E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চাঁদপুরে ইলিশের একাধিক চালান গায়েব

২০১৪ এপ্রিল ১২ ১৩:৫৩:০৭
চাঁদপুরে ইলিশের একাধিক চালান গায়েব

চাঁদপুর প্রতিনিধি : জাতীয় মংস্য সম্পদ ইলিশ সংরক্ষণে মেঘনায় জাটকাসহ মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তাই মার্চ-এপ্রিল এ দু’মাস মাছ ধরা বন্ধ। তবুও জেলেরা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জাটকা ধরছে এবং ইলিশও শিকার করছে। এ সুযোগে চাঁদপুরের একটি সংঘবদ্ধ চক্র আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের নাম করে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোতে প্রতি রাতেই মাছ আটকের জন্য তল্লাশি চালাচ্ছে। নামিয়ে আনছে ঝুড়ি ঝুড়ি ইলিশ। সেই আটক ইলিশ নদীতেই রেখে বিক্রি করে দিচ্ছে। এমন অভিযোগ বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রতিদিনই পাওয়া যাচ্ছে। এ যাবৎ একাধিক আটক ইলিশের চালান গায়েব করা হয়েছে।

রাত ১১টার পর চাঁদপুর বড় স্টেশন ঠোঁডা থেকে পুরাণবাজার হরিসভা এলাকায় মেঘনা নদীতে ‘মায়ের দোয়া’ নামে একটি ইঞ্জিন চালিত ট্রলার সহ আরো ক’টি ট্রলার নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সেজে নদীতে মাছের চালান ধরার জন্য চলন্ত লঞ্চ থামিয়ে সোর্সের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তল্লাশি চালানো হয়। ঢাকায় যাওয়ার পথে মাছ বহন করা লঞ্চগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আটক করে ট্রলারে নামিয়ে আনা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে দু’টি লঞ্চ থেকে আনুমানিক ২৩-২৫ ঝুড়ি মাছ আটক করে লঞ্চ থেকে নামিয়ে আনা হয় বলে একটি সূত্রে জানা যায়। ঐ মাছ রহস্যজনক কারণে প্রশাসনের কোন সংস্থাই আটক দেখায়নি এবং আটক মাছের চালান নিলাম করা হয়নি। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। অপর একটি সূত্রে জানা যায়, লঞ্চে মাছের চালান আটকের জন্য যে সময় অভিযান চালানো হয় তাদের সাথে নদীতে ব্যক্তি মালিকানায় দুটি স্পীড বোট নিয়ে যাওয়া হয়। স্পীড বোট দুটির মালিক চাঁদপুর মাছ ঘাটের জনৈক ইউসুফ বন্দুকশী। আটক মাছের চালান গোপনে নদীতে রেখেই তার কাছে পানির দরে বিক্রি করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয় চক্রটি। ইউসুফ বন্দুকশীর স্পীড বোট দুটিতে আটক মাছগুলো বহন করে রাতেই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে চালান করে দেয়া হচ্ছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শফিকুর রহমান জানান, নদীতে এখন অভিযান চলছে। সেই অভিযানে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাকে সাথে রাখতে হয়। লঞ্চ থেকে যে পরিমাণ মাছ আটক করা হয়েছে তা তাকে অবহিত করা হয়নি। চাঁদপুর কোস্ট গার্ড স্টেশন কমান্ডার জানান, তাদের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সংস্থাও নদীতে এখন অভিযান পরিচালনা করছে। কোস্ট গার্ডের অভিযানে আটক মাছের স্বচ্ছতা রয়েছে। মিডিয়া এবং জনসম্মুখে কোস্ট গার্ডের অভিযানের স্বচ্ছতা তুলে ধরা হয়।
এ দিকে একটি সূত্র জানায়, চাঁদপুর সদর এএসপি সার্কেল যিনি চাঁদপুর রিভার পুলিশের এএসপির দায়িত্বও পালন করছেন। তিনি নৌ-পুলিশকে সাথে নিয়ে প্রতিদিনই নদীতে নামছেন। অপরদিকে জেলা পুলিশ সুপারের অধীনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অপর একটি গ্রুপও নদীতে জাাটকা রক্ষা এবং ইলিশ সংরক্ষণে বেশ কিছুদিন যাবৎ নদীতে নামছে ও লঞ্চে তল্লাশি করছে। জেলা প্রশাসনের অধীন জেলা টাস্ক ফোর্স থাকলেও তাদের সাথে কারো কোনো সমন্বয় না থাকায় যে যার যার মতো মাছ আটক করছে, বিশাল বাণিজ্য করছে। দেখা যাচ্ছে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার সময় ইলিশের চালান আটক করে চাঁদপুরের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিপুল পরিমাণ মাছ নামিয়ে আনলেও তা আটক এবং নিলাম দেখানো হচ্ছে না। এভাবে প্রতিদিন রাতে আটক মাছ লুটপাট হচ্ছে এবং কিছু লোক টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। চাঁদপুরের মেঘনায় ইলিশ ও জাটকা নিয়ে বাণিজ্যের মূল হোতা নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহিদ হোসেন বলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়। প্রায়ই ইলিশের চালান আটক এবং তা বিক্রি করে দেয়া নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে বলে জানা যায়।
এ ব্যাপারে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও জেলা মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান কালু ভূঁইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে জানান, নৌ পুলিশ ফাঁড়ির একজন কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ মদদে এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে চাঁদপুরে অভয়াশ্রম কার্যক্রম সফল হচ্ছে না এবং জাটকা নিধনও বন্ধ হচ্ছে না। যার ফলে সরকারের গৃহীত কোনো পদক্ষেপ সুফল বয়ে না এনে বরং বদনাম হচ্ছে। বিষয়টি ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা এবং দোষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন বলে পযর্বেক্ষক মহলের অভিমত। এখানে উল্লেখ্য, সাংবাদিক নামধারী জনৈক পুলিশের সোর্স নিজে লাভবান হওয়ার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় ব্যাক্তিকে কাজে লাগিয়ে তাদের কে রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করার জন্য সহায়তা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

(এমজে/এএস/এপ্রিল ১২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test