নেশায় বুঁদ নয়া প্রজন্ম, হুঁশ নেই কারো!
মীর আব্দুল আলীম
আমাদের কি বিবেক বলে কিছু নেই? নেই কোনোই দায়-দায়িত্বও! প্রকাশ্য দিবালোকে দেশের বিভিন্ন জেলা অলিতেগলিতে শিশুরা নেশা করে। বিষাক্ত পলিথিনে ‘ড্যান্ডি’র নেশায় আসক্ত এসব শিশু। ছেলে শিশু, মেয়ে শিশু মিলেমিশে নেশায় বুঁদ হয়। এমন সংবাদ দেশের জাতীয় দৈনিক গুলোতে হরহামেশাই দেখছি আমরা। খোদ রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশ এলাকায় প্রকাশ্যে প্রশাসনের চোখের সামনে নেশায় বুঁদ হতে দেখা যায় এসব পথশিশুকে। এমন দৃশ্য দেখে সবাই; কিছু বলে না। তাই একে বারে সড়কে কিংবা ডিভাইডারে থোলা জায়গায় আওতা পর্দা ছাড়াই জটলা বেঁধে বসে নেশা করে শিশুর দল। যেন দায় নেই কারো, দায়বদ্ধতাও নেই। প্রশ্ন হলো- পুলিশ প্রশাসনের সামনে, দ্বায়িত্ববান সকলের চোখের সামনে অবুঝ শিশুরা নেশা করে কী করে? এভাবে নেশায় বুঁদ নয়া প্রজন্ম, আমাদের হুঁশ কবে হবে?
সেদিন রাতে (১৩ মার্চ) আমার শ্রদ্ধেয় মেজো মামা এখলাছ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজহারুল হক ভুঁইয়ার টেলিফোন পেলাম। বোধ করি তিনি সেদিনই যাত্রাপথে এভাবে শিশুদের প্রকাশ্যে নেশা করতে দেখেন। আমাকে মোবাইল ফোনে বলছিলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের শিমরাইলে পথের ধারে প্রকাশ্যে ১০-১১ বছরের শিশুরা পলিথিনে ভরে কী যেন নেশা করছে। এটা নিয়ে একটা কলাম লিখো।
সরকার ওদের পুনর্বাসন করুক। আমরাও না হয় সহযোগিতা করব’। দায়বদ্ধতা থেকেই হয়তো তিনি এমন কথা বলেছেন। আমি বললাম, ‘ড্যান্ডির নেশায় আসক্ত এসব শিশু।
কথাগুলো বলতে আমারও লজ্জা হওয়া উচিত ছিল। আমিও তো এ দেশেরই একজন গর্বিত নাগরিক।’ মাস দুই আগে ছেলেকে রাজধানীর আরামবাগের নটের ডেম কলেজ থেকে আনতে গিয়ে কলেজের রাস্তায় কয়েকজন পথশিশুর জটলা দেখলাম। ওদের মুখ থেকে গানও শোনা যাচ্ছিল, ‘ভালোবাসি, ভালোবাসি, তুমি কম কম, আমি বেশি’। বুঝলাম, ওরা বেশ ফিলিংসে আছে। ওদের প্রত্যেকের হাতে পলিথিন। মুখে পলিথিন লাগিয়ে তারা ড্যান্ডি টানছে। ওদের একজন রায়হান। বয়স আট। জানাল, ‘বাবা-মা থ্যাইকাও নাই। ট্রেনে করে দুই বছর আগে নরসিংদী থেকে কমলাপুর আসি। মাল টানতে টানতে এখানে থাকা। বন্ধুদের সঙ্গে প্রথমে সিগারেট খাই। তারাই ড্যান্ডি ধরাইয়া দেয়। ড্যান্ডি খাওয়ার পর নিজেকে রাজা মনে হয়। ড্যান্ডি বানাইয়া খাইলে মনে দুঃখ থাকে না।’ প্রশ্ন করা মাত্রই মুচকি হেসে রিমন বলে, ‘মানুষের মাল টানা, রিকশা, ঠেলাগাড়ি ঠেলে, কেউ ভিক্ষা করে ড্যান্ডির টাকা জোগাড় করে।’
শুধু নটর ডেম কলেজ রাস্তা নয়, কমলাপুর স্টেশনের সামনের রাস্তা, ব্রিজের ওপর, আট নম্বর প্ল্যাটফরম, ছয় নম্বর বাস কাউন্টার সংলগ্ন ফুটপাত এবং খালি জায়গায় প্রতিদিন প্রায় ২০০ পথশিশু ড্যান্ডি খেয়ে বসে বসে ঝিমায়। মুখে পলিথিন দিয়ে শ্বাস নিতে মগ্ন থাকে। কী আশ্চর্য কথা। শিশুদের হাতে এমন নেশা। রাজধানীর অতি নিকটে শিমরাইলে (চিটাগাং রোড) এমন নেশায় আসক্ত আরজ আলী। বয়স বেশি হলে ১১ হবে। বয়সের চেয়ে বেশি ইচড়েপাকা সে। বলে কি না, ‘দুই বেলা ড্যান্ডি খাইলে হয়। খাবার না খাইলেও চলে। ড্যান্ডি খাইলে ক্ষুধা লাগে না। ৬০ টাকা লাগে কিনতে। আপনারাই
কন ৬০ টাকায় কি দুই বেলার খাবার জোটব?’ ড্যান্ডির মরণফাঁদে আটকে পড়া এ শিশুর প্রশ্নের জবাব কে দেবে? কেন এমন নেশার ফাঁদে জড়াল আমাদের শিশুরা?
