E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিক্ষা বিস্তারে আলো ছড়াচ্ছে ‘ইডিএ’

২০১৭ নভেম্বর ১৩ ১৫:৪৪:৩০
শিক্ষা বিস্তারে আলো ছড়াচ্ছে ‘ইডিএ’

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নত্রকোণা) : গত ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হলো এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন ইডিএ’র ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এক যুগ পেরিয়ে চোখের পলকেই বেসরকারি এই সামাজিক সংগঠনটি ইতিমধ্যে নেত্রকোনা জেলার ঐতিহ্যবাহী কেন্দুয়া উপজেলার সীমানা ছাড়িয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এর সফল কার্যক্রম।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নিয়ে কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুকতাদিরুল আহমে ইডিএ প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আহমদ খাঁনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মানুষের মতো মানুষ হতে হলে সুশিক্ষার কোন বিকল্প নেই। ইডিএ কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা বিকাশে দীর্ঘদিন ধরে অনেক গুরু দায়িত্ব পালন করে আসছে, এজন্য সংগঠনটির সফলতা কামনা করেন তিনি।

২০০৫ সালে এই সংগঠনের জন্ম হয় কেন্দুয়া উপজেলার রামপুর বাজারে। এই বাজারেই এর কার্যালয় স্থাপন করা হয়। দলপা ইউনিয়নের জল্লি গ্রামের বিশিষ্ট সমাজ সেবক মরহুম লুৎফে আলী খাঁনের তৃতীয় ছেলে মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আহমদ খাঁন (এফসিএ) এলাকার কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা বিকাশে ও শিক্ষার মান উন্নয়নে ইডিএ কার্যক্রম শুরু করেন।

শুরুর প্রাক্কালে অনেকেই বলেছেন, রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আহমদ খাঁন এই সংগঠনটির জন্ম দিয়েছেন। কিন্তু এক যুগের কার্যক্রমে ফল হয়েছে পুরোপুরি উল্টো। অর্থাৎ মেধার বিকাশে যে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে ইডিএ’র মাধ্যমে এর বিকল্প কেন্দুয়া উপজেলা তথা নেত্রকোনায় চোখে পড়ার মত এরকম সংগঠন নেই বললেই চলে।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আহমদ খাঁন শিক্ষার প্রসারে নিজ গ্রামে গড়ে তোলেন তার মায়ের নামে লতিফেন্নেছা প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে যে বিদ্যালয়টি লতিফেন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত।

সুশিক্ষার প্রসারে এর পাশাপাশি উপজেলার সব ইউনিয়নে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এবতেদায়ি মাদ্রাসার তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা যাচাইয়ের জন্য প্রতি বছর শত শত ছাত্র-ছাত্রী মেধাযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। পিন পতন নীরবতায় এই মেধা যাচাই পরীক্ষা সমাজকে অনেক শিক্ষা দেয়। পরীক্ষার ফলাফলের মাধ্যমে প্রতিটি ইউনিয়নের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থানে যারা উত্তীর্ণ হয় তাদেরকে দেয়া হয় আনুষ্ঠানিক নগদ টাকার বৃত্তি। তাদের নেয়া হয় শিক্ষা সফরে। প্রথমে উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে এর কার্যক্রম শুরু করলেও সমাজে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের আহ্বানে সারা দিয়ে বর্তমানে কেন্দুয়া পৌরসভা ও উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ও এবতেদায়ি মাদ্রাসার শত শত ছাত্র-ছাত্রীরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে পরীক্ষায় অংশ নেয়। মূলত সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আহমদ খাঁন একজন সহজ সরল ও সাদা মনের মানুষ হিসাবে সমাজে পরিচিত।

তিনি তার ব্যক্তি উদ্যোগে যে কাজটি করছেন, আমি মনে করি এই কাজটি কেন্দুয়াবাসীকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার প্রকৃত কাজ। কেননা সুশিক্ষা ছাড়া একটি জাতির উন্নতি সম্ভব না। বর্তমানে আকাশ সংস্কৃতির যুগে সুশিক্ষার কোন বিকল্প নেই। মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আহমদ খাঁন কেন্দুয়াকে তার মা হিসাবে গণ্য করে শিক্ষার একটি বাতিঘর হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ এই সংগঠনের কার্যক্রমকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছেন। একটি ছোট্ট উদাহরণ টেনে বলতে চাই, এই ইডিএ বৃত্তি পরীক্ষায় যারা ইপ্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে তারাই দেশের নামী-দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভালো লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে। যেমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন নামী-দামী প্রতিষ্ঠানে লেখা পড়া করছে। তারাই একদিন সমাজে আলো ছড়াবে। আমার বড় ছেলে হৃদয় কিশোর সৌরভ চিরাং ইউনিয়ন ও পৌরসভার কোটায় ইডিএ বৃত্তি পরীক্ষায় তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে অংশ নিয়ে মেধার স্বাক্ষর রেখেছে। পরম করুণাময়ের অশেষ কৃপায় এবং তার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বর্তমানে সে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে প্রথম বর্ষে অধ্যায়নরত।

আমার জানা মতে সৌরভের সাথে যারা লেখাপড়া করে ইডিএ বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতিত্ব অর্জন করেছে তারা প্রত্যেকেই দেশের নামী-দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে। এর পেছনে ইডিএ’র অবদান কোন অংশেই কম নয়। আর এসব ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শেষ করে নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে গঠন করবে এবং কেন্দুয়াকে সাজাবে সুন্দরকরে। ইডিএ কার্যক্রম শুধু একটি সামাজিক সংগঠনই নয়, একটি আলোকবর্তিকা, একটি বাতিঘর। আর এ বাতিটি জ্বালিয়ে রাখছেন মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আহমদ খাঁন।

এ হায়দার আহমদ খাঁন যদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী হতেন তাহলে দেশ, সমাজ ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক সুন্দর হতো। আমি সারা দেশের বিত্তশালী ব্যক্তিদের বলবো, প্রত্যেকেই নিজ নিজ এলাকায় ইডিএ’র মতো সংগঠন গড়ে তুলে কোমলমতি শিশুদের মানুষের মতো মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার কাজে আত্ম নিয়োগ করুন।

(এসবি/এসপি/নভেম্বর ১৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test