E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

মরিচ চাষে লাখোপতি !

২০১৪ জুলাই ২৩ ১৫:৩৬:১৩
মরিচ চাষে লাখোপতি !

লালমনিরহাট প্রতিনিধি : গতবারের তুলনায় এবারে কাচা মরিচের ঝাঁঝ ক্রেতাদের তেমন বিপত্তিতে না ফেললেও রমজানের শেষে এসে সে ঝাঁঝ যেন ক্রেতাদের একটু অস্বত্বিতেই ফেলে দিয়েছে। গত সপ্তাহে যে কাঁচা মরিচের দাম ১৬ থেকে ১৭’শ টাকায় বিক্রি হতো সেই মরিচের মন এখন পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ২৬’শ টাকায়।

এতে করে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটলেও সাধারণ ক্রেতাদের মুখে বিষণ্নের ছাপ ফেলেছে। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার বির্স্তৃণ অঞ্চল জুড়ে মরিচের চাষ করে কৃষকদের অনেকেই এখন লাখোপতি। মরিচ চাষ করে অনেকেই তাদের ভাগ্যের চাকাকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন।
গত বছর রমজানের শুরুতেই কাঁচা বাজারের আলোচিত নাম ছিল কাঁচা মরিচের। যার বাজার দর হু-হু করে নদীর স্রোতের মতোই বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি মন ৪ হাজার টাকার মতো। শেষ পর্যন্ত এর লাগাম টেনে ধরতে সরকার পার্শ্ববতী দেশ ভারত থেকে মরিচ আমদানি করতে শুরু করলে ক্রেতাদের মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠে। সাধারণ মানুষ আবারো কাঁচা মরিচের সেই মরিচের ঝাঁলে ঘামতে শুরু করেছে।
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে এই ঝাঝাঁলো ফসলটি চাষ করে অনেকেই বণে গেছেন লাখোপতি। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এই মরিচ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিদিন ট্রাকে-ট্রাকে চলে যাচ্ছে । আর এই ধরনের সবজি চাষীদের ভাগ্যের দুয়ার খুলতে শুরু করেছে দিন-দিন। চলতি মৌসুমের শুরুর দিকে মরিচের দাম কম থাকলেও রমজানের মধ্যভাগে এসে কাঁচা মরিচের বাজার বাড়তে শুরু করে। ফলশ্র“তিতে মরিচ চাষীরা আজ লাখোপতি।
আদিতমারী উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন সবজি আর মসলা চাষের জন্য বিখ্যাত। মসলার মধ্যে মরিচের চাহিদা সব থেকে বেশি। চলতি মৌসুমে এ উপজেলা ১’শ ২০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হলেও অর্জিত হয়েছে দেড় শতাধিক হেক্টর জমিতে। কমলাবাড়ি, সারপুকুর, সাপ্টিবাড়ি, ভেলাবাড়ি ও দূর্গাপুর ইউনিয়ন সরেজমিনে ঘুরে মরিচ চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মৌসুমের শুরুতে কাঁচা মরিচ ছিল প্রতি মন ৭/৮’শ টাকা । যা উৎপাদন খরচের তুলনায় অনেক কম । তাছাড়া বাজারে চাহিদা কম থাকায় মরিচ ক্ষেতের যত্ন নেয়া বন্ধ করেন চাষীরা। দাম বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে পুনরায় তারা মরিচ ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকা নাজুক গাছগুলোকে নিবিড় পরিচর্যা করে সতেজ করে তুলেন চাষীরা। এর ফলে ফলনও হয় বাম্পার। বিগত দিনের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে এ বছরে কাঁচা মরিচের ফলন। তবে মৌসুমের শুরুর দিকে মরিচের দাম কম থাকায় অনেক চাষী মরিচ ক্ষেত নষ্ট করে অন্যান্য সবজি চাষ করেছেন। তাই বাম্পার ফলন হলেও বাজারে কাঁচা মরিচের চাহিদা বেশী বলে চাষী জানান। বড় কমলাবাড়ি গ্রামের মরিচ চাষী শৈলান চন্দ্র (৬৫) মাত্র ২৪ শতাংশ জমিতে ৫ হাজার টাকা খরচে মরিচ চাষ করে ওই ক্ষেত থেকে প্রতি সপ্তাহে দেড় থেকে দু’মন মরিচ বিক্রি করছেন। তার ওই জমি থেকে তিনি এ যাবৎ অর্ধলক্ষাধিক টাকার মরিচ বিক্রি করছেন। ওই গ্রামের আঃ সালাম নামের আর এক চাষী প্রায় দেড় একর জমিতে কাচাঁ মরিচ চাষ করে খরচ করেন ৭৫ হাজার টাকার উপরে। আর এ যাবত ওই জমি থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে তিন লক্ষ টাকার মরিচ বিক্রি করেছেন। তিনি আশা করছেন যদি ক্ষেত ভাল থাকে এবং দাম থাকে তবে আরও প্রায় লাখ তিন টাকার মতো পাবেন বলে আশাবাদী তিনি। দেওয়ানী পাড়ার রইচ উদ্দিন প্রায় ৫৪ শতক জমিতে কাচাঁ মরিচ চাষ করে করেন ২৫ হাজার টাকা খরচ করে ৯০ হাজার টাকার বেশি আয় করেছেন। শুধু তারাই নন কমলাবাড়ীর অধিকাংশই কৃষকই কাচাঁ মরিচ চাষ করে লাখপতি হয়েছেন। পাশাপশি অন্যান্য সবজি চাষ করে একইভাবে লাখপতি হয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে ফেলেছেন অনেক কৃষক। প্রতিদিন পাইকারা এসব উৎপাদিত সবজি কিনে বিভিন্ন পরিবহনযোগে বিক্রি করছে ঢাকা, ফেনি, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এক দিকে যেমন চাষীরা লাভবান হয়েছেন অন্যদিকে শ্রমিক,ব্যবসায়ীরাও লাভবান হয়েছেন। জেলার মধ্যে কমলাবাড়ী ইউনিয়ন সবজি উৎপাদনে সেরা এবং এর সুনাম ও রয়েছে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এভাবে মরিচ চাষ করে এখানকার অনেকেই লাখপতি বনে গেছে। পাল্টে গেছে এসব গ্রামের চিত্র।
আদিতমারী উপজেলা কৃষি অফিসার হামিদুর রহমান বলেন, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ বছর মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। কাঁচা মরিচের বাজার ভালো থাকায় চাষীরা এবার ভালোই আয় করছেন।
(ওএস/এএস/জুলাই ২৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৯ আগস্ট ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test