের অটিজম সোসাইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ১ শতাংশ অটিজম আক্রান্ত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, 'অটিজম কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। অটিজম মূলত মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশের প্রতিবন্ধকতাজনিত একটি মানসিক রোগ। এটি মানুষের হরমোনজনিত সমস্যার বহিঃপ্রকাশ। এটির প্রতীকী রং নীল। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের প্রত্যেকের বৈশিষ্ট্য যেমন আলাদা; তেমনি তাদের প্রতিভাও ভিন্ন। কেউ হয়তো ভালো ছবি আঁকতে পারছে, কেউ বা নিজের কাজগুলো গুছিয়ে করতে পারে। এসবই অটিজমে আক্রান্ত শিশুর সাফল্য বলে খুশি থাকতে হবে।'

এছাড়াও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর জন্য কেবল মাকে নয়, বাবাকেও সময় ও সহযোগিতা করতে হবে। জিমনেসিয়াম, সুইমিং পুলে সপ্তাহে অন্তত একদিন বিশেষ শিশুদের জন্য সুযোগ রাখা প্রয়োজন। বিশেষ শিশুদের অভিভাবকদের অবশ্যই কাউন্সিলিং দরকার। কারণ এই শিশুদের অভিভাবকরা ভালো থাকলে তাদের সন্তানটিও ভালো থাকবে।আর অটিজম শিশুদের এমন একটি মানসিক রোগ যাতে তারা কথা, কাজ-কর্ম বা খেলাধুলা ইত্যাদির মাধ্যমে অন্য শিশুদের সাথে সম্পর্ক তৈরী করতে পারে না। কেবল শিশু নয়, বড়দের সাথেও তারা সম্পর্ক গড়তে পারে না। মোটকথা ইহারা সামাজিকতা আয়ত্ত করতে পারে না। সারাক্ষণ নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সদা সর্বদা কল্পনার এক অবাস্তব জগতে ডুবে থাকে তারা। নানা রকমের কাল্পনিক শব্দ শোনে, কাল্পনিক দৃশ্য দেখে। কিছু বিষয়কে তারা খুবই পছন্দ করে এবং দিনরাত সেগুলো নিয়েই পড়ে থাকে।

আবার কিছু বিষয়কে তারা ভয় পায়, সহ্য করতে পারে না। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের বিচার-বুদ্ধির কোন উন্নতি হয় না। ডাক্তারী ভাষায় এদেরকে বলা হয় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বা কোন একটি বিষয়ে অত্যধিক ঝোঁকসম্পন্ন শিশু । সাধারণভাবে এদেরকে বুদ্ধিপ্রতিবন্দ্বি হিসেবে গণ্য করা হয়। শেষকথা হলো সারা জীবনই পরিবার, সমাজ এবং দেশের জন্য তারা একটি বোঝা হয়ে বেঁচে থাকে। তার চাইতেও দুঃখজনক ব্যাপার হলো, এলোপ্যাথিক ডাক্তাররা এবং মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা অটিজমের কোন কাযর্কর চিকিৎসা নাই বলে ঘোষণা দিয়ে থাকেন। ফলে অভিবাবকরা হতাশ হয়ে সন্তানের রোগমুক্তির আশা ত্যাগ করেন।

অপদার্থ সন্তানের ভবিষ্যৎ ভেবে ভেবে চোখের পানি ফেলা ছাড়া পিতা-মাতার আর কিছুই করার থাকে না। অথচ আমরা অনেকেই জানি না যে, উপযুক্ত হোমিও চিকিৎসা অবলম্বন করলে খুব সহজেই অটিজম আক্রান্ত শিশুদেরকে সুস্থ করে তোলা যায়। হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানী এবং হোমিও ডাক্তারদের লেখায় অটিজমের অগণিত কেইস হিস্ট্রি দেখা যায়, যাদেরকে তারা সফলভাবে রোগমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।ব্রিটিশ হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডাঃ বার্নেটের লেখায় দেখা যায় যে, আজ থেকে একশ বছরেরও বেশী সময় পুর্বে তিনি এমনকি মধ্যবয়ষ্ক অটিজমের রোগীকেও সুস্থ করতে সক্ষম হয়েছেন।

সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোতে ব্যাপকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, ডিপিটি, পোলিও, হাম, হেপাটাইটিস, এমএমআর প্রভৃতি টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় শিশুরা অটিজমে আক্রান্ত হয়। পক্ষান্তরে টিকার বিষক্রিয়ায় যে-সব রোগ হয়, তাদের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথিক ঔষধের সাফল্য একটি ঐতিহাসিক সত্য। ইন্টারনেটে যে-কেউ একটু খোঁজ নিলে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিয়ে অটিজম থেকে মুক্ত হওয়া অসংখ্য শিশুদের কেইস হিস্ট্রি দেখতে পাবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার কমপিউটার বিজ্ঞানী এমি ল্যানস্কি-র শিশু সন্তান যখন দুরারোগ্য মানসিক ব্যাধি অটিজমে আক্রান্ত হয়, তখন বিশ্বখ্যাত সব সাইকিয়াট্রিস্ট, নিউরোলজিষ্টরা কয়েক বছর চেষ্টায়ও তাকে সুস্থ করতে ব্যর্থ হয়। তারা ঘোষণা করে যে, এই রোগের কোন চিকিৎসা নাই।কিন্তু এমি লিনষ্কির বিশ্বাস হয় নাই যে, দুনিয়াতে অটিজমের কোন চিকিৎসাই নাই।

পরবর্তীতে স্থানীয় একজন বিশেষজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা নিলে শিশুটিকে অটিজম থেকে সম্পর্ণরূপে আল্লাহর রহমতে মুক্তি পায়। এই ঘটনার পর এমি ল্যানস্কি নাসার চাকুরি ছেড়ে দিয়ে হোমিওপ্যাথির উপর একটি ডিপ্লোমা কোর্স করে বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ার অটিজমসহ দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় আত্মনিয়োগ করেছেন। তার মতে, “হোমিওপ্যাথিতে প্রচলিত কিছু থিউরীকে আপাত দৃষ্টিতে অবৈজ্ঞানিক মনে হয় ; কিন্তু হোমিওপ্যাথি যে কাজ করে আমার ছেলেই তার জ্বলন্ত প্রমাণ”। বস্তুত হোমিওপ্যাথিক ঔষধে এমন সব জটিল শারীরিক-মানসিক রোগও আরোগ্য হয়, যাকে অন্যান্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে একেবারে অসম্ভব-অবিশ্বাস্য মনে করা হয়ে থাকে।এজন্য হোমিওপ্যাথিক ডাক্তাররা বিশ্বাস করেন যে, হোমিওপ্যাথি হলো অসম্ভবকে সম্ভব করার চিকিৎসা বিজ্ঞান।

অটিজম কি?

অটিজম একটি মানসিক বিকাশ ঘটিত সমস্যা যা স্নায়ু বা স্নায়ুতন্ত্রের গঠন ও পরিবর্ধন জনিত অস্বাভাবিকতার ফলে হয়। অটিজমে আক্রান্ত শিশুর স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে অসুবিধা হয়। অটিজমের কারণে কথাবার্তা, অঙ্গভঙ্গি ও আচরণ একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে আবদ্ধ থাকে আবার অনেকক্ষেত্রে শিশুর মানসিক ও ভাষার উপর দক্ষতা কম থাকে। সাধারনত ১৮ মাস থেকে ৩ বছর সময়ের মধ্যেই এই রোগের লক্ষণগুলো দেখা যায়।

অটিজমে আক্রান্ত একটি শিশুর কিছু আচরণগত সমস্যা লক্ষ্য করা যায়, যেমন- সে সামাজিকভাবে মেলামেশা করতে পারে না। শুধু কথা না বলা অটিজমের মধ্যে পড়ে না। তার সাথে তার অন্যান্য আচরণ, সামাজিকতা, অন্য একটি শিশুর সাথে অথবা বয়স্ক মানুষের সাথে মেশার বিষয়ে গণ্ডগোল থাকলে ধরে নিতে হবে শিশুটি অটিজমে আক্রান্ত হতে পারে।

অটিজমে আক্রান্ত শিশু কথা বলতেও পারে আবার একদম নাও বলতে পারে। আবার কথা বললেও হয়তো ঠিকমতো গুছিয়ে বলতে পারে না। আবার একজন সুস্থ মানুষ যেভাবে কথা বলে সেভাবে নাও বলতে পারে। অর্থাত্‍, সে হয়ত কথা বলতে পারে কিন্তু সুন্দরভাবে গুছিয়ে বলতে পারে না। এক্ষেত্রেও শিশুটি অটিজমে আক্রান্ত হতে পারে।

অটিজম কেন হয়?

