E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

শিরোনাম:

কেঁচো বিক্রি করে সফল ‘সেতু’ এখন উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা

২০২২ ডিসেম্বর ১১ ১৭:৫৪:৪৫
কেঁচো বিক্রি করে সফল ‘সেতু’ এখন উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা

স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, কেশবপুর : যশোরের কেশবপুরের বেকার যুবক শেখ মুহাইমিনুল ইসলাম সেতু (২৮) কেঁচো বিক্রি করেই এখন লাখপতি। মাত্র ৫ কেজি কেঁচো নিয়ে কেঁচো সার তৈরির মাধ্যমে শুরু হয় তার পথচলা। এখন সেতুর খামারে প্রায় ১০ মণ কেঁচো রয়েছে। এসব কেঁচো ও কেঁচো থেকে উৎপাদিত সার বিক্রি করে প্রতি মাসে তিনি আয় করছেন প্রায় এক লাখ টাকা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে তার উৎপাদিত কেঁচো। তিনি নিজে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পাশাপাশি সৃষ্টি করেছেন কর্মসংস্থান। তার দেখাদেখি অনেক বেকার শিক্ষিত যুবক ঝুঁকছেন এ পেশায়।

উপজেলার সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের চিংড়া গ্রামের কৃষক শেখ তছলিম উদ্দীনের ছেলে শেখ মুহাইমিনুল ইসলাম সেতু। বেকার এ যুবক কৃষি অফিসের পরামর্শে ৫ কেজি বিদেশী (থাইল্যান্ডের) কেঁচো সংগ্রহ করে ২০১৩ সালে কেঁচো সার তৈরির উদ্যোগ নেন। পরে ২০২০ সালে ‘চিংড়া ভার্মি কম্পোস্ট’ নামে কেঁচো ও সার উৎপাদনের একটি খামার তৈরি করেন। সেখানে ৩৫টি হাউজে তিনি গোবর ও কেঁচোর সমন্বয়ে কেঁচো সার তৈরি করে থাকেন। রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে মাটির গুনাগুণ ঠিক রাখতে কৃষকেরা ফসলের খেতে কেঁচো সার ব্যবহারে ঝুঁকতে থাকায় তার খামারের উৎপাদিত কেঁচো এবং কেঁচো সারের চাহিদা ব্যাপকহারে বাড়তে থাকে। খামারিরা বাণিজ্যিকভাবে কেঁচো সার তৈরি করতে তার খামারের কেঁচো কিনতে শুরু করেন।

শেখ মুহাইমিনুল ইসলাম সেতু বলেন, প্রথমে খামারে ১২ ফুট দৈঘ্য ও ৫ ফুট প্রস্থের পৃথক ৩৫টি হাউজে ১০ বস্তা করে গোবর ও ১০ কেজি করে কেঁচো মিশিয়ে দেন। এসব কেঁচো গবর খেয়ে মলত্যাগ করে এবং এর সাথে কেঁচোর দেহ থেকে রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) তৈরি হয়। ওই হাউজের ভেতরেই কেঁচো ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন করে থাকে। এক মাস পরে ছাকনির সাহায্যে হাউজের কেঁচো ও সার আলাদা করা হয়। পরে পুনরায় গোবর ও কেঁচো হাউজে দেওয়া হয় এবং ওই হাউজে জন্মানো অতিরিক্ত কেঁচো বিক্রির জন্য সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। প্রতি হাউজ থেকে মাসে প্রায় ৫ মণ কেঁচো সার উৎপাদিত হয়। সবমিলিয়ে প্রতি মাসে তার এ খামার থেকে প্রায় ১৭০ মণ কেঁচো সার উৎপাদন হচ্ছে। যা তিনি প্রতি কেজি ১২ থেকে ১৩ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এখন তার খামারে প্রায় ১০ মণ কেঁচো রয়েছে। প্রতি কেজি কেঁচো তিনি ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করেন। প্রতি মাসে এ খামারে উৎপাদিত কেঁচো ও কেঁচো সার বিক্রি করে তার প্রায় এক লাখ টাকা আয় হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, দেশীয় কেঁচো থেকে যে কেঁচো সার উৎপাদিত হয় তা অনেক কম। এজন্য দেশের বিভিন্ন স্থানের নতুন খামারি ও উদ্যোক্তারা অধিক কেঁচো সার উৎপাদন করে লাভবান হতে তার কাছ থেকে বিদেশী কেঁচো কিনে থাকেন। তিনি সর্বশেষ খাগড়াছড়ি জেলায় তার খামারে উৎপাদিত কেঁচো পৌঁছে দিয়েছেন।

সেতুর বাবা কৃষক শেখ তছলিম উদ্দীন বলেন, তার ছেলের ‘চিংড়া ভার্মি কম্পোস্ট’ খামারকে এগিয়ে নিতে তিনি সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেন। এ খামারের মাধ্যমে ৭ জনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দেশের শিক্ষিত বেকার যুবকেরা এলোমেলো ঘোরাফেরা না করে তারা নিজেরা যদি উদ্যোক্তা হয়ে কোন কাজ করে তাহলে সফলতা অর্জন করতে পারবে।

খামারে কাজ করা সময় সুমন হোসেন জানায়, সে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। পড়াশোনার ফাঁকে এখানে কাজ করে লেখাপড়ার খরচ জুগিয়ে সংসারে সহযোগিতা করে।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বলেন, ছোট একটা প্রদর্শনী দিয়েই শেখ মুহাইমিনুল ইসলাম সেতুর ‘চিংড়া ভার্মি কম্পোস্ট’ খামারের পথচলা শুরু হয়। এখন তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন। কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন সময়ে পরিদর্শনে গিয়ে তাকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তার উৎপাদিত বিদেশী কেঁচো ও কেঁচো সার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে। সেতুর খামার দেখে অনেক নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও মাটির সুস্বাস্থ্য রক্ষায় কেঁচো সারের জুড়ি নেই। এ জৈব সার মাটির পানি ধারণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে জমিতে কম খরচে অধিক ফসল উৎপাদন সম্ভব। প্রতিনিয়ত কৃষকদের কেঁচো সার ব্যবহার করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

(এসএ/এসপি/ডিসেম্বর ১১, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

০২ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test