E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

রাকেশ-পরিতোষের পর সাইবার সিকিউরিটি আইনের শিকার তিথি সরকার 

২০২৪ মে ২২ ১৬:০৭:৩১
রাকেশ-পরিতোষের পর সাইবার সিকিউরিটি আইনের শিকার তিথি সরকার 

শিতাংশু গুহ


কলেজ ছাত্রী তিথি সরকার ইসলাম ধর্ম অবমাননার দায়ে ৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। যমুনা টিভি ১৩ই মে ২০২৪ জানায়, তিথি হজরত মুহম্মদকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে মন্তব্য খারাপ করেছিলেন। ২০২০ সালের ২৭শে অক্টবর নিউ এজ পত্রিকা জানিয়েছিল যে, জগন্নাথ ভার্সিটি’র জুলজি বিভাগের তৃতীয বর্ষের ছাত্রী তিথি সরকারকে ইসলাম ও মুহম্মদ সম্পর্কে মন্তব্য করার জন্যে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তিথি ভার্সিটি রাইটস কাউন্সিলের সাবেক সম্পাদক ও ওয়ার্ল্ড হিন্দু ষ্ট্রাগল কাউন্সিলের কনভেনর। তিথি সরকার দাবি করেছিলো যে, তাঁর ফেইসবুক একাউন্ট হ্যাক হয়েছে এবং এ ব্যাপারে তিনি থানায় একটি জিডি করেন। অক্টবরে তাকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়। পূর্বাহ্নে ছাত্ররা তিথির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। ১৩ই মে ২০২৪ বাংলানিউজ২৪ জানায়, ঢাকার সাইবার ট্রাইবুনাল বিচারক জুলফিকার হায়াৎ বহিস্কৃত জগন্নাথ ভার্সিটি’র ছাত্রী তিথি সরকারকে ৫বছরের সাজা দিয়েছেন। আদালত অবশ্য একগুচ্ছ নিয়ম বেঁধে দিয়ে বলেছেন, এগুলো মানলে তিথিকে জেলে যেতে হবেনা। 

ডেইলি ষ্টার ৪ঠা জানুয়ারি ২০২৩-এ জানিয়েছে যে, রাকেশ রায় নামক হিন্দু এক যুবককে আদালত ধর্ম অবমাননার জন্যে ৭ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই বছর ১২ ফেব্রুয়ারি রংপুরে আদালত পরিতোষ সরকার নামে অপর এক হিন্দু যুবককে ৪টি কারাদণ্ডের আদেশ দেয়, ১ বছর, ২ বছর, ৩ বছর ও ৫ বছর, মোট ১১ বছর। আদালত অবশ্য সবক’টি সাজা একত্রে শুরুর আদেশ দেন, এবং সেইমত পরিতোষকে ৫বছর সাঁজা খাটতে হবে। যায়যায়দিন ১৫ মে ২০২৪ খবর দিয়েছে যে, ফেনীতে নবীকে নিয়ে কটূক্তি করায় বাদল বণিক ৪০ নামে এক ব্যক্তিকে জনতা গণধোলাই দিয়েছে। ফেনী মডেল থানার ওসি শহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বাদল নামের এক যুবককে জনতার রোষানল থেকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। তবে বাদল দাবি করেন তিনি রাসূলকে গালি দেননি, পূর্ব শত্রুতার জেরে তাকে টার্গেট করা হয়েছে।

নয়াদিগন্ত পত্রিকা ১৫ মে ২০২৪ বলেছে, নবী ও ইসলাম ধর্ম অবমাননার দায়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থী স্বপ্নীল মুখার্জিকে সাময়িক বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে প্রক্টরিয়াল বডি। ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ধর্ম অবমাননার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা স্বপ্নীলের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। আমার সংবাদ মিডিয়া ২ মে ২০২৪ জানিয়েছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী কাওয়িং কেইন ও এডিসন দেওয়ান-এর বিরুদ্ধে নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগ উঠেছে। বুদ্ধিষ্ট প্রোভার্ড নামক ফেইসবুক পেইজের একটি ভিডিও শেয়ার দেন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী এডিসন দেওয়ান, এতে বুদ্ধের বিরুদ্ধে এক হুজুর কুৎসা করেন। কাওয়িং কেইন তাতে মুহম্মদ নাম নিয়ে মন্তব্য করেন। দেওয়ান তাতে হাহা রিয়েক্ট দেন্। কাওয়িং কেইন বলেছেন, তিনি নবীকে গালি দেননি, মুসলমানরা নামের আগে সবাই মুহম্মদ লিখে, হুজুরের নামের আগে মুহম্মদ আছে ভেবেই তিনি মুহম্মদ লিখে হুজুরের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছেন।