অটিজমের নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। পরিবেশগত ও বংশগত কারণেও এই রোগ হতে পারে। সাধারণত জটিলতা, লক্ষণ অথবা তীব্রতার উপর নির্ভর করে এর কারণগুলো বিভিন্ন হতে পারে। কি কি কারনে অটিজম হতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে সতর্ক হলে অটিজম প্রতিরোধ সম্ভব হতে পারে।

চিকিত্‍সকদের মতে, ভাইরাল ইনফেকশন, গর্ভকালীন জটিলতা এবং বায়ু দূষণকারী উপাদানসমূহ স্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডার হওয়ার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন জীনের কারণে অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডার হতে পারে। আবার কোন কোন শিশুর ক্ষেত্রে জেনেটিক ডিজঅর্ডার যেমন- রেট সিন্ড্রোম বা ফ্র্যাজাইল এক্স সিন্ড্রোমের সাথে এই রোগটি হতে পারে। কিছু জীন মস্তিষ্কের কোষসমূহের পরিবহন ব্যবস্থায় বাধা প্রদান করে এবং রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি করে। জেনেটিক বা জীনগত সমস্যা বংশগতও হতে পারে আবার নির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই এই রোগটি হতে পারে। ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধকের সাথে অটিজমের কোনও সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।

অটিজমের সাধারণ লক্ষণ

অটিজমের লক্ষণগুলো সঠিকভাবে জানার মাধ্যমে অটিজম বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সাধারণত যে লক্ষণগুলো দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো হলঃ

অটিস্টিক শিশুদের ঘুম সম্পর্কিত কিছু সমস্যা থাকে। ঘুম স্বাভাবিক না হওয়ার কারণে তাদের মনোযোগ ও কাজের সক্ষমতা কমে যায় এবং আচার আচরণে সেটা পরিস্কার বোঝা যায়।

অনেক শিশুর সঠিক সময়ে কথা বলতে সমস্যা হয়। মুলত ১৮ মাস থেকে ২ বছর সময়ের মধ্যে এটা বোঝা যায়।
অনেক অটিস্টিক শিশুর মাঝে অল্প মাত্রায় হলেও বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতা লক্ষ্য করা যায়। অনেক শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি সঠিকভাবে হয় না। অটিজমে আক্রান্ত অনেক শিশু দেখা, শোনা, গন্ধ, স্বাদ অথবা স্পর্শের প্রতি অতি সংবেদনশীল অথবা প্রতিক্রিয়াহীন থাকতে পারে।

সাধারণত অটিস্টিক শিশুদের প্রতি চারজনে একজনের খিঁচুনি সমস্যা হতে পারে। অটিজম থাকা শিশুদের মানসিক অস্থিরতার ঝুঁকি বেশী থাকে। এসকল শিশুর বিষন্নতা, উদ্বিগ্নতা ও মনোযোগে ঘাটতিসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

অটিস্টিক শিশুদের প্রায়ই হজমের অসুবিধা, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটের গ্যাস, বমি ইত্যাদি হতে পারে।

অটিজমের প্রধান লক্ষণ

* ছয় মাস বা তার বেশি বয়সে স্বতঃস্ফূর্ত হাসি বা যে কোন আবেগ প্রকাশ করতে পারেনা।

* ১২ মাস বয়সের মধ্যে আধো আধো কথা না বলা সেইসঙ্গে ইশারা বা হাত বাড়িয়ে কিছু চাইতে বা ধরতে পারেনা।।

* চোখে চোখ রেখে তাকাতে পারেনা।

* ভীড় এড়িয়ে একা থাকতে পছন্দ করে।

* অন্যের অনুভূতি বুঝতে পারেনা।

* একই নিয়মে চলতে পছন্দ করে। কোন পরিবর্তন এলেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়।

* একই শব্দ বারবার বলতে থাকে বা একই আচরণ বারবার করে যেমন: একইভাবে হাত বা মাথা নাড়ানো।

* বিশেষ রং, শব্দ, গন্ধ, স্পর্শ বা স্বাদের প্রতি কম বা বেশি মাত্রায় সংবেদনশীল হয়।

* কোন বিষয় বা বস্তুর প্রতি অতিমাত্রায় আগ্রহ দেখায়।

অটিজম এর হোমিও সমধান

কোনও শিশু অটিজমে আক্রান্ত মনে হলে অনতিবিলম্বে বিশেষজ্ঞ চিকিত্‍সকের বা হোমিওপ্যাথি রেজিস্টার্ড অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় অটিজম নির্ণয় করতে পারলে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করলে অটিজম এর ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়াগুলো অনেক সফলভাবে মোকাবেলা করা যায়। শিশুর কি ধরনের অস্বাভাবিকতা আছে সেটা সঠিকভাবে নির্ণয় করে, অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি রেজিস্টার্ড চিকিৎসক হোমিওপ্যাথি মতে রোগীলিপি তৈরি করে নির্দিষ্ট হোমিওপ্যাথি মাযাজম নির্ধারণ করে শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ নির্ণয় করে সুনির্বাচিত হোমিওপ্যাথি ঔষধ প্রয়োগে চিকিত্‍সা করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।

এই ধরনের শিশুদের জন্য প্রচুর বিশেষায়িত স্কুল আছে, সেখানে তাদের বিশেষভাবে পাঠদান করা হয়। এ ধরনের স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে একজন অকুপেশনাল থেরাপিষ্টের পরামর্শ নিতে হবে। তিনি পরামর্শ দেবেন, কোন ধরনের স্কুল আপনার শিশুর জন্য উপযুক্ত হবে।

অনেক অটিস্টিক শিশুর কিছু মানসিক সমস্যা যেমন- অতিরিক্ত চঞ্চলতা, অতিরিক্ত ভীতি, ঘুমের সমস্যা, মনোযোগের সমস্যা ইত্যাদি থাকতে পারে। অনেক সময় এরকম ক্ষেত্রে, চিকিত্‍সক শিশুটিকে ঔষধ দিতে পারেন। এ বিষয়ে অসংখ্য লক্ষণ ভিত্তিক হোমিওপ্যাথি ঔষধ আছে। নিবিড় ব্যবহারিক পরিচর্যা, স্কুল ভিত্তিক প্রশিক্ষণ, সঠিক স্বাস্থ্য সেবা এবং প্রয়োজনে সঠিক ওষুধের ব্যবহার একটি শিশুর অটিজমের সমস্যা নিয়ন্ত্রনে আনতে অনেকখানি সহায়ক হয়। যথাযথ সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে অটিস্টিক শিশুদের সঠিক ভাবে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে হবে।

অটিজম প্রতিরোধে করণীয় কি?

সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই এটি প্রতিরোধ করতে হবে। পরিবারে কারো অটিজম অথবা কোন মানসিক এবং আচরণগত সমস্যা থাকলে, পরবর্তী সন্তানের ক্ষেত্রে অটিজমের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে পরিকল্পিত গর্ভধারণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় অধিক দুশ্চিন্তা না করা, পর্যাপ্ত ঘুম, শিশুর সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন ইত্যাদি ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।যেমন-বেশি বয়সে বাচ্চা না নেওয়া।বাচ্চা নেয়ার আগে মাকে রুবেলা ভেকসিন দিতে হবে।গর্ভাবস্থায় চিকিত্‍সকের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ খাওয়া যাবে না।মায়ের ধূমপান, মদ্যপানের মত কোন অভ্যাস বা মাদকাসক্ত থাকলে বাচ্চা নেয়ার আগে অবশ্যই তা ছেড়ে দিতে হবে। সন্তান বা বাচ্চা নিতে পিতারও ভূমিকা রয়েছে, এজন্য পিতাকেও উত্তেজক মাদকদ্রব্য, মদ্যপান, মাদকাসক্ত এড়িয়ে চলা দরকার।বাচ্চাকে অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

পরিশেষে, আসুন আমরা সবাই অটিজম সম্পর্কে সচেতন হই। বিশেষকরে গর্ভাবস্থায় মায়ের প্রতি যত্নবান হই। যেসব সমস্যার কারণে শিশুর অটিজমসহ অন্যান্য রোগের সৃষ্টি হতে পারে, সেইসব কারণ সম্পর্কে সচেতন হই। সেইসাথে পরিবার সমাজ এবং রাষ্ট্রের সর্বস্তরে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের প্রতি সমবেদনা ও ভালোবাসা সৃষ্টি করি। তাদের সুস্থ করে তোলার মাধ্যমে দেশের সম্পদে পরিনত করি। যাতে তারাও সুস্থ হয়ে তাদের উপযোগী বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে পারে। তাহলেই একজন অটিস্টিক শিশু বা ব্যক্তি এই সুন্দর পৃথিবীতে তার বেঁচে থাকার উপলক্ষ্য পাবে।

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য, প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

পাঠকের মতামত:

১৬ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test