E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

দিনাজপুরে আলু নিয়ে বিপাকে কৃষক 

২০২৩ জানুয়ারি ২০ ১৮:৪১:১৬
দিনাজপুরে আলু নিয়ে বিপাকে কৃষক 

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : 'এই জাড়োত আলু গরুও খায়না। আলু নিয়া এখন হামরা বিপদতোই আছি বাপু। আলু ১০, করি বাহে ? বীজ কিনা, লাগানো, পরিচর্যা,উঠানো মিলিয়া হামার কেজি পইছে ১৫/১৭ টাকা। এখন বেচেছি, ৮/ ৯ টাকা। খুব বিপদতই আছি বাপু।' এমনিভাবে বিলাপ করে গেলেন আলু চাষী রফিকুল ইসলাম।

দিনাজপুর সদর উপজেলার উলিপুর এলাকার বাসিন্দা রফিকুল একজন প্রান্তিক চাষী। পূণর্ভবা নদী সংলগ্ন আড়াই বিঘা জমি আছে তার।আলু সহ নানান সব্জি আবাদ করেন তিনি। এবার দেড় বিঘা জমিতে আলু আবাদ করে বিপাকেই পড়েছেন তিনি।

উত্তরের শষ্যভান্ডার খ্যাত এ জেলায় এবার আগাম আলু বাজারে তুলে প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম পাচ্ছেন না কৃষক।
বর্তমানে বাজারে ১৮/২০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হলেও ওই আলু কৃষকের কাছে পাইকাররা নিচ্ছেন ৮/১০ টাকা কেজি দরে। প্রতিকেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ পড়েছে ১৫/১৭ টাকা। বীজ আলু, সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় এবার উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সেইসঙ্গে পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে আলু এনে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন কৃষক।

এদিকে, দাম কম পাওয়ায় হিমাগার থেকে গত বছরের আলুও তোলেননি অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ী। নির্ধারিত সময়ের বেশি সময় ধরে হিমাগারে আলু রাখায় লোকসান হচ্ছে তাদের।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান জানান, ‘২০২২-২৩ অর্থবছরে দিনাজপুরে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৬৪ হেক্টর জমি। তবে উৎপাদন হয়েছে ৪৩ হাজার ৮৮৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার কম জমিতে আলু উৎপাদন হলেও ফলনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন তারা।
জেলায় হিমাগারের সংখ্যা ১৩টি। সবগুলো হিমাগার মিলিয়ে আলু ধারণক্ষমতা এক লাখ ১৬ হাজার ১০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ আলু বীজের। বাকিগুলো খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী উৎপাদন এবং আলুর বহুমুখী ব্যবহার সম্ভব হলে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হতেন।’

প্রতি বছর লাভের আশায় আলু চাষ করে এবার লোকসান খাচ্ছি উল্লেখ করে বিরল উপজেলার পুরিয়া গ্রামের আদর্শ কৃষক মতিউর রহমান বলেন, ‘প্রতি বছর মোটামুটি লাভ থাকলেও এবার অবস্থা করুন। আলু নিয়ে এবার আমরা বিপদেই আছি। সরকারের সহায়তা ছাড়া কৃষকের মরণদশা। সার,কীটনাশক,ডিজেল,বীজ এবং শ্রমিক বাজারের মূল্য বেশি।কিন্তু উৎপাদিত পণ্যের দাম নাই।এভাবে কৃষক কিভাবে বাঁচবে ভাই?

সবকিছুর দাম বেড়েছে, তবে আলুর দাম বাড়েনি। বিঘায় প্রায় ৮০ বস্তা আলু হয়। এক বিঘা জমির আলুর দাম যদি এক লাখ টাকা হতো তাহলে খরচ বাদে কিছুটা লাভ হতো। কিন্তু এবার ৮/১০ টাকা দাম পাচ্ছি। এই অবস্থা থাকলে কৃষকের অবস্থাই শেষ।'

দিনাজপুর শহরের এমএভ মার্কেট বাহাদুর বাজারের আলু ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বাজারে নতুন আলু উঠলেও পুরাতন আলু কিনতেন ক্রেতারা। কারণ নতুন আলু বেশিদিন থাকেনা।নষ্ট হয়। প্রথম প্রথম বিক্রি হয়েছে ভালোই।এখন নতুন আর পুরাতনের দাম একই।'
জা্

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানালেন, ‘আমাদের হিমাগারে আলু রাখা ও নেওয়ার নির্ধারিত সময় হচ্ছে মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। কিন্তু আলুর দাম কমে হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের বাইরেও হিমাগারের মেশিন চালানো লাগছে। এক মাসের বিদ্যুৎ বিল প্রায় ১২/১৩ লাখ টাকার মতো। এই টাকা পুরোটাই লোকসান।'

(এস/এসপি/জানুয়ারি ২০, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

১৪ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test