ডেইলী ষ্টার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ফেইসবুকে লালনের গান লিখে হিন্দু যুবকের গ্রেফতারের খবর দিয়েছিলো। সুধী মহলের প্রতিবাদের মুখে পুলিশ তাকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়। সাপ্তাহিক ব্লিজ পত্রিকা ৫ই মে ২০২৪ বলেছে, বাংলাদেশে শরিয়া ব্যাংক ফান্ড লাভ-জ্বিহাদের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভোরের কাগজ হেডিং করেছে: “ঐক্য পরিষদ ও পূজা পরিষদের উদ্বেগ: হিন্দু নারীদের ধর্মান্তকরণে প্রেমের ফাঁদ”। ভিডিও ১০ এপ্রিল জানিয়েছে, বগুড়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কালী মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুর ঘটনায় মাদ্রাসার শিক্ষক ফয়সল করিজ রেজা গ্রেফতার হয়েছেন। সময় টিভি ২৭ এপ্রিল ২০২৪ জানিয়েছিল যে, ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে মহিলা আম্পায়ারের অধীনে খেলতে রাজি ছিলেন না ক্রিকেটাররা।

এ ঘটনাগুলো সাম্প্রতিক সময়ে মিডিয়ায় এসেছে। এরকম আরো হাজারো ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। সবগুলো ঘটনা কি একসূত্রে বাধা যায়? নাকি প্রশাসন বা নেতাদের মতানুসারে এগুলো সবই বিচ্ছিন্ন ঘটনা? ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট বা সাইবার সিকিউরিটি এক্টে কয়েকশ’ হিন্দু ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিহিংসার শিকার হয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন, কেউ জেল খাটছেন, কেউবা বিনা বিচারে আটক আছেন, কেউ পলাতক, অথবা দণ্ডিত। বলে রাখা ভাল যে, বাংলাদেশের হিন্দুরা ইসলাম বা মোহাম্মদকে কখনই অপমান করেনা। এমনিতে তারা পদে পদে লাঞ্চিত, অপমানিত, ভীত, সন্ত্রস্ত, নির্যাতিত, তারা জানে ইসলাম বা মুহম্মদকে অবমাননা করলে মৃত্যু বা চরম নির্যাতন নিশ্চিত, কেউ কি ডেকে বিপদ আনতে চায়? বাস্তবতা হচ্ছে, একটি মহল এ অস্ত্রটি প্রায়শ: হিন্দুদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। প্রশাসন ও রাষ্ট্রযন্ত্র এতে মৌনতা অবলম্বন করছে, অথবা ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।

বাংলাদেশের হিন্দুরা মসজিদে ঢিল মারে না, অথচ মন্দির আক্রমন বা মূর্তি ভাঙ্গার ঘটনা দেশে একটি নৈমত্যিক ঘটনা। হুজুররা ওয়াজে ইসলামের মাহাত্ম্য বর্ণনার চাইতে হিন্দু দেবদেবী নিয়ে মুখরোচক মিথ্যা অহরহ বলে চলেছেন। দেখার কেউ নেই! ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট বা সাইবার সিকিউরিটি এক্ট হিন্দুদের বিরুদ্ধে ব্লাসফেমী আইনের মত ব্যবহৃত হচ্ছে। হুজুরদের ধরা হচ্ছেনা। বাংলাদেশে ধর্মীয় অনুভূতি আছে শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের, অন্যদের সেটি থাকতে নেই, অথবা তাদের অনুভূতি ভোথা হয়ে গেছে। প্রশ্ন জাগে, ধর্ম কি এতই ঠুনকো যে, একটি কিশোরী তিথি সরকার কি বললো তাতে পুরো প্রশাসন ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে? পশ্চিমা দেশে যীশুর বিরুদ্ধে অনেকেই কথা বলছেন। ভারতে দেবদেবীর বিরুদ্ধে হিন্দুরাই কথা বলছেন। তাদের কোন অনুভূতি নাই? যত অনুভূতি বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্টের। এ অনুভূতির জ্বালায় হিন্দুদের ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা’? আপাতত: এ থেকে পরিত্রানের উপায় দেখা যাচ্ছেনা।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

১৬ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test