E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কালিগঞ্জে বন্দোবস্তকৃত জমি থেকে ভূমিহীন উচ্ছেদ করে ভবন নির্মাণ

২০১৭ অক্টোবর ১১ ১৫:৪০:০২
কালিগঞ্জে বন্দোবস্তকৃত জমি থেকে ভূমিহীন উচ্ছেদ করে ভবন নির্মাণ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সরকারিভাবে ৯৯ বছরের বন্দোবস্তকৃত জমি থেকে এক ভূমিহীন পরিবারকে উচ্ছেদ করে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিবাদ করায় ওই ভূমিহীনকে জীবননাশের হুমকি দিয়ে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে। সম্প্রতি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার তারালী বাজার এলাকায় জাফরপুরে এ ঘটনা ঘটে।

সরেজমিনে বুধবার সকালে কালিগঞ্জ উপজেলার জাফরপুর গ্রামে গেলে তোফাজ্জেল সানার ছেলে ভূমিহীন বৃদ্ধ আবুল হোসেন জানান, উপজেলার জাফরপুর মৌজার ১নং খাস খতিয়ানে ৭৮১ দাগে ২৫ শতক সরকারি খাস জমি ১৯৮৯ সালের ১০ ডিসেম্বর ১১৪৩ নং দলিল মূলে তার নামে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। ওই জমি তিনি নিজ নামে রেকর্ড, নামপত্তন করে নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে আসছেন। তিনি দরিদ্র হওয়ায় ওই জমি থেকে তাকে ইজারা দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে তারালী ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান উপজেলা জামায়াতের নেতা সাবেক আমীর আব্দুল গফুর, তারালী গ্রামের নুর ইসলাম ওরফে দালাল নূরো, মুনসুর আলী, জাফরপুর গ্রামের আরশাদ সানা, কাশিবাটী গ্রামের মৃত শওকত মীরের ছেলে আলমগীর মীর এবং জাহাঙ্গীর মীর।

আলমগীর মীর ও জাহাঙ্গীর মীর ওই জমিতে মাছের ঘের করার জন্য জোর পূর্বক ভয়ভীতি দেখিয়ে কয়েকটি সাদা কাগজ ও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সাক্ষর করিয়ে নেয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তিনি বাদি হয়ে ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারায় ১১৬৪/১৫ নং- পিটিশান মামলা করেন। সুবিধা না করতে পেরে মীর সহোদররা ইছাপুর গ্রামের বাসারত আলীর ছেলে ভূমিদস্যু শওকতের কাছে ওই জমি ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। রাতের আঁধারে শওকত তার বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে কয়েকটি সাদা কাগজ ও অলিখিত নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সাক্ষর করিয়ে নেয় ।

জমি দখলে রাখার জন্য শওকতের ঘেরের কর্মচারী রহিমপুর গ্রামের নুরুজ্জামান মোল্লার ছেলে ইমরান হোসেনকে বাদী করে ২০১৫ সালের ১৯ অক্টোবর তাকে ও তার ভাই সাবুল হোসেনকে বিবাদী করে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১৪৪ ধারায় ১৩৫০/১৫নং পিটিশন মামলা দায়ের করে। এমতাবস্থায় তিনি যাতে এলাকায় না উঠতে পারেন সেজন্য ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের দিয়ে তাকে হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন শওকত।

এমনকি সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে শওকত। ইতিমধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া ভবনের দু’টি ঘর তার ঘের কর্মচারি ইমরান, জাফরপুর গ্রামের আব্দুল খালেকের কাছে ভাড়া দিয়ে অগ্রিম হিসেবে ১৫ লাখ টাকা আদায় করেছেন শওকত। নিজেও একটি মনোহরী দোকান পরিচালনা করছে শওকত। অথচ নিজের জমি থাকার পরও পরবাসী হয়ে তাাকে ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার নির্বাহ করতে হচ্ছে।

আবুল হোসেন আরো জানান, কোন উপায় না পেয়ে তিনি মঙ্গলবার সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনার (ভুমি) বরাবর পৃথক অভিযোগ দায়ের করেছেন।

জাফরপুর গ্রামের শাবুল হোসেন, দ্বীন ইসলাম, আব্দুল গফুর, আব্দুল কাদের সহ কয়েকজন আবুল হোসেনের বন্দোবস্তকৃত সরকারি খাস জমি শওকত হোসেন জোর করে দখল করে সেখানে নিয়ম বহির্ভুতভাবে বহুতল ভবন নির্মান কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রশাসন জেনেও শওকতের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। জবরদখল করে অন্যের জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তারালী ইউপি চেয়ারম্যান।

জানতে চাইলে শওকত হোসেন জানান, এ জমি তিনি সরকারিভাবে বন্দোবস্ত নিয়েছেন। তবে কত সালে কিভাবে নিয়েছেন সেটা তিনি জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

কালিগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) নূর আহমেদ মাসুম জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ১১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test