সালমা বয়স ১১ হবে। সে বলে কি না, ‘জীবনে সবই খেয়ে দেখেছি। প্রথমে বিড়ি খাইছি, এরপর গাঁজা। এখন পলিথিন টানি। এটার খরচ কম। কথার ফাঁকে পলিথিনের ভেতর জুতোর আঠা (গাম) মেশাচ্ছিল সে। পরে পলিথিনে ফুঁ দিল মেয়েটি। পলিথিনে মুখ দিয়ে বড়ো বড়ো শ্বাস নিল। এভাবে কিছুক্ষণ শ্বাস টানার পর আরাম করে বসার চেষ্টা করল, কিন্তু পারল না। জুতোর গাম পলিথিনে আটকে গেলে দুর্গন্ধ হয়। এরপর পলিথিন ফুঁ দিয়ে ফোলালে ভেতরে গ্যাসের সৃষ্টি হয়। মাদকাসক্তরা ওই গ্যাস নিশ্বাসের সঙ্গে টেনে নেয়। এতে নেশা হয়।
বর্তমানে শিশুদের (আট থেকে ১৭ বছর) মধ্যে এ পদ্ধতির নেশা খুবই জনপ্রিয়। এটা সংক্ষেপে ড্যান্ডি নামে পরিচিত। শিশু-কিশোর মাদকাসক্তদের নিয়ে কোনো জরিপ না থাকলেও বিভিন্ন উন্নয়ন
সংস্থার হিসাবে এ সংখ্যা অন্তত সাত-আট হাজার। অভিভাবকহীন সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশু-কিশোর মাদক নিতে নিতে একসময় জড়িয়ে পড়ে নানা অপরাধে। ‘ড্যান্ডি’ এখন পরিণত হয়েছে মরণ নেশায়। রাজধানী ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের শহরতলীসহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এর ব্যাপকতা। লাগামহীন পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটে চলছে এর বিস্তৃতি। মাদক ব্যবসায়ীদেরও সহজ টার্গেটে পরিণত হচ্ছে স্কুল-কলেজের তরুণ-তরুণীরা।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট সূত্র মতে, ঢাকা বিভাগে মাদকাসক্ত শিশুর প্রায় ৩০ শতাংশ ছেলে এবং ১৭ শতাংশ মেয়ে। পথশিশুদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন জানায়, মাদকাসক্ত ৮০ শতাংশ পথশিশু মাত্র সাত বছরের মধ্যে অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। পথশিশুদের ভালো জীবন দেওয়ার অদম্য ইচ্ছে থেকে গড়ে ওঠা ‘অদম্য বাংলাদেশ’-এর আরিয়ান আরিফ বলেন, ‘আমরা
চেষ্টা করি এ শিশুদের মাদকাসক্ত হওয়া থেকে বিরত করতে। কিন্তু আমরাও সবসময় কাজ করতে পারি না। পুলিশি বাধার মুখোমুখি হতে হয়। যারা এ শিশুদের দিয়ে নানা অবৈধ কাজ করার চেষ্টা করে, তারা পুলিশের সহায়তা নিয়ে আমাদের নিরস্ত করার চেষ্টা করে। এরই মধ্যে আমরা যখন কিছু শিশুকে ভালো জীবন দিতে চাইলাম, বলা হলো আমরা শিশুদের পাচারের উদ্দেশ্যে এক জায়গায় রেখেছি, মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠানো হলো। এ রকম সিস্টেমে কেউ কেন এগিয়ে আসবে এদের সহায়তা
করতে? পুলিশ যদি একটু আন্তরিক হয় তাহলে এটা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব বলেই মনে করেন সমাজ বিশেষজ্ঞরা।’
দেশ থেকে কেন মাদক নিয়ন্ত্রণ হয় না? মাদক পাচার, ব্যবসা ও ব্যবহারকারীর ক্রমপ্রসার রোধকল্পে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পর্যায়ে নানারকম কার্যক্রম দেখা গেলেও তেমন কোনো ইতিবাচক ফল মিলছে না। মাদক শুধু একজন ব্যক্তি কিংবা একটি পরিবারের জন্যই অভিশাপ বয়ে আনে না, দেশ-জাতির জন্যও ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনছে। নানারকম প্রাণঘাতী রোগব্যাধি বিস্তারের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও খারাপ করে তুলছে। সত্য যে, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার প্রকট রূপের পেছনে মাদক অন্যতম বড়ো একটি উপসর্গ হয়ে দেখা দিয়েছে। এর মতো উদ্বেগজনক ঘটনা আর কী হতে পারে? মাদক সেবনের কুফল সম্পর্কে মহাসমারোহে আলোচনা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়। বিভিন্ন এনজিও মাদক সেবন নিরুত্সাহিত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। মাদকাসক্ত শিশুদের নিয়ে নানা সংগঠন নানাভাবে কাজ করছে কিন্তুই মাদকাসক্ত শিশুর সংখ্যা না কমে বরং বাড়ছে। সর্বনাশা মাদক থেকে যে কোনো মূল্যে তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সমাজ গবেষক।
পাঠকের মতামত:
- এক যে ছিল ছোট্ট ছেলে
- সালথায় সেচ্ছাসেবক লীগের ২ নেতা আটক
- নড়াইলে বিল থেকে যুবদল কর্মীর ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার
- ময়মনসিংহে সকল গুণাগুণ সমৃদ্ধ প্রকৃত দেশপ্রেমিক জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম
- ওজন কম, ৬৫ বকনা বাছুর বিতরণ না করে ফেরত
- ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে বলিউডে সিনেমার নাম রেজিস্ট্রেশনের হিড়িক
- বিশেষ প্রয়োজনে হজযাত্রীদের ভিসা বাতিল করা যাবে
- বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন
- সাভারে ট্রাকের ধাক্কায় বাসের ২ যাত্রী নিহত
- পাকিস্তান থেকে আরব আমিরাতে সরিয়ে নেওয়া হলো পিএসএল
- ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে স্থগিত হলো আইপিএল
- ‘কর অব্যাহতির ক্ষমতা এনবিআরের থাকছে না’
- ‘ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যেন পারমাণবিক যুদ্ধ না হয়’
- ‘খুনি লীগের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’
- ‘নির্বাচন বিলম্বিত হলে জনগণই রাস্তায় নামবে’
- ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে কি না, সিদ্ধান্ত জনগণের’
- চীনা যুদ্ধবিমান দিয়ে ভারতের দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান
- দুই দফা বেড়ে কমল স্বর্ণের দাম
- সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত একই পরিবারের ৪ জনকে দেয়া হবে পাশাপাশি কবর
- খালের পানিতে গোসলে নেমে লাশ হয়ে ফিরলেন আবদুর রহমান
- লংগদু নানিয়ারচর সড়ক নির্মাণে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত
- কাপ্তাইয়ে ইটবোঝাই ট্রাক উল্টে ৩ জন যাত্রী গুরুতর আহত
- কক্সবাজারে পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়
- সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও বাড়ল
- ‘গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এখনও ষড়যন্ত্র হচ্ছে’
- ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
- চালের মোকামে ভরপুর জোগান, তবু বেড়েছে দাম
- ভাগ্নের অন্যায় মেনে না নেওয়ায় মামাকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম
- ‘জনগণই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে’
- ‘চট্টগ্রামের রাজাঘাট এলাকা পাকবাহিনীর দখলে চলে যায়’
- দাবদাহের পর ঈশ্বরদীতে স্বস্তির বৃষ্টি
- টাঙ্গাইলের পথেঘাটে দীপ্তি ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া
- ‘লুট করা টাকায় নাশকতার পরিকল্পনা করছে আ.লীগ’
- ‘প্রচন্ড লড়াই শেষে পাকবাহিনী বরিশাল শহর দখল করে নেয়’
- প্রতি লিটার ১৬২.১৯ টাকা দরে পাম অয়েল কিনবে সরকার
- সোনার দামে ফের রেকর্ড, ভরি ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা ছাড়ালো
- কর্ণফুলী নদীতে ফুল ভাসিয়ে শুরু হলো বিষু উৎসব
- মিশন হেক্সা, আনচেলত্তির সঙ্গে ব্রাজিলের চুক্তি চূড়ান্ত, ঘোষণা শিগগিরই
- গ্যালাক্সি এ০৬ স্মার্টফোন উন্মোচন করল স্যামসাং
- অ্যাগুয়েরোর রেকর্ড ভেঙে সবার ওপরে সালাহ
- মদনে পাওনা টাকা চাওয়ায় নৃশংস ভাবে খুন
- ‘অন্তর্বতীকালীন সরকারের নির্দিষ্ট কোন রাজনৈতিক এজেন্ডা থাকার কথা নয়’
- পঞ্চগড়ের বোদায় লুটপাট শেষে ঘরবাড়িতে আগুন, মামলার বাদীকে হুমকি
- ঠাকুরগাঁওয়ে বিদ্যালয় ঘেঁষে পুকুর খনন, ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা
- বেনজীরের সাভানা রিসোর্টে এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের অভিযান