E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মন্ত্রী নাসিমের প্রতিশ্রুতি পূরণ

সরকারি চাকরি পেলেন রুপার বোন পপি

২০১৭ অক্টোবর ২৪ ১৮:০৬:৪৪
সরকারি চাকরি পেলেন রুপার বোন পপি

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : তাড়াশের মেধাবী তরুণী রুপা খাতুন (২৭) হত্যা ও গণ ধর্ষণের চাঞ্চল্যকর ঘটনার ২ মাসের মাথায় স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিম রুপার বোন পপিকে সরকারি ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিঃ এ চাকরি দিয়ে তিনি তার প্রতিশ্রতি পূরণ করলেন।

বিষয়টি ঢাকায় অবস্থানরত রুপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান প্রামানিক মঙ্গলবার দুপুরে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বেলা দেড় টায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডাঃ এহসানুল করিম জগলুল রুপার ছোট বোন পপির হাতে তার সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার মোঃ সেলিম সহ প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। তিনি আরও জানিয়েছেন, বগুড়ার এসেনশিয়াল ড্রাগের কার্যালয়ে তাকে অফিস সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উদারতায় ও মহানুভবতায় রুপার মা হাসনা হেনা (৬৩) পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও মোহাম্মাদ নাসিমের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার মেয়ে হারানোর বেদনা মুছে দিতে ও পরিবারের অর্থনৈতিক স্বাছন্দ ফিরিয়ে দিতে সরকারের পক্ষ থেকে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাতে আমরা অভিভূত। সেই সঙ্গে আমি পরিবারের পক্ষ থেকে আবারও দাবি করছি দ্রুত বিচার আইনে রুপা হত্যার বিচার করা হোক। আমি আমার জীবনদ্দশায় মেয়ের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে চাই।

জানা গেছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মাদ ১ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জের তাড়াশে রুপার পরিবারকে শান্তনা ও সমবেদনা জানাতে এসে স্থানীয়ভাবে আয়োজিত রুপার শোক সভায় তার পক্ষ থেকে নগদ ১ লাখ টাকা অনুদান ও রুপার বোন পপিকে সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি শত ব্যবস্থার মধ্যে থেকেও সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন।

অপরদিকে এরই মধ্যে রুপা হত্যা ও গণ ধর্ষণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা টাঙ্গাইলের মধুপুরের অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. কাইয়ূম সিদ্দিকী আদালতে গ্রেফতারকৃত ৫ আসামিকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।

প্রসঙ্গত, ২৫ আগষ্ট শুক্রবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে টাঙ্গাইলের মধুপুর থানা পুলিশ ময়মনসিংহ ঢাকা মহাসড়কের পঁচিশ মাইল এলাকার সুমী নার্সারীর নিকট রাস্তার পাশ থেকে অজ্ঞাত লাশ হিসাবে উদ্ধার করেন রুপাকে। পরে মধুপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে ওসি মো. সফিকুল ইসলাম, ওসি (তদন্ত) মো. নজরুল ইসলাম, অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আমিনুল ইসলামসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরত হাল রিপোর্ট তৈরি করে লাশ থানায় নিয়ে আসেন। ওই দিনই রুপাকে অজ্ঞাত লাশ হিসেবে টাঙ্গাইলের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।

রুপাকে অজ্ঞাত হিসাবে শারিরিকভাবে নির্যাতনের পর হত্যা করে অপরাধীরা ওই তরুণীর লাশ সড়কের পাশে ফেলে রেখে যায় এমন ধারনা থেকে শনিবার মধুপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন পুলিশ। ঘটনার তিনদিন পর ২৭ আগষ্ট সোমবার ছবি দেখে লাশ সনাক্ত করেন নিহতের বড় ভাই মো. হাফিজুর রহমান।

এদিকে এ ঘটনায় রাতেই মধুপুর থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় গণ পরিবহনের শ্রমিক বাসের চালক হেলপার সহ ৫ ধর্ষক। জিজ্ঞাসাবাদে তারা মধুপুর থানা পুলিশের কাছে গণধর্ষনের কথা স্বীকার করে এবং পরে টাঙ্গাইলের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সত্যতা স্বীকার করে । ৩১ আগষ্ট আদালতের আদেশে রুপার লাশ উত্তোলন করে তাড়াশের আসানববাড়ী গ্রমের বাড়ীতে আনা হয় এবং বাবা জেলহক প্রামানিকের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয় । আটককৃতরা চলন্তবাসে গণধর্ষণের পর হত্যার লোমহর্ষক কাহিনী বর্ননাও করেছেন এমনটি জানিয়েছেন মধুপুর থানা পুলিশ।

এদিকে ধর্ষিত ও হত্যা হওয়া তরুনীর বড় ভাই হাফিজুর রহমান জানান, তার ছোট বোন মোছা. জাকিয়া সুলতানা রুপা অত্যান্ত মেধাবী ছিলেন। সে বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স-মাস্টার শেষ করে ঢাকার আইডিয়াল ল কলেজে এলএলবি বিষয়ে শেষ বর্ষে অধ্যায়ণরত ছিলেন। পড়া-লেখার পাশাপাশি সে শেরপুর জেলায় ইউনিলিভার বাংলাদেশের প্রোমশনাল ডিভিশনে চাকরি করছিলেন।

গত শুক্রবার শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে সে শেরপুর থেকে বগুড়া আসেন। পরে পরীক্ষা শেষে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহগামী ছোঁয়া পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৩৯৬৩) একটি বাসে তার এক সহকর্মীর সাথে যাত্রা করেন। তার সেই সহকর্মীর কর্মস্থল ঢাকায় হওয়ায় সে এলেঙ্গাতে নেমে যায় এবং রুপা ঐ বাসেই ময়মনসিংহ যাচ্ছিল। কিন্তু সে সঠিক সময়ে ময়মনসিংহ না পৌছায় তার সহকর্মীরা মোবাইলে ফোন করলে এক যুবক ফোনটি রিসিভ করে এবং রুপা ভুল করে ফোনটি ফেলে রেখে গেছে বলে জানিয়ে কেটে দেয়। এরপর থেকে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে শনিবার সকালে রুপা কর্মস্থলে না পৌছায় ইউনিলিভার বাংলাদেশ এর শেরপুর অফিস থেকে রুপার বড় ভাই হাফিজুর রহমানের মোবাইলে রুপা কর্মস্থলে না ফেরার বিষয়টি অবগত করেন।

পরবর্তীতে রুপার মোবাইলে যোগাযোগ করতে না পেরে তার বড় ভাই ময়মনসিংহ কোতয়ালী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে। ২৮ আগষ্ট সোমবার গণমাধ্যমের এ খবর পড়ে ভাই হাফিজুর রহমান মধুপুর থানায় এসে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা তরুণীর লাশের ছবি দেখে তার বোন বলে সনাক্ত করেন এবং মধুপুর থানায় গণ ধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই দিন মধুপর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে চালক , হেলপার সহ গণ ধর্ষণ ও হত্যার সাথে জড়িত ৫ নরপশুকে গ্রেফতার করেন।

(এমএসএম/এসপি/অক্টোবর ২৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test