E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

‘মাটি-মানুষ যদি কাজ করে কেউ আমাদের পেছনে টানতে পারবে না’ 

২০২৪ জানুয়ারি ১৪ ১৮:৩১:৫০
‘মাটি-মানুষ যদি কাজ করে কেউ আমাদের পেছনে টানতে পারবে না’ 

তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনা ভাইরাসের অতিমারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জিনিসের দাম বেড়েছে। আবার নতুন করে হামলা শুরু হয়েছে। যে কারণে হয়ত সামনে আরও দুর্দিন আসতে পারে। আমাদের মাটি উর্বর। আমাদের মানুষ আছে। এক ইঞ্চি জমিও যেন আনাবাদী না থাকে। জমি চাষ করা থেকে শুরু করে হাস, মুরগী, গরু, ছাগল পালন করতে হবে। আমাদের খাদ্য আমাদের উৎপাদন করতে হবে।  আমাদের খাদ্যের অভাব যাতে না হয়, সেটা আমাদের করতে হবে। আমার বিশ্বাস মাটি, মানুষ যদি কাজ করে, কেউ আমাদের পেছনে টানতে পারবে না। 

রবিবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত নেতা-কর্মী, জনপ্রতিনিধি, সুধীজনদের সাথে নির্বাচন পরবর্তী শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন প্রতিনিধি মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান, কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ বক্তব্য রাখেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অনেক বাধা বিপত্তি, চক্রান্ত ও য়ড়যন্ত্র ছিল। কোন মতে নির্বাচন না হতে পারে। এটাই ছিল আসল চক্রান্ত। আপনার ভোট দিয়ে ষড়যন্ত্র ধূলিস্যাত করে দিয়েছেন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগনের জয় হয়েছে। গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।তাই বাংলাদেশের জনগনের প্রতি কৃতঞ্জতা জানাই। একটি গণতান্ত্রিক সরকার ছাড়া দেশের উন্নয়ন হয় না। কোন রাজণীতিবিদ ক্ষতায় না থাকলে দেশের উন্নতি হয় না। এটা প্রমানিত সত্য। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে তখনই উন্নতি হয়েছে। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগ।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘৭৫’ পরবর্তী নির্বাচন যেন না হয় সে চক্রান্ত হয়েছিল। যতবার নির্বাচন বানচালের করতে চেয়েছে বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু তাতে সাড়া দেয়নি। আসলে মানুষ কিন্তু আবার তার ভোটটা চুরি করলে ঠিকই ধরে ফেলে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৯৬’ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করেছিল। তখন সারাদেশে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনী সবাইকে নামিয়ে নির্বাচন করেছিল। কিন্তু সে নির্বাচনে ভোটার যায়নি। তারপরও সিল মেরে বাক্স ভরে ভোট নিলেও ২২ শতাংশের বেশি ভোট হয়নি। জনগণ তা মেনে নেয়নি, যে কারণে আন্দোলন হয় এবং খালেদা জিয়া ৩০ মার্চ পদত্যাগ করেন।
বিএনপিকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা গণতন্ত্রের ‘গ’ও বুঝে না। এমনকি বানানও করতে পারে না, তারা এখন গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করে। তাদের আন্দোলন মানুষ পুড়িয়ে মারা, তারা জানে জ্বালাও-পোড়াও। জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মারা। নির্বাচন ঠেকাও আন্দোলন করতে গিয়ে তারা বাসে, লঞ্চে ও রেলে আগুন দিয়েছে।

অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনায় জড়িতদের কেউ ছাড় পাবে না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের ডাকে কেই সাড়া দেয়নি, যারা এই জঘন্য কাজ করেছে তাদের কোনো ছাড় নেই। জ্বালাও-পোড়াওয়ের হুকুমদাতা তাদের আমরা গ্রেপ্তার করেছি, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যেন ভবিষ্যতে কেউ এমন জঘন্য কাজ না করতে পারে, সেটাই আমরা চাই।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, যারা কখনো এদেশের মানুষের ভাগ্য গড়ে দিতে চায়নি। যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে। যারা মুক্তিযুদ্ধ চালাকালীন সময়ে ওই পাকিস্তান বাহিনীর দোষড় ছিল। তারা বাংলাদেশ কখনো উন্নত হোক চায়না। তাদের মোকাবেল করে সকল সড়যন্ত্র ভেদ করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সবাইকে একসাথে কাজ করে এই বাংলাদেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত, স্মার্ট সোনারবাংলা হিসেবে গড়ে তুলব ইনশাল্লাহ্।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা, শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল এমপি, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিএম শিহাবউদ্দিন আজম, কোটালীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস সহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

বিকাল ৩ টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ার নিজ বাসভবন থেকে সড়ক পথে কোটালীপাড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তিনি বিকাল ৩ টা ৩৮ মিনিটে কোটালীপাড়া পৌঁছালে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ তাকে স্বাগত জানান। নেতা-কর্মীরা শ্লোগানে-শ্লোগানে প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করে নেন।আবেগে উদ্বেলিত নেতা-কর্মীরা শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশে বার বার দরকার বলে শ্লোগান দেন । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাত নেড়ে নেতা-কর্মীদের অভ্যর্থনার জবাব দেন।

এরপর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচন পরবর্তী শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় সভায় যোগ দেন। প্রথানমন্ত্রীর কোটালীপাড়া সফর উপলক্ষে কোটালীপাড়া উপজেলা সদর বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনা সৃষ্টি হয়। সর্বত্র ছিল উৎসবের আমেজ। গেটা কোটালীপাড়া নিরাপত্তার চাঁদরে ঢেকে দেয় আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনী।

প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখতে ও তার মুখের কথা শুনতে দুপুর ১২ টা থেকে হাজার হাজার মানুষ মতবিনিময় সভা স্থলে এসে উপস্থিত হন। প্রধানমন্ত্রী আসার অনেক আগেই মতবিনিময় সভা স্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।

টুঙ্গিপাড়া থেকে কোটালীপাড়া যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ সড়কে দাড়িয়ে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।

৫বার প্রধানমন্ত্রী হয়ে শনিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দু’দিনের সফরে গোপালগঞ্জের নিজ এলাকা টুঙ্গিপাড়া যান। টুঙ্গিপাড়া পৌঁছে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এসময় ৩ বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অর্নার প্রদান করে। পবিত্র ফাতহাপাঠ করে তিনি বঙ্গবন্ধু, ১৫ আগস্টের শহীদ, মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া-মোনাজাতে অংশ নেন। এসময় শেখ রেহানা সহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের সাথে নিয়ে টুঙ্গিপাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

এরপর টুঙ্গিপাড়ার নিজ বাসভবনে মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের সাথে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার রাতে তিনি টুঙ্গিপাড়ার নিজ বাসভবনে অবস্থান করেন। কোটালীপাড়ার মতবিনিময় সভা শেষে প্রধানমন্ত্রী কোটালীপাড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

উল্লেখ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাদার নামে প্রতিষ্ঠিত কোটালীপাড়া শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ মাঠে নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষন দেন। নির্বাচনী জনসভাটি জনসমুদ্রে পরিনত হয়েছিল। গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া) আসন থেকে ৭ জানুয়ারীর নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ লাখ ৪৯ হাজার ৪৬৯ ভোট পেয়ে ৮ম বার এমপি নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির এম. নিজাম উদ্দিন লস্কর পান ৪৬৯ ভোট। এ আসনে শতকার ৮৭.২৪ ভোট পড়ে।

(টিবি/এসপি/জানুয়ারি ১৪, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০১ